শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল কুরআন-সুন্নাহর আইন ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না : মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী শীত ও শৈত্যপ্রবাহ নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস ফ্যাসিবাদ বারবার ফিরে আসবে, সতর্ক থাকতে হবে: গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা

বালিকা আশ্রমের কবির হাতে একাডেমি পুরস্কার

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রোকন রাইয়ান

abu_hasan_shahriarচাঁদ গিয়েছিল বালিকা বিহারে
মন গিয়েছিল মনে
একখানা রাত ভোর হয়ে গেল
টেলিফোনে-টেলিফোনে

(বালিকা আশ্রম)

এমন অসংখ্য সুখপাঠ্য পঙতির জন্মদাতা কবি আবু হাসান শাহরিয়ার। কবিতায় যিনি তৈরি করেছেন নতুন স্রোত। আবার নাম যশ খ্যাতি মাড়িয়েছেন দু’পায়ে। দ্বিধাহীন কণ্ঠেই প্রচলকে ভেঙেছেন তিনি। সবাই যেখানে ভয়ে জড়োসড়ো তিনি সেখানে তৈরি করেন ‘মিডিয়া একুশ শতকে বড়লোকের বাড়ির পোষা কুকুরের’র মতো অসংখ্য পঙতি।

শক্তিমান এ কবি কবিতায় এ বছর বাংলা একাডেমির পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমিতে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে এ পদক গ্রহণ করবেন।

কবিতাই আবু হাসান শাহরিয়ারের মৌলিক বিষয়। তবে মেধা ও মননে অগ্রজ কবি অসংখ্য প্লাটফরম তৈরি করেছেন। সম্পাদনা করেছেন একাধিক জাতীয় সংবাদপত্র। সেখানেও তিনি সাফল্য পেয়েছেন। তৈরি করেছেন অসংখ্য শাহরিয়ার।

আবু হাসান শাহরিয়ারের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অন্তহীন মায়াবী ভ্রমণ’। প্রকাশিত হয় ১৯৮৬ সালে। প্রথম বইটিই তাকে বিপুল কবিখ্যাতি এনে দিয়েছে। এর আগে অবশ্য তার ছোটগল্প ও ছড়ার একটি বইও প্রকাশ পায়।

অন্তহীন মায়াবী যাত্রার পর একে একে প্রকাশ হয় অব্যর্থ আঙুল (১৯৯০); তোমার কাছে যাই না তবে যাব (১৯৯৬); একলব্যের পুনরুত্থান (১৯৯৯); নিরন্তরের ষষ্ঠীপদী (১৯৯৯); এ বছর পাখিবন্যা হবে (২০০০); ফিরে আসা হরপ্পার চাঁদ (২০০১); হাটে গেছে জড়বস্তুবাদ (২০০৩); সে থাকে বিস্তর মনে বিশদ পরানে (২০০৪); প্রেমের কবিতা (২০০৪); বালিকা আশ্রম (২০০৫)।

সবগুলোতেই কাব্যের অনন্য মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন আবু হাসান শাহরিয়ার।

বড়দের পাশাপাশি তিনি ছোটদের জন্যও লিখেছেন। তার ইংরেজি কবিতা ‘The Tyger’ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিশুদের পাঠ্য। লিখেছেন কিশোর কবিতাও। পায়ে নুপুর, ভরদুপুরে অনেকদূরে, আয়রে আমার ছেলেবেলা তার অনন্য তিনটি কিশোর কবিতার বই। গল্পেও পটু শাহরিয়ার। সেই সাফল্যও দেখিয়েছেন ১৯৮১ তে প্রকাশিত আসমানী সাবানে

আবু হাসান শাহরিয়ার নিজেকে সৎ মানুষ হিসেবে তুলে ধরেছেন পাঠকের সামনে। সবাই যখন আত্মজীবনী লেখে তিনি তখন সমাত্মজীবনী লেখেছেন অবলিলায়। বলেছেন নিজের ও বন্ধুদের কথা। তার হাতে আছে পাঠক পাগল করা গদ্য। নৈ:শব্দের ডাকঘরে তিনি মৃণালবসু চৌধুরীর সঙ্গে চিঠিতে সেই যাদুকরি বাঁশিই বাজিয়েছেন। আবার ‘যাইতাছি যাইতাছি কই যাইতাছি জানি না’তে তিনি গদ্যকে ভেঙে গড়েছেন স্বতন্ত্র স্টাইল।

খ্যাতির জন্য দৌড়াননি কবি আবু হাসান শাহরিয়ার। সবাই যখন পদক, পদায়নে ব্যস্ত তিনি তখন উচ্চারণ করেছেন ‘স্লেটে লেখা নাম আমি মুছে যেতে আসি।’ অকবিরা যখন উৎসব অটোগ্রাফে মাতে তিনি তখন লেখেন, আজ নাকি আগাছা উৎসব? বলেন, কে এক বালিকা এসে মেলে ধরে তার অটোগ্রাফ খাতা জানে না সে- আমি নই; বড়ু চন্ডীদাস প্রেমের বিধাতা।

২৫ জুন ১৯৫৯ তে কবির জন্ম। বাবা মুহাম্মদ সিরাজউদ্দীন একজন শিক্ষাবিদ এবং মা রাবেয়া সিরাজও একজন লেখক। বিয়ে করেছেন আরেক কথাসাহিত্যিক মনিরা কায়েসকে।

আবু হাসান শাহরিয়ারের শৈশব কেটেছে ময়মনসিংহ, কুমিল্লা এবং ঢাকা শহরে। ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে এস এস সি এবং ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি উত্তীর্ণ হবার পর চিকিৎসক হবার ইচ্ছায় তিনি ১৯৭০-এর শেষভাগে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু চিকিৎসাশাস্ত্র তাকে বেশি দিন আকর্ষণ করতে পারেনি। বছর না পেরুতেই মেডিকেল ছেড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হন এবং সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন।

কর্মজীবনের শুরুতে দৈনিক মুক্তকণ্ঠের সাহিত্য পাতায় কাজ করে নিজের মেধাকে জানান দিয়েছেন। এরপর দৈনিক যুগান্তর এবং আমাদের সময়ে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন।

কবির দীর্ঘদিনের পরিশ্রম যেন সার্থক করে দিল বাংলা একাডেমির একুশে পদক।

এইচএ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ