আওয়ার ইসলাম : নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমরা। তাদের একদল আশ্রয় নিয়েছিলো ভারতের জম্মু-কাশ্মির অঞ্চলে। এতো দিন তারা নিরাপদে বসবাস করলেও এখন তারা পড়েছে গভীর সংকটে।
৩৬ বছর বয়সী মুহাম্মদ ইউসুফ নামে মাদ্রাসার শিক্ষক গত ১১ বছর ধরে জম্মু সীমান্তবর্তী এলাকায় বাস করলেও কখনো নিজেকে অনিরাপদ ভাবেন নি। বরাবরই তিনি জম্মুকে নিজের দ্বিতীয় বাসা বলে মনে করে এসেছেন। কিন্তু আজ পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে।
জম্মুর বিভিন্ন স্থানে রোহিঙ্গাদের টার্গেট করে জম্মু ত্যাগ করার পোস্টার লাগানোয় মুহাম্মদ ইউসুফরা এখন নিদ্রাহীন হয়ে পড়েছেন। তারা এখন নিজেদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত বলে মনে করছেন।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের পক্ষ থেকে তাদের যে পরিচয়পত্র দেয়া হয়েছিল তার মেয়াদও গত ১৩ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়েছে।
জম্মু-কাশ্মির ন্যাশনাল প্যান্থার্স পার্টি’র পক্ষ থেকে লাগানো পোস্টারে ডোগরা ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং পরিচিতি রক্ষার জন্য জম্মুবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দেয়া হয়েছে।
মুহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি না যে, জম্মুতে বাস করার প্রশ্নে আচমকা এত আপত্তি কী করে আসছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে আমাদের এখানে ইচ্ছাকৃত ভাবে আসা এবং বসতি স্থাপন করার যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা ঠিক নয়। ভাগ্যই এখানে আমাদের নিয়ে এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘সীমান্ত পেরোনোর সময় আমাদের এজেন্টকে বলেছিলাম ভারতে যেন আমাদের প্রবেশ নিরাপদ হয়। আমরা বাংলাদেশ থেকে কোলকাতায় পৌঁছে ট্রেনে করে বিভিন্ন জায়গায় যাই। এদের মধ্যে কিছু হায়দ্রাবাদ, কিছু আলীগড়ে এবং আমরা জম্মুতে পৌঁছাই। জম্মু রেল স্টেশনে গিয়ে আমরা অটো চালককে বলি আমাদের মুসলিম বসতিতে নিয়ে চলুন। তারপরেই আমরা এখানে পৌঁছাই। এখানে প্রায় ১১ বছর ধরে বাস করলেও আজ পর্যন্ত কেউ সমস্যা সৃষ্টি করেনি।’
এখানকার অধিকাংশ রোহিঙ্গা মুসলিম অনিয়মিত শ্রমিকের কাজ করে। নারীরা আশেপাশের বাসায় এবং কারখানায় কাজ করে থাকে।
ইজাজ-উল হক নামে এক রোহিঙ্গা শরণার্থী বলেন, ‘আমরা এখানে অবৈধভাবে বাস করছি না। আমাদের জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের পক্ষ থেকে শরণার্থী কার্ড দেয়া হয়েছে। আমরা আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনার জন্য কোনো সমস্যা সৃষ্টি করিনি। আমরা স্থানীয় নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য কোনো বিপদও নই এবং আমরা কোনো অপরাধীও নই।’
কিন্তু ২০১৬ সালে দক্ষিণ কাশ্মিরে এক সংঘর্ষে নিহত দুই বিদেশি গেরিলার মধ্যে একজন মিয়ানমারের বাসিন্দা বলে প্রকাশ পায়। ওই সময় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের রাজ্য শাখা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জম্মুর নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে অভিহিত করে তাদের রাজ্য থেকে বের করে দেয়ার দাবি জানিয়েছিল।
জম্মু-কাশ্মির ন্যাশনাল প্যান্থার্স পার্টি’র চেয়ারম্যান হর্ষদেব সিং বলেন, ‘রাজ্যের কোনো অংশে রোহিঙ্গাদের বসতি স্থাপনের জন্য কোনো আইনি বিধান নেই। সংবিধানের ৩৭০ ধারা অনুযায়ী অন্য কোনো স্থান থেকে কেউ এসে বসতি স্থাপন করা বেআইনি। যদি রাজ্যসরকার তাদের বের করে না দেয়, আমরা ওই কাজ করব।’
বিজেপি বিধায়ক রবীন্দ্র রায়না বলেন, ‘যদি পশ্চিম পাকিস্তানের শরণার্থীদের ৩ প্রজন্ম পরেও এখনো তাদের নাগরিকত্ব না দেয়া হয় তাহলে রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বাস করার অনুমতি কীভাবে দেয়া হবে?’
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি বিধানসভায় জানান, রাজ্যে মোট ৫ হাজার ৭৪৩ রোহিঙ্গা মুসলিম বাস করেন এবং তাদের মধ্যে কোনো গোঁড়ামি বা সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। বিজেপি বিধায়ক সত শর্মার প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রাজ্যে সন্ত্রাসবাদী সংশ্লিষ্ট কোনো ঘটনায় কোনো রোহিঙ্গা মুসলিমের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন অপরাধের ঘটনায় ৩৮ রোহিঙ্গা মুসলিমের বিরুদ্ধে ১২ টি এফআইআর করা হয়েছে।’
জম্মু-কাশ্মির ন্যাশনাল প্যান্থার্স পার্টি’র পক্ষ থেকে অবশ্য রাজ্য বসবাসকারী রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশি নাগরিকদের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সূত্র : পার্সটুডে
-এআরকে