শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল কুরআন-সুন্নাহর আইন ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না : মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী শীত ও শৈত্যপ্রবাহ নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস ফ্যাসিবাদ বারবার ফিরে আসবে, সতর্ক থাকতে হবে: গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা ‘কোনো রাজনৈতিক দলকে সরিয়ে দেয়ার ইচ্ছা জামায়াতের নেই’ শরীরে রক্ত বাড়াতে যেভাবে পালং শাক খাবেন

প্রবাসে বাংলাদেশি মুসলিম স্কলারের উজ্জ্বল মুখ শায়খ হারুন আযিযী নদভি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

harun_ajiji_nadvi

শায়খ হারুন আযিযী নদভি ১৯৭১ ইসায়ি সনে পহেলা ফেব্রুয়ারি রামু থানার গর্জনিয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৯০ সালে চট্রগ্রাম বাবুনগর মাদরাসা থেকে তাকমিলে হাদিস সমাপনান্তে “তাখাসসুস ফি উলূমিল হাদিস” এ উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে নদওয়াতুল উলামা লখনৌ আরবি সাহিত্য বিভাগে ভর্তি হয়ে “তাখাচ্ছুছ ফিল আদাবিল আরাবি”তে কৃতিত্বের সাথে মাষ্টার্স সম্পন্ন করেন। পঞ্চাশের অধিক আরবি ও বাংলা কিতাবের রচয়িতা ও সম্পাদক। বর্তমানে বাহরাইনস্থ জামে আব্দুল্লাহ ইয়াতিম বারবারে ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করছেন। বাহরাইনের সুপ্রসিদ্ধ দাওয়াতী প্রতিষ্ঠান ডিসকভার ইসলাম (Discover Islam)-এ দাঈ, রিচার্স স্কলার এবং বাংলা বিভাগের সভাপতি হিসেবে কর্মরত আছেন। সেখানকার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মুরশিদে দ্বীনি ও ওয়ায়েয হিসেবে নির্বাচিত মুবাল্লিগ। ডিসকভার ইসলামের তত্ত্বাবধানে জেলখানা ভিজিটের কাজ করেন। রামাযান মাসে এফএম রেডিওতে উর্দু ভাষায় লেকচার প্রদান করেন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝেও দ্বীনি দাওয়াত নিয়ে ছুটে বেড়ান মসজিদে মসজিদে ও বিভিন্ন সভা সেমিনারে। সম্প্রতি আল রাজি কোম্পানী কর্তৃক ঘোষিত রচনা প্রতিযোগীতায় আর্ন্তজাতিক পুরস্কার লাভ করে আরব বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদাকে সমুন্নত করেছেন। ARCAPITA ইনভেস্টমেন্ট এজেন্সীর গ্লোবাল হেড অব এফএমজি ও পরিচালক জনাব মুহাম্মদ এ মুঈজ চৌধুরী বলেন শায়খ হারুন আজিজ নদভি প্রবাসে বাংলাদেশিদের মর্যাদাকে সমুন্নত করেছেন। বাহরাইন সফরকালীন এ মহান ব্যাক্তিত্বের সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন ourislam24.com -এর প্রধান সম্পাদক মুহাম্মদ আমিমুল ইহসান।

আওয়ার ইসলাম : আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।
শায়খ হারুন আযিযী নদভি : ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

আওয়ার ইসলাম : আপনার জন্মস্থান ও পরিচয় সম্পর্কে কিছু বলবেন।
শায়খ হারুন আযিযী নদভি : ১৯৭১ ইসায়ি সনে পহেলা ফেব্রুয়ারি রামু থানার গর্জনিয়া গ্রামে আমার জন্ম হয়। জন্মের পর আমার আব্বাজান রহ. তাঁর শায়খ ও মুর্শিদ আরিফ বিল্লাহ শাহ মুহাম্মদ হারুন বাবুনগরী রহ. নামে আমার নাম রাখেন মুহাম্মদ হারুন । আমার পূর্বপুরুষগণ দুনিয়া বিমূখ ও সদা আল্লাহ প্রেমে মত্ত এক নিভৃত পরিবারে বেড়ে উঠেন। আমার আব্বাজান জনাব মাওলানা নজির আহমদ ইবনে বদিয়ুদ্দীন ইবনে মনু ফকির রামুবি রহ. ছিলেন আরিফ বিল্লাহ শায়খ শাহ মুহাম্মদ হারুন বাবুনগরী রহ. এর খাছ খলিফা।

আওয়ার ইসলাম : আপনার বাল্য ও শিক্ষা জীবন সর্ম্পকে জানতে চাই।
শায়খ হারুন আযিযী নদভি : বাল্যকাল কক্সবাজারস্থ রামু থানার অর্ন্তগত গর্জনিয়া ইউনিয়নের বড়বিল গ্রামে এক দ্বীনি পরিবারে আল্লাহ প্রেমের ছোঁয়ায় অতিবাহিত হয়। আব্বাজানের কাছে আরবি বর্ণমালা সংক্রান্ত প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করার পর তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলে পড়ি। গর্জনিয়া আজিজিয়া মাদরাসা থেকে দশ বছর বয়সে কৃতিত্বের সাথে কোরআনে কারিমের হিফজ সম্পন্ন করে ঈদগাঁও ইমদাদিয়া আজিজুল উলূম মাদরাসায় জামাতে হাশতম পর্যন্ত অধ্যয়ন করি। তারপর চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজুল উলূম বাবুনগরে ভর্তি হই। ১৯৯০ সালে বাবুনগরে তাকমিলে হাদিস সমাপনান্তে “তাখাসসুস ফি উলূমিল হাদিস” এ উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করি।

আওয়ার ইসলাম : উচ্চ শিক্ষার্জনে বিদেশ সফর সম্পর্কে জানাবেন কি?
শায়খ হারুন আযিযী নদভি : শায়খুল ইসলাম সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলি মিয়া নদভি রহ. প্রতিষ্ঠিত ভারতের অনন্য ইসলামিক ইউনিভার্সিটি দারুল উলূম নদওয়াতুল উলামা লখনৌতে আরবি সাহিত্য বিভাগে ভর্তি হয়ে “তাখাচ্ছুছ ফিল আদাবিল আরাবি”তে কৃতিত্বের সাথে মাষ্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করি। নদওয়াতে অধ্যায়নের সময় লখনৌ সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এ পাষ্ট ইয়ারের পরীক্ষা দেই। মূলত: আরবি সাহিত্য পড়ার ভারত সফর করি। উত্তর প্রদেশের ল²ৌতে অবস্থিত দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামাতে শিক্ষা অর্জন করি।

আওয়ার ইসলাম : আপনার উল্লেখযোগ্য শায়খ ও শিক্ষকমণ্ডলি।
শায়খ হারুন আযিযী নদভি : আমার হাদিসের শায়খ ও উস্তাদ হলেন শায়খুল হাদিস আল্লামা ইসহাক গাজী,শায়খ মুহাম্মদ ইউনুস,শায়খ উবায়দুর রহমান, শায়খ মুহাম্মদ মহিববুল্লাহ বাবুনগরী, শায়খ হাবিবুল্লাহ,শায়খ জুনায়েদ বাবুনগরী, শায়খ শফি,শায়খ মুফতি মাহমুদুল হাসান ও শায়খ নুরুল হক ।
আর নদওয়ার উস্তাদ ও শায়খদের মধ্যে শায়খুল আরব সাইয়্যেদ আবুল হাসান নদভি, শায়খ সাইয়েদ সালমান হুসাইনি নদভি,শায়খ জাকারিয়া,শায়খ মাহবুবুর রহমান আযহারি,শায়খ সাইদুর রহমান আযমি,শায়খ রাবে হাসান নদভি ও শায়খ ওযাযেহ রশিদ নদভি। তাছাড়া আমার ইসলাহের শায়খ আরেফে রাব্বানী শায়খ মুহাম্মদ হারুন বাবুনগরী ও ইমামুল আরেফিন আল্লামা শায়খ সাইয়েদ আবুল হাসান নদভি।

আওয়ার ইসলাম : নদভী রহ.-এর সংস্পর্শে দাওয়াতী জীবনের দীপ্ত শপথ গ্রহণ সম্পর্কে বলুন।
শায়খ হারুন আযিযী নদভি : যখন বাবুনগর মাদ্রাসায় লেখাপড়া করি তখন একবার শায়খ আবুল হাছান আলী নদভি রহ: কে দেখার সৌভাগ্য হয়। লখনৌ আসার পর সরাসরি তাঁর সংস্পর্শে যাওয়ার সুযোগ লাভ করি এবং দাওয়াতী জীবনের দীপ্ত শপথ গ্রহণ করি। নদওয়াতে আসার পর হযরত মাওলানাকে খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়। প্রায় সময় তাঁর মজলিসে বসতাম। রায়ব্রেলীতে রামাযানে হযরতের সুহবতে থাকার সুযোগ হয়েছে। সমাপনী বছরে তাঁর কাছে সরাসরি পড়ার সুযোগ হয়েছে। তাঁর সাথে আধ্যাত্মিক সম্পর্কও গড়ার চেষ্টা করেছি।

আওয়ার ইসলাম : শিক্ষকতা করেছেন কি কোথাও?
শায়খ হারুন আযিযী নদভি : এক বছর প্রিয় উস্তাদ সাইয়েদ সুলায়মান নদভির মাদরাসা জামেয়া সাইয়েদ আহমদ ইবনে ইরফান আশ শহিদ কঠোলীতে শিক্ষকতা করি। পরে জামেয়া ইসলামিয়া বাবুনগরে তিন বছর শিক্ষকতা করি। তথায় আরবি বিভাগের ডিন হিসেবে খেদমত আঞ্জাম দেই। সাথে সাথে জামেয়ার ইসলামি গবেষণা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করি। প্রাণপ্রিয় উস্তাদ যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস আল­ামা জুনায়েদ বাবুনগরীর সাথে “তাখাসসুস ফিল হাদিস” বিভাগেও হাদিসের খেদমত করার সুযোগ হয়।

আওয়ার ইসলাম : আপনার প্রকাশিত অনুবাদ ও রচনাবলী কী কী?
শায়খ হারুন আযিযী নদভি : ছাত্র যামানা থেকেই আমার লেখালেখির অভ্যাস। দেয়ালিকা, ম্যাগাজিন ও দৈনিক পত্রিকায় দেশে থাকতে বিভিন্ন প্রবন্ধ লিখতাম। বাবুনগর থাকাকালীন আল­ামা জুনায়েদ বাবুনগরীর তত্ত্বাবধানে মাদরাসা ছাত্র সংসদের সাহিত্য বিভাগের সভাপতি ছিলাম। বাংলা ভাষায় রচিত ও সম্পাদিত রচনাবলী নিম্নরূপ :

১.হাদিসের হেফাযত ও সংকলন, ২. হাদিস কি ও কেন? ৩. ঈদে মিলাদ ও কিয়াম, ৪. ইসলাম কী ও কেন?, ৫. জাল ও যয়িফ হাদিসের বিধান, ৬. আল্লাহর পরিচয়, ৭. রাসুল এবং রিসালাত, ৮. জাল হাদিসের ইতিকথা, ৯. কুরআনের সাথে আমাদের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত? ১০. রিয়াযুস সালেহিন, যা দারুস সালাম প্রকাশনী সৌদিআরব হতে দুই খন্ডে প্রকাশিত হয়েছে। ১১. সহিহ নামায শিক্ষা, ১২. সিয়ামে রামাদান, ১৩. যাকাত ও সাদাকা, ১৪. হজ্জ উমরা ও যিয়ারত, ১৫. সকাল সন্ধ্যার করণীয় আমল, ১৬. জ্ঞানের কষ্টি পাথরে তাবলিগ জামাত, ১৭.তাৎপর্যময় জিলহজ্জ মাস, ১৮. প্রচলিত জাল হাদিস ও সমাজে তার বৈরী প্রভাব, ১৯. জাল হাদিসের ভেড়াজালে সিরাতুন্নবী, ২০. প্রিয় নবীজির জীবন কথা, ২১.আন নাবিয়্যুল মাছুম, ২২.তাওহিদের মাসায়েল, ২৩. ইত্তিবায়ে সুন্নাতের মাসায়েল, ২৪.তাহারাতের মাসায়েল, ২৫. নামাযের মাসায়েল, ২৬. যাকাতের মাসায়েল, ২৭. রোযার মাসায়েল, ২৮. জানাযার মাসায়েল, ২৯. দরূদ শরিফের মাসায়েল, ৩০.দোয়ার মাসায়েল, ৩১. তাফসিরে আজিজুল বয়ান ইত্যাদি।
আরবি ভাষায় লিখিত রচনাবলীর মধ্যে - ৩২. তারিখুল লুগাতিল আরাবিয়্যাহ ফি বাংলাদেশ, ৩৩.আল ইসলাম ফি বাংলাদেশ, ৩৪. ইরশাদুল কাউম ইলা আদাবিন নাওম, ৩৫.তালিক আলা কিতাবিত তাওহিদ, ৩৬. আল ইমাম মালিক ওয়া কিতাবুহুল মুয়াত্তা, ৩৭. আল ইমাম বুখারী ওয়া কিতাবহুল জামে এবং ৩৮. ফি রিহাবি শাহরি রামাদান ইত্যাদি।

এ ছাড়া আর রায়িদ, আলবা’ছ, আখবারুল খালিজ ও মাজাল্লা ইকতাশাফাল ইসলাম পত্রিকায় প্রকাশিত অনেক আরবি প্রবন্ধ। বাহরাইন ডিসকভারি ইসলামের তত্ত্বাবধানে বাংলা ও উর্দুতে অনেক দাওয়াতী বুলেটিন এবং লিফলেট প্রকাশিত হয়।

harun_ajiji

আওয়ার ইসলাম : ডিসকভার ইসলাম-বাহরাইন (Discover Islam - ইকতাশাফাল ইসলাম) কী ধরনের কাজ করে থাকে?
শায়খ হারুন আযিযী নদভি : ডিসকভার ইসলাম মূলত: নন মুসলিমদের মাঝে ইসলামি দাওয়াতের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। নব মুসলিমদের কর্মসংস্থান, খাদ্য ও বস্ত্রের ব্যবস্থা করা হয়। সাধারণ মুসলমানদের মাঝে তাওহিদের দাওয়াত প্রদান করা হয়। বিভিন্ন ভাষায় দাওয়াতী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ইসলামিক বুকস প্রকাশ করা হয়। বিভিন্ন উপলক্ষে সভা, সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করা হয়। এটি বাহরাইন সরকার অনুমোদিত একটি দাওয়াতী ও দাতব্য সংস্থা।

আওয়ার ইসলাম : প্রবাস জীবনে তাওহিদে খালেছ ও দ্বীনের দাওয়াত বিষয়ে আপনার ভাবনা।
শায়খ হারুন আযিযী নদভি : প্রবাসে আসার পর বাহরাইনের সুপ্রসিদ্ধ দাওয়াতী প্রতিষ্ঠান ডিসকভার ইসলাম -এর সাথে দাওয়াতী কাজে জড়িত হই। বর্তমানে তথায় দাঈ, রিচার্স স্কলার এবং বাংলা বিভাগের সভাপতি হিসেবে কর্মরত আছি। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মুরশিদে দ্বীনি ও ওয়ায়েয হিসেবে নিযুক্ত হই। রামাযান মাসে তারাবিহের পরে বিভিন্ন মসজিদে তাফসিরুল কুরআনের ধারাবাহিকতা চালু আছে।

এছাড়াও বাহরাইনের বিভিন্ন ইসলামি সেন্টারের সাথে দাওয়াতী কাজে জড়িত আছি। এ সকল সেন্টারের মধ্যে আল-হিদায়া সেন্টার, আল-ফুরকান সেন্টার, আল-মারকাজুল ইসলামি এবং মারকাযুত তারিফ বিল ইসলাম ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বাহরাইনের বিভিন্ন স্থান মানামা, রিফা, হামাদ টাউন, মুহাররাক, আলী, বারবার, তুবলী ও বুদাইয়া এলাকার বিভিন্ন স্থানে ও মসজিদে মাসিক বা সাপ্তাহিক ওয়াজ, তাফসির মাহফিল ও দরস দানের সুযোগ হয়। আরবি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় ওয়াজ, দরস ও নসিহতের কাজ আঞ্জাম দিতে হয়। ডিসকভার ইসলামের তত্ত্বাবধানে জেলখানা ভিজিটের কাজ করি। সপ্তাহান্তে জেলে গিয়ে বন্দীদের উদ্দেশ্যে নসিহতমূলক বক্তব্য পেশ করতে হয়। রামাযান মাসে এফ এম রেডিওতে উর্দু ভাষায় লেকচার দেয়ার জন্য নিমন্ত্রণ জানানো হয়। মা’হাদ উম্মু দারদাতে উসুলে ফিকহ ও হাদিস পড়ানোর সুযোগ হয়েছে।

এ ছাড়া সাপ্তাহিক সহিহ বুখারী ও মিশকাতুল মাসাবিহের দরস , আম পারার তাফসির এবং আরবি ভাষা শিক্ষাদান কোর্স ও বাহরাইনে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সভা-সেমিনারে অংশ গ্রহণ ইত্যাদি কাজ করে যাচ্ছি।

আওয়ার ইসলাম : হজ্জ ও উমরাহ পালন করেছেন কি?
শায়খ হারুন আযিযী নদভি : ২০০০ সালের মার্চ মাসে সর্ব প্রথম হজ্জ পালনের তাওফিক হয়। তারপর আরো দুইবার মুরশিদে দ্বীনি হিসেবে হজ্জ পালন করার তাওফিক হয়েছে। ১৯৯৮ সালে সর্ব প্রথম উমরা পালনের তাওফিক হয়। তারপর আট-দশ বার সপরিবারে বেশ কয়েকবার উমরা পালন করার সুযোগ হয়েছে আলহামদুল্লিাহ।

আওয়ার ইসলাম : প্রবাসী বাংলাদেশিদের খেদমতে দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে হাজিরা ।
শায়খ হারুন আযিযী নদভি : সাধ্যমতে সকল মাধ্যম যথা: ওয়াজ, বয়ান, সভা সেমিনার, তাফসির, শিক্ষাদান, জেল ভিজিট, ক্যাম্প ভিজিট, ফেইসবুক, ইউঢিউব, লিখনী, লিফলেট, ক্যাসেট, ও সিডি ইত্যাদি মাধ্যম দ্বারা দ্বীনি দাওয়াতের চেষ্টা চলছে।

আওয়ার ইসলাম: আপনার দাম্পত্য জীবন?
শায়খ হারুন আযিযী নদভি : ১৯৯৬ সালে চট্টগ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক জনাব আলহাজ আব্দুল মালেক সাহেবের কন্যা শায়খা তাহেরা বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। আলহামদুল্লিাহ আমার এক পুত্র সন্তান ও চারজন কন্যা সন্তান রয়েছে।

আওয়ার ইসলাম: খতিব ও দায়ী হিসেবে সফলতা?
শায়খ হারুন আযিযী নদভি : বাহরাইনে মূলত: ইমাম ও খতিব হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আসার। আসার পর থেকেই জামে আব্দুল্লাহ ইয়াতিম বারবারে ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করছি। প্রথমে মসজিদটি ছিল বেসরকারী, বছর কয়েক পরে সরকারী করা হয়। বর্তমানে সরকারী ভাবে ইমাম ও খতিবের দায়িত্বে আছি।

আওয়ার ইসলাম : দ্বীনের খেদমত ও সমাজ সেবায় নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন কিভাবে?
শায়খ হারুন আযিযী নদভি : সমাজ সেবার কাজে সদা জড়িত থাকার চেষ্টা করি। আন-নজির ফাউন্ডেশন (রেজি ফ‚: ৩২৪/০৮) নামে একটি সমাজ সেবা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছি। যার মাধ্যমে নলকুপ প্রদান, শীতবস্ত্র বিতরণ, গরীব-বিধবাদের সাহায্য, ঈদ ও কুরবানীতে গরীবদের সাহায্য এবং বিবাহের জন্য সাহায্য ও চিকিৎসার জন্য সাহায্য,মসজিদ ও মাদরাসা নির্মাণ ইত্যাদি কাজ করি। মরহুম আব্বাজান হযরত মাওলানা নজির আহমদ রামুবীর রহ. প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা ও এতিমখানা পরিচালনা করছি। আন-নজির ইসলামিক সেন্টার নামে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছি। আন-নজির ফাউন্ডেশন নামে একটি সমাজসেবা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছি। দারুল আফকার আল ইসলামিয়া মাদ্রাসায় সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি। তাছাড়াও অসংখ্য মাদরাসা, মসজিদ ও এতিমখানায় ফাউন্ডেশনের পক্ষ হতে সাধ্যমত সাহায্য সহযোগিতা করে যাচ্ছি। বন্যা দূর্গত মানুষের মাঝে ত্রাণবস্ত্র ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়।

Ha 02

আওয়ার ইসলাম: আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ।
শায়খ হারুন আযিযী নদভি : নদওয়ায় থাকাকালীন আল ইন্ডিয়া উইনেস্কো কোম্পানী থেকে পুরস্কার লাভ করি। স¤প্রতি আরব বিশ্বে হাদিস বিষয়ক প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় ইমাম মালেক রহ. ওপর প্রবন্ধ লিখে আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করি। যা আরবদের মধ্যে বাংলাদেশের মর্যাদাকে সমুন্নত করেছে। বইটি ছাপার প্রস্তুতি চলছে।

আওয়ার ইসলাম: চট্টগ্রামের কথা কি মনে পড়ে?
শায়খ হারুন আযিযী নদভি : চট্টগ্রামের কথা খুব বেশী মনে পড়ে। সকল আত্মীয়- স্বজন, শিক্ষকমন্ডলি , সাথী-বন্ধু এবং পরিচিত সবাই সেখানে, তাই চট্টগ্রামের স্মৃতি কখনো ভুলার নয়। বিশেষত: ইসলামি আন্দোলন ও ইসলাম প্রচারে বাংলাদেশি ওলামাদের নি:স্বার্থ খেদমত চির স্মরণীয় ।

আওয়ার ইসলাম : বাংলাদেশে ইসলামি রাজনীতির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কিছু বলুন।
শায়খ হারুন আযিযী নদভি : বাংলাদেশ মসজিদ, মাদরাসা ও আল্লাহওয়ালা সুফী সাধকের দেশ। বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত ধর্ম প্রিয়। জন্মগতভাবেই বাংলাদেশের মানুষ ইসলামকে হৃদয়ের গহীনে লালন করে। ইসলামি রাজনীতির সফলতা অর্জনে এ আম জনতাকে ইসলামের পক্ষে আনার দায়িত্ব মুসলিম স্কলারদের। এ ক্ষেত্রে হকপন্থী ওলামায়ে কেরাম ইখতিলাফী বিষয়ে উদারতার পরিচয় দিয়ে একই প্লাটফর্মে কাজ করলে ইসলামি রাজনীতি সফলতার মুখ দেখবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা প্রবাস থেকে আশা করি সহিহ আকিদায় বিশ্বাসী ওলামায়ে কেরাম ইসলামি রাজনীতির সফলতার লক্ষ্যে এক পতাকা তলে আবদ্ধ হয়ে কাজ করবেন।

আওয়ার ইসলাম : বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বাংলাদেশি প্রবাসী ওলামায়ে কেরামের অবদান সম্পর্কে কিছু বলুন।
শায়খ হারুন আযিযী নদভি : বাহরাইনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অসংখ্য বাংলাদেশি খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন, দায়ী ও আলেম ব্যবসায়ী রয়েছেন। এদের অধিকাংশই কাওমি মাদরাসা পড়ুয়া। কাওমি মাদরাসাগুলোর ইলমি খেদমত দেশের সীমানা পেরিয়ে এখন আরব বিশ্বে। কাতারে কয়েক হাজার বাংলাদেশি ইমাম রয়েছে। যারা তাদের স্ব-স্ব যোগ্যতা অনুযায়ী দেশের সুনাম ও সুখ্যাতির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। ফরেন রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে তাদের অবদান বিশাল। বাহরাইনে অসংখ্য বাংলাদেশি খতিব ও ইমাম রয়েছে যারা তাদের কষ্টার্জিত টাকা দেশে পাঠাচ্ছেন নিয়মিত। অথচ আলেমদের এ অবদানকে বাংলাদেশের কোনো দৈনিক পত্রিকা ও মিডিয়া প্রচারই করে না। অনেক সাধারণ প্রবাসীদের তুলনায় ইমাম ও খতিবদের অবস্থান অনেক মজবুত।

আওয়ার ইসলাম : পাঠকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।
শায়খ হারুন আযিযী নদভি : জীবনের খেলা ঘরে বিশ্ব মানবের স্টেইজে আমি কি উপস্থাপন করলাম এবং আমার ভবিষ্যৎ জীবন তথা আখেরাতের জন্য কি প্রেরণ করতে সক্ষম হলাম। এ একটি প্রশ্ন সবার সামনে সব সময় থাকা উচিত। সবার কাছে দোয়া প্রার্থী।

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ