হাটহাজারী: বাংলাদেশ থেকে ক্রমান্বয়ে মুসলিম পরিচিতি মুছে ও মুসলমানদের ঈমানহারা করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে গ্রিক দেবির মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে অভিযোগ করে এর নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে সেটা অপসারণের দাবী জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী।
তিনি বলেন, বিশ্বের কোন দেশের সরকার নিজ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস ও চেতনাবোধের বিরুদ্ধে এমন আগ্রাসী ভূমিকা নেয়ার নজির নেই, যেটা বাংলাদেশে হচ্ছে।
তিনি বলেন, কোন মুসলমানের পক্ষে মূর্তিকে ন্যায় বিচারের প্রতীক বা এমন ভাবনা অন্তরে পোষণ করার সুযোগ নেই। কেউ এমনটা বিশ্বাস করলে তার ঈমান থাকবে না। অবিলম্বে এই মূর্তি অপসারণের দাবি জানিয়ে হেফাজত মহাসচিব বলেন, অন্যথায় ঈমান, আক্বীদা ও ঐতিহ্য বিরোধী এই মূর্তি অপসারণের দাবিতে উলামায়ে কেরামের নেতৃত্বে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নামবে।
১০ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার এক বিবৃতিতে হেফাজত মহাসচিব উপরোক্ত কথা বলেন। একই বিবৃতিতে হেফাজত মহাসচিব সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গনে গ্রিক দেবি স্থাপনের প্রতিবাদে শনিবার ১১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজনের কথাও জানান।
হেফাজত মহাসচিব বিবৃতিতে আরো বলেন, সরকার গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দেশ শাসন এবং জনগণের মৌলিক অধিকার সমুন্নত করার স্বার্থেই কাজ করছে বলে দাবী করে থাকে। কিন্তু জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর একের পর আঘাত হেনে দেশে যে অস্থিরতা ও গণঅসন্তোষ তৈরি করা হচ্ছে, এটা তো ফ্যাসিস্ট আচরণ ছাড়া আর কিছু নয়।
হেফাজত মহাসচিব সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গন থেকে গ্রিক দেবী অপসারণের দাবীতে দেশবাসীকে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, এটা মুসলমানদের ঈমান-আক্বীদা ও জাতীয় ঐতিহ্য রক্ষার প্রশ্ন। এই বিষয়ে আপোষরফার কোনই সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ইসলামে তো ঈমানের পর পরই ইনসাফ ও ন্যায়-নীতির কথা বলা হয়েছে। তাহলে সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গনে ধর্মীয় ও আদর্শিক দৃষ্টিকোণ থেকে কোন ভাস্কর্য স্থাপন করতে হলে, সেটা তো পবিত্র কুরআন বা ইসলামের নির্দশন বুঝায় এমন কোন ভাস্কর্যই স্থাপন করা যুক্তিযুক্ত। কিন্তু ন্যায়-নীতি ও আদর্শ বিচার ব্যবস্থায় মুসলমানদের এমন গৌরবময় ঐতিহ্য থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে গ্রিক দেবি থেমিসকে এনে শাড়ি পরাতে হবে কেন? কেন মুসলমানদেরকে ঈমানহারা করার এই আয়োজন?
বিবৃতিতে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী আরো বলেন, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গন থেকে গ্রিক দেবী থেমিসকে অপসারণের জন্য বাংলাদেশের ওলামায়ে কেরাম যে কারণে দাবী জানাচ্ছেন, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গত (৬ সেপ্টেম্বর) সোমবার বিবিসিকে “যে ভাস্কর্যকে ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়, সেটাই এখানে নির্মাণ করেছে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ” বলে স্বীকারোক্তি দিয়ে কার্যতঃ ওলামায়ে কেরামের দাবীর যৌক্তিকতাকেই প্রমাণ করেছেন।
বিবিসিকে দেওয়া অ্যাটর্নি জেনারেলের স্বীকারোক্তি থেকেই স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, বাংলাদেশ থেকে মুসলিম ঐতিহ্য মুছে ফেলে মানুষকে ঈমানহারা করে নাস্তিক্যবাদি ধ্যানধারণা প্রতিষ্ঠার গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই গ্রিক মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। তিনি বলেন, দেবী বা ভাস্কর্য যেটাই বলুন, সেটাকে ন্যায় বিচারের প্রতীক ভাবার ন্যূনতমও কোন সুযোগ যে একজন মুসলমানের নেই, সেটা বুঝতে কোন আলেম হওয়া লাগে না; একজন সাধারণ মুসলমানও এটা ভালভাবে জানেন ও মানেন।
আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী একই দিন বিবিসিকে দেওয়া অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের অপর বক্তব্য, “ভাস্কর্য এবং মূর্তির মধ্যে পার্থক্য বোঝা প্রয়োজন। ভাস্কর্য এবং ধর্মীয় প্রতিমাকে গুলিয়ে ফেলার একটা প্রবণতা আমাদের সমাজে আছে। সেই সুযোগ নেয় ধর্মীয় উগ্রবাদিরা। এখনও তাই হয়েছে” এর প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, মলমূত্রকে তো খাদ্য বলে চালিয়ে দিতে চাইলে সেটা কেউ গ্রহণ করবে না।
তিনি বলেন, বিবিসির একই প্রতিবেদনে আমার বক্তব্যও প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে আমি স্পষ্টই বলেছি যে, “আমরা ভাস্কর্য এবং কোনো সংস্কৃতির বিরোধী নই। বাংলাদেশের ঐতিহ্য বা ধর্মীয় মূল্যবোধের সাথে মিল রেখে ভাস্কর্যটি করা হলে আপত্তি ছিল না। কিন্তু এটি গ্রিক দেবিকে ধার করে এনে করা হয়েছে। সেজন্যই আমাদের আপত্তি”।
হেফাজত মহাসচিব বলেন, বিবিসির একই প্রতিবেদনে অ্যাটর্নি জেনারেল ‘রোমান আইন থেকেই আমাদের বিচারের বিষয়ের উৎপত্তি। সেজন্যই অন্যান্য দেশের মতো এই ভাস্কর্য করা হয়েছে’ বলে যে উক্তি করেছেন, আমরা তার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা করি।
এআর