আওয়ার ইসলাম: জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত অভিযোগে রাজধানী উত্তরার ইংরেজি মাধ্যমের লাইফ স্কুলের সাবেক অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলামসহ স্কুলটির প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িত উদ্যোক্তা, শিক্ষক ও অভিভাবক সব মিলিয়ে মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এরা সবাই রাজধানীর গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া হামলার ‘পরিকল্পনাকারী ও জোগানদাতা’ নব্য জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) নেতা নিহত তামিম চৌধুরী এবং আশুলিয়ায় নিহত সংগঠনের আমির সারোয়ার জাহানের গ্রুপের সদস্য ও অনুসারী ছিল বলে দাবি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)এর। পুলিশের এই এলিট ফোর্স জানিয়েছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল রোববার রাতে রাজধানীর উত্তরা ও কলাবাগান এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এরপর আজ সোমবার বিকেল ৫টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বিএসইসি ভবনে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তারকৃতদের সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ব্রিফ করেন র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন শরিফুল ইসলাম (৪০), মিজানুর রহমান (৪৩), জিয়াউর রহমান (৩১), আবু সাদাত মো. সুলতান আল রাজী ওরফে লিটন (৪১), আল মিজানুর রশিদ (৪১), জান্নাতুল মহল ওরফে জিন্নাহ (৬০), মো. কৌশিক আদনান সোবহান (৩৭), মেরাজ আলী (৩০), মুফতি আবদুর রহমান বিন আতাউল্লাহ (৩৭), মো. শাহরিয়ার ওয়াজেদ খান (৩৬), শরিফুল ইসলাম (৪৬)।
গ্রেপ্তার শরিফুল ইসলাম উত্তরার লাইফ স্কুলের সাবেক অধ্যক্ষ এবং বর্তমানে তিনি উত্তরা এলাকায় একই ধরনের আরেকটি স্কুল নলেজ হোমের অধ্যক্ষের দায়িত্বে রয়েছেন।
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান বলেন, শরিফুল ইসলাম প্রায় আড়াই বছর ধরে স্কুলের কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন। তাঁরা ছাত্রছাত্রী ভর্তি করেন ঠিকই কিন্তু তাদের মূল টার্গেটে ছিলেন ছাত্রছাত্রীদের মা-বাবা। তাঁরা অভিভাবকদের টার্গেট করে জঙ্গি কার্যক্রমে অনুপ্রাণিত করতেন। এ জন্য সবাই একটি গোপন মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করতেন এবং নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখতেন। এই গ্রুপের অধিকাংশই উচ্চশিক্ষিত।
অভিভাবকদের কাছে লাইফ স্কুলের একটি বিশেষ আকর্ষণ ছিল, সেখানে ১২০ জন ছাত্রছাত্রীর বিপরীতে ২৩ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ছিলেন।
র্যাব কর্মকর্তারা আরো জানান, গ্রেপ্তার হওয়া নারীসদস্য জান্নাতুল, বিশেষ করে নারীদের জঙ্গি কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ করতেন। এরা কেউই সরাসরি কোনো হামলায় কখনো অংশ নেননি। কিন্তু প্রত্যেকেই গোয়েন্দা নজরদারি, রেকি ও অনুপ্রাণিত করার কাজ করে আসছিলেন।
গ্রেপ্তার সবার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়।
গত বছরের ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার পাইকপাড়া কবরস্থানের পাশে একটি জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানে তামিম আহমেদ চৌধুরীসহ তিনজন নিহত হন। এরপর গত ৮ অক্টোবর ঢাকার আশুলিয়ায় বাইপাইলের গাজীরজট বসুন্ধরারটেক এলাকায় মৃধা ভিলা নামে একটি বাসার পাঁচতলা ভবনের বারান্দার গ্রিল কেটে লাফিয়ে পড়ে মারা যান সারোয়ার জাহান। ওই দিন গ্রেপ্তার সারোয়ারের স্ত্রী শাহনাজ আক্তার রুমি বর্তমানে কারাগারে আছেন। তিনি কারাগারে একটি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।
ডিএস