যুবাইর ইসহাক: ‘আমি তোমাকে সোনা কিংবা রূপা দেই নি, কিন্তু তার চেয়েও মুল্যবান জিনিস দিয়েছি। তা হলো বই।’ জর্জ ম্যাকডোনাল্ড এই কথায় বইকে সোনার চেয়ে মূল্যবান রুপার চেয়ে দামি বলে উল্লেখ করছেন।
উপহার হিসাবে বই শ্রেষ্ঠ। বই দেওয়া মানে, অচেনা একটা পথের সন্ধান দেওয়া। না জানা অনেককিছু জানার সহযোগিতা করা।
অনেক বছর ধরে স্মৃতি হয়ে থাকে বই। অালমারিতে যতক্ষণ দৃষ্টি পড়বে, ততক্ষণ মনে হবে উপহারদাতা অবস্থান করছে, এই তো এখানে, এই বইজুড়ে।
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন, 'জীবনে তিনটি জিনিসের প্রয়োজন- বই, বই এবং বই।' মানুষের জীবনের প্রয়োজনীয় তিনটিই বই।
বই বদ্ধ হৃদয় উন্মুক্ত করে। ঘুমন্ত বিবেককে জাগ্রত করে। জানা-অজানা, চেনা-অচেনা, মরু-গিরি অনেক পথে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।
রবীন্দ্রনাথ বলেন, বই হচ্ছে অতীত আর বর্তমানের মধ্যে বেঁধে দেয়া সাঁকো।
আমরা বই পড়ে জানতে পারি, হাজার বছর আগের মানুষ কেমন ছিল। কোন যুগের শাসক কে ছিলেন। আদিকালের মানুষদের পৃথিবী নিয়ে কেমন ভাবনা ছিলো।
বইয়ে বাঁধা থাকে দুঃখ-কষ্ট, অতিত, ইতিহাস, আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্না, স্মৃতি। বাঁধা থাকে একজন মানুষ বেড়ে হয়ে উঠার গল্প। একজন রাজা রাজ্য জয় করার গল্প। একজন নেতার নেতৃত্বের গল্প। একজন সেনাপতির বিচক্ষণতার গল্প।
অাবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার বলেন, 'একেকটা বই একেকটা জানালা।'
একটা বই যখন আমরা পড়তে বসি, তখন মুক্ত পাখির মতো জানালা দিয়ে আমরা উড়তে বের হই। উড়তে থাকি অনেক দূরে, অনেক উপরে। হয়তো তখন ভ্রমণ করে ফেলে কয়েক শতাব্দী। জেনে যাই অনেক মানুষের জীবনের গল্প। পৃথিবীর অন্য প্রান্তে বসবাসকারী ক'জন চাষীর গল্প। ক'জন মাঝির গল্প।
আজ মানুষ বই ছেড়ে দিয়েছে। প্রযুক্তি প্রযুক্তি বলে চিৎকার করে বইকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। অনেক ধারণা, বইয়ের যুগ ছিলো। তখন মানুষ পড়তো, লেখতো। এ যুগ কম্পিউটার, ইন্টারনেটের।
অথচ বর্তমান বিশ্বের কম্পিউটারবিদের অন্যতম বিল গেটস বলেন, 'ছোটবেলা থেকেই আমার অনেক স্বপ্ন ছিল। আর আমি এই স্বপ্ন পেয়েছিলাম বই থেকে। আপনারা যদি আমার ঘরে যান, দেখবেন বই, অফিসে যান দেখবেন বই, যখন আমি গাড়িতে বা প্লেনে থাকি তখন আমার সঙ্গে থাকে বই।'
বিশ্বের এই ১ম ধনী ব্যক্তি সপ্তাহে একটা বই শেষ করেন। আমরা যে ফেসবুকের পিছনে দিনের বড় একটা অংশ কাটিয়ে দেই। সেই ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মধ্যে একজন মার্ক জাকারবার্গ। তিনিও দুই সপ্তাহে একটি বই শেষ করেন।
প্রতি মাসে আমরা কত কত টাকা মোবাইল রিচার্জের পেছনে উড়াই। এই সেই আড্ডায় কত টাকা নষ্ট করি; কিন্তু তার অর্ধেক টাকারও কি বই কিনা হয়? দিনের যে সময়টা ফেসবুকের পেছনে নষ্ট করি তার একভাগও কি বই পড়ি?
চলছে প্রাণের মেলা। একুশে বই মেলা। বইমেলা আমাদের ঐতিহ্য। আমাদের গর্ব। বই মেলায় শত শত বই সাজানো থাকে। জীবিত-মৃত দুনো লেখক গায়ে গা লেগে অবস্থান করেন। আমরা তা দেখি। শত শত বাংলা বই আর লেখকের নাম দেখে আনন্দে মনটা নেচে উঠে।
আমরা বইমেলায় যাই। ঘুরি। বই দেখি। বইয়ের পাতা উল্টাই। নতুন বইয়ে কাঁচা পাতার ঘ্রাণ নিই। মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠে।
বই কিনি। বিভিন্ন লেখকের বই। নতুন লেখকের বই। তরুণ লেখকদের বই। প্রিয় লেখকদের বই। নতুন বই। পুরাতন বই।
বই মেলা উপলক্ষ্যে প্রকাশনীগুলো নতুন বই প্রকাশ করে। আমরা তা কিনি। বাড়িতে নিয়ে ফিরি। প্রিয়জনের উপহার দেই। বন্ধুদের বই মেলা উপলক্ষ্য গিফট করি।
বই মেলা ছাড়াও আমাদের বই কিনা প্রয়োজন। জন্মদিন বা অন্য অনুষ্ঠানে বই উপহার দেওয়া দরকার। তবেই আমাদের ভিতর মনুষ্যত্ব সৃষ্টি হবে। সাফল্য আমাদের হাতে ধরা দিবে। বইয়ের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হবে।
আরআর