রুহুল নাবির: মানবসত্ত্বার সাথে জড়িয়ে রয়েছে অর্থের চাহিদা। সে চাহিদা মেটাতে কখনো কখনো মানুষ নিজের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যেও ফেলে দেয়। একটু সাবলম্বী হবে, সাচ্ছন্দে চলাফেরা করতে পারবে, সুন্দর ও সুখময় জীবনযাপন করতে পারবে এ অাশায় তাড়িত হয় সে।
বাংলাদেশ একটি নিম্ন মধ্যবৃত্ত শ্রেণির রাষ্ট্র। জনসংখ্যার সাথে সাথে দরিদ্রতার হার ক্রমশে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অার এ দারিদ্রপূর্ণ বাংলাদেশকে দারিদ্র মুক্ত করতে হলে বিদেশি অর্থের বিকল্প নেই। অার সে কারণেই বাংলাদেশের এক উল্লেখযোগ্য নাগরিক বেশি অর্থ উপার্জন করার লক্ষে পাড়ি জমায় প্রবাসে। প্রবাস জীবনে কিছু অর্থ উপার্জন করতে নিজেকে নিযুক্ত করছে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে। কিন্তু নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে যে কাজ করছে, দিন শেষে কি সে কাজের ন্যায্য মূল্য হাতে পাচ্ছে তারা? না তারা কলুর বলদের মত শুধু খেটে মরছে? তারা যে ন্যায্য পারিশ্রমিক পাচ্ছে না এক্ষেত্রে রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রের দ্বায়িত্বশীলরা কি কোন দিন খোঁজ নেন? বা কোন ব্যবস্হা নিয়েছে? অথচ প্রবাসী শ্রমিকদের অর্থে বাংলাদেশ দারিদ্রমুক্ত হওয়ার বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে!
প্রবাস জীবনে সব থেকে ঝুঁকি হলো দালাল চক্র। দালালরা নানাভাবে বিপুল অর্থ লুফে নেয় প্রবাসগামীদের থেকে। ভালো কিছুর প্রলোভন দেখিয়ে লুটে নেয় লাখ লাখ টাকা। ছেড়ে দেয় এক বিভিষীকাময় জগতে। যা থেকে উঠে অাসতে অনেকেরই কোমর বাঁকা হয়ে যায়!
বেশ কিছু দিন ধরে অারব বিশ্বের বাহরাইন নামক মুলুকে প্রবাসীদের অানাগুনা বেড়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে নাকি এ দেশে অর্থ উপার্জন বেশি। এজন্য এ দেশে যেতে আগ্রহীর সংখ্যা তুলনামূলক একটু বেশি। এ সুযোগে দালাল চক্র ফ্রি ভিসা দেয়ার নামে গছিয়ে নিচ্ছে নিজেদের চাহিদা মত লক্ষ লক্ষ টাকা। যার কারণে তারা রাতারাতি হয়েছে কোটিপতি। অাঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হওয়ার মত।
যতোটুকু জানা যায়, চার লক্ষ টাকার নিচে কেউ বাহরাইন যেতে পারে নি। সুযোগ পেয়ে দালালরা ঘর-বাড়ি, জমি-জায়গা ইচ্ছা মত করে নিয়েছে। কিন্তু বিপাকে পড়েছে প্রবাসে গমনকারীরা... ভালো ভালো কাজের নামে নিয়ে গিয়ে, সেখানে রেখেছে জনগনকে বসিয়ে। কাজের তুলনায় শ্রমিকের সংখ্যা বেশি, ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারন শ্রমিকেরা। এক তো বেশি টাকা খরচ করে প্রবাসে যাওয়া, তার উপর কাজ না পাওয়ার কষ্ট। ভাগ্যক্রমে কেউ একমাস কাজ পেলেও দ্বিতীয় মাসের কাজ থাকবে কী না তা নিয়ে অস্থির থাকতে হয়।
বাহরাইন প্রবাসীদের সবচেয়ে বড় কষ্ট কাজ করেও সময় মত কাজের বেতন না পাওয়া। সাপ্লাই কোম্পানির মাধ্যমে কাজ করার কারণে সাপ্লাই কোম্পানিগুলো সময় মত কাজ ঠিকই করিয়ে নিচ্ছে কিন্তু তাদের কাজের বেতন তুলে তাদের হাতে না দিয়ে নিজেদের পকেটে ভরছে।
একইভাবে দালালরা শ্রমিকদের বেতনের টাকা উঠিয়ে নিজেরা স্বর্ণের ব্যবসা করে, অার শ্রমিকেরা শ্রমের টাকা না পেয়ে না খেয়ে না খেয়ে দিন কাটায়। ফলে ঐ টাকা নিজেও খরচ করতে পারে না বাড়িতেও পাঠাতে পারে না। যার কারণে বাড়িতে রেখে যাওয়া ছেলেসন্তান ও নিজেও দুঃখ-কষ্ট ও বেদনাময় জীবনযাপন করে।
ইদানিং অারো বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যাওয়ার সময় দুবছরের ভিসা দিলেও সাত-অাট মাস যেতে না যেতেই ভিসা ক্যানসেল করে দিচ্ছে। হাজার হাজার প্রবাসি এমন বিপাকের মধ্যে রয়েছে তা অামাদের দেশের সরকার জানা সত্তেও তাদের বাঁচাতে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
অামি জানিনা অামার এ কথা সরকার মহল পর্যন্ত যাবে কি না। তবে যদি যায় তাহলে, সরকার প্রধান,পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এ ছাড়াও অারো জারা অাছেন, দয়া করে একটু রাষ্ট্রীয়ভাবে পদক্ষেপ নিন অামাদের অসহায় হাজার হাজার বাংলাদেশি নাগরিক ভাইদের প্রতি তারা সেখানে নানাভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। তাদের দিকে অাপনাদের দয়ার হাত একটু বৃদ্ধি করে দেন।
পরিশেষে সকলের কাছে তাদের জন্য দোয়া চাচ্ছি। অাল্লাহ যেন তাদের সকল প্রকার অাপদ-বিপদ গাইবি খাজানা থেকে পূর্ণ করে দেন। এবং সকল সমস্যা দূর্র করে দেন। তারা যেন সুখ-শান্তির সাথে প্রবাসি জীবনযাপন করতে পারে। অামিন।
-এআরকে