মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


’মূর্তি অপসারণে শুক্রবার দেশব্যাপী প্রতিবাদ সমাবেশ সফল করুন’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

babunagari-হাটহাজারী : সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গন থেকে অবিলম্বে গ্রিক দেবি ‘থেমিস’-এর মুর্তি অপসারণের দাবীতে আগামী শুক্রবার (১০ মার্চ) বাদ জুমা দেশব্যাপী প্রতিবাদ সমাবেশ ও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি সর্বাত্মকভাবে পালনের আহবান জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমীর দেশের শীর্ষ আলেম শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী। একই সঙ্গে হেফাজত আমীর চার বছর আগে গণজাগরণ মঞ্চ ভাঙার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলাকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অখ্যায়িত করে এই মামলায় আকর্ষিকভাবে হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মুসলমানদের ঈমানী চেতনাবোধ ধ্বংস ও নাগরিক অধিকার হরণ করে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা ও অর্থনৈতিক লুটপাটের জন্য দেশী-বিদেশী চক্র গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা ভালভাবেই জানে, প্রকৃত মুসলমান ঈমান-আক্বীদার পাশাপাশি দেশ ও জাতীর স্বার্থ রক্ষায়ও সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারকে আদর্শিক দায়িত্ব মনে করে থাকে। যে কারণে আধিপত্যবাদি চক্র শুধুই শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় চেতনা ধ্বংসের লক্ষ্যেই যে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তা নয়, বরং তারা ইসলামী নেতৃত্বের কণ্ঠরোধ করার জন্যও ওঠেপড়ে লেগেছে।

হেফাজত আমীর সরকারের প্রতি উদাত্ত আহবান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও কোটি কোটি মুসলমানের ধর্মীয় বিশ্বাসকে সম্মান জানিয়ে অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গন থেকে গ্রিক মূর্তি অপসারণ করুন। সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে কোন ভাস্কর্য স্থাপন করতে চাইলে পবিত্র কুরআনের অথবা পূর্ব থেকে বিদ্যমান থাকা দাড়ি-পাল্লাকে আরো শৈল্পিকভাবে স্থাপন করা যায় কিনা, সেটা নিয়ে আলোচনা করুন। কিন্তু দেশবাসীর উপর গ্রিক দেবিকে চাপিয়ে দিতে চাইলে সেটা বাংলাদেশের জনগণ কখনোই মেনে নিবে না। হেফাজত আমীর সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাসহ শাপলা চত্বরের ঘটনার পর থেকে দায়েরকৃত ষড়যন্ত্রমূলক সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জন্যও সরকারের জোর আহবান জানান।

তিনি বলেন, নানাভাবে হয়রানী, গ্রেফতার ও মিথ্যা মামলা দিয়ে কখনো সত্য, ন্যায় আদর্শিক নেতৃত্ব ও কণ্ঠকে স্তব্ধ করা যাবে না। অন্যায় ও জুলুম-অত্যাচার বন্ধ এবং স্বাধীনতা ও ন্যায়-নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য উলামায়ে কেরামের আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের গৌরবজ্জ্বল ইতিহাস সেই বৃটিশ শাসনের সূচনা থেকেই রয়েছে।

তিনি বলেন, ইলাম বিদ্বেষী দেশি-বিদেশী আধিপত্যবাদি চক্র ইসলাম ও উলামায়ে কেরামের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ ও দমন-পীড়ন চালানোর জন্য সরকারকে উস্কানী দিয়ে যাচ্ছে। কোন অপশক্তির স্বার্থে নয়, বরং সরকারের উচিত দেশের গণমানুষের নাগরিক অধিকার, ধর্মীয় আদর্শ ও জাতীয় স্বার্থের পক্ষে কাজ করা।

আজ (৮ মার্চ) বুধবার বিকেলে সংবাদপত্রে প্রদত্ত এক বিবৃতি হেফাজত আমীর এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী।

হেফাজত আমীরের প্রেসসচিব মাওলানা মুনির আহমদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে হেফাজত আমীর আরো বলেন, প্রাচীন গ্রিক ধর্ম বর্তমানে বিশ্বব্যাপী একটি মৃত ধর্ম। বাংলাদেশে তো নয়ই, বরং ভারতীয় উপমহাদেশেও গ্রিক ধর্মের চর্চার কোন ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায় না। অত্র অঞ্চলের কোন অমুসলিম দেশেও গ্রিক দেবি থেমিসের মূর্তি স্থাপন ও ন্যায় বিচারের প্রতীক জ্ঞানের নজির নেই। সেই ক্ষেত্রে কোন যুক্তিতে ৯০ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের মতো সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থানে গ্রিক দেবির মূর্তি স্থাপন করা হল? অথচ এটা একজন সাধারণ মুসলমানও জানেন যে, গ্রিক দেবি থেমিস বা অনুরূপ কোন মূর্তিকে ন্যায় বিচারের প্রতীক বলে বিশ্বাস করলে কোন মুসলমানের ঈমান আর অবশিষ্ট থাকবে না। এই প্রয়াস বাংলাদেশের মুসলমানদেরকে ঈমানহারা করে আদর্শিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছু নয়। তিনি দলমত নির্বিশেষে মুসলমানদেরকে গ্রিক মূর্তি অপসারণের দাবীতে আগামী শুক্রবার (১০ মার্চ) বাদ জুমা দেশের সকল জেলা সদরে হেফাজতে ইসলাম আয়োজিত শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচীতে দলমত নির্বিশেষে সকল মুসলমানকে সর্বাত্মক শরীক হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের মুসলমানদের ঈমানী চেতনাবোধ মুছে ফেলতে নানা পর্যায়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। এর পাশাপাশি এখন বাংলাদেশের মুসলিম পরিচিতি ও নিদর্শন সমূহকেও মুছে ফেলার অপচেষ্টা শুরু হয়েছে। আমাদের কর্মসূচী কোন রাজনৈতিক স্বার্থে বা জাগতিক উদ্দেশ্যে নয়। এটা বাংলাদেশের মুসলমানদের ঈমান-আক্বীদা ও মুসলিম পরিচিতি রক্ষার আন্দোলন। গ্রিক দেবির মূর্তি অপসারণের আগে পর্যন্ত সকল মুসলমানকে সোচ্চার থাকতে হবে।

এআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ