রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৭ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬


লন্ডনের মসজিদ নিয়ে মিথ্যা রিপোর্ট; ক্ষমা চাইছে রয়টার্স দিচ্ছে ক্ষতিপূরণ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

reuters_mosjid

আওয়ার ইসলাম: উত্তর লন্ডনের ফিনসবারি পার্কের একটি মসজিদ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায় এমন মনগড়া রিপোর্টের পর কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষমা চেয়েছে বিখ্যাত বার্তা সংস্থা রয়টার্স। কর্তৃপক্ষের করা মামলার কারণে ক্ষতিপূরণও দিতে হচ্ছে সংস্থাটিকে। খবর বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান

জানা যায়, বৃটেনের শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য আর্থিক সংগঠনের জন্য একটি তালিকা তৈরি করে থমসন রয়টার্সের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড-চেক। ওই তালিকায় যেসব প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত বলে অন্তর্ভুক্ত করা হয় তার মধ্যে ফিনসবারি পার্ক মসজিদও রয়েছে।

এ রিপোর্টের ফলে এইচএসবিসি ব্যাংকে ওই মসজিদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়। অন্য কোনো ব্যাংকও মসজিদটির জন্য কোনো সেবা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। বিষয়টি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হয়। হাইকোর্টের ডেপুটি জজ রিচার্ড পার্কস কিউসির আদালতে মসজিদের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন সারা মানসুর।

তিনি দাবি করেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের প্রোফাইল রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ওই মসজিদটি। শুধু তাই নয়, মসজিদকে ফেলা হয়েছে সন্ত্রাসী বা জঙ্গি ক্যাটাগরিতে। তা করতে গিয়ে মসজিদের বহু বছর আগেকার অভিযোগ সামনে টেনে আনা হয়েছে। তারও অনেক পরে এ মসজিদটিকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। তারপরে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ওই রিপোর্টে অনেক আগের কমিটির কাউকে বর্তমানের সঙ্গে টেনে আনা হয়েছে। ফলে ওই রিপোর্ট ছিল ভুল। এর ফলে মসজিদটির সঙ্গে ব্যাংকগুলো সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। তাদের অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে।

কিন্তু আইনি লড়াইয়ে হেরে যায় রয়টার্স। তারা তাদের ভুলের কথা স্বীকার করে। স্বীকার করে, ওই মসজিদকে সন্ত্রাসী তালিকায় ফেলা তাদের একটি ভুল। ফলে তারা ওই মসজিদ কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষমা চাইতে রাজি হয়েছে। একই সঙ্গে ক্ষতিপূরণ ও অন্যান্য খরচ বাবদ ১০ হাজার পাউন্ড দিতে সম্মত হয়েছে।

সারা মনসুর বলেছেন, মানহানিকর এ অভিযোগ এরই মধ্যে প্রত্যাহার করেছে রয়টার্স। একই সঙ্গে রাজি হয়েছে ক্ষতিপূরণ দিতে ও আইনগত ব্যবস্থা নিতে যে খরচ হয়েছে তা পরিশোধ করতে। থমসন রয়টার্সের পক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন অলিভার মারফি। তিনি সারাহ মানসুরির দেয়া বিবৃতির পক্ষে নিশ্চয়তা দিয়েছেন। অলিভার মারফি বলেছেন, এ মামলার বিবাদী আমার মাধ্যমে ওই অভিযোগ প্রকাশ করার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে।

উল্লেখ্য, ফিনসবারি পার্ক মসজিদটি ২০০৫ সাল পর্যন্ত ধর্মীয় নেতা আবু হামজার সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। তারপর এ মসজিদটি চলে যায় নতুন ব্যবস্থাপনায়। বর্তমানে এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন মোহামেদ কোজবার।

কোজবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আমরা খুব বেশি স্বস্তি পেলাম। কারণ, এ নিয়ে মামলাটি শেষ হয়েছে। আমরা প্রতিহিংসায় পরিণত হয়েছিলাম। এইচএসবিসি ব্যাংকের অ্যাকাউন্টটি একেবারেই বন্ধ করে দেয়ায় আমরা পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করার সময়ে আমাদের কোনো কারণ জানানো হয়নি। এমন কি অন্য কোনো ব্যাংকে আমাদের একটি অ্যাকাউন্টও খুলতে অনুমতি দেয়া হয় নি।

তিনি বলেন, এ মসজিদটিকে কেন্দ্র করে আমরা একটি শত্রুতাপূর্ণ আবহকে বন্ধুত্বপূর্ণ আবহে নিয়ে এসেছি। অতীতকে আমরা পেছনে ফেলে এসেছি। আমাদের সামনে এখন ভবিষ্যৎ। আমাদের দরজা মুসলিম-অমুসলিম সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছি। প্রতিবেশীদের সঙ্গে আমাদের চমৎকার সম্পর্ক।

তিনি মসজিদটিকে সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য একটি যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, সন্ত্রাসের প্রতি তাদের রয়েছে শূন্য সহনশীলতা। এই মামলার রায়ে আমাদের নাম সন্ত্রাসের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হবে এটা আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ