আওয়ার ইসলাম : বাংলাদেশিদের বিদেশ ভ্রমণে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) থাকা বাধ্যতামূলক।
আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (আইকাও) নির্দেশনা অনুযায়ী পাঁচ বছর আগে এমআরপি প্রকল্প শুরু হয়। বর্তমানে এর সুফল পাচ্ছেন দেশের জনগণ। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছরের জুনে, তার আগেই আরও একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।
আইকাওর নির্দেশনা না থাকলেও 'ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা' নামের প্রকল্পটি নিয়ে তোড়জোড় শুরু করেছে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর। পাঁচ হাজার কোটি টাকা সম্ভাব্য ব্যয় ধরে এর জন্য অসম্পূর্ণ ও অসঙ্গতিপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনাও (ডিপিপি) প্রণয়ন হয়েছে। প্রকল্পের বিভিন্ন খাতে ইচ্ছামতো ব্যয় ধরা হয়েছে। মানা হয়নি ডিপিপি প্রণয়নের নির্দেশনাও।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে এখনও ই-পাসপোর্ট চালু হয়নি। আইকাও ব্যবহার-সংক্রান্ত বাধ্যতামূলক সময় ও নূ্যনতম মান নির্ধারণ করে দেয়নি। ডিপিপি অসম্পূর্ণ হওয়ায় তা পুনরায় প্রণয়ন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জানা যায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ডিপিপিতে প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে সাত বছর। ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল এলাকাকে প্রকল্পের আওতায় রাখা হয়েছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, একনেকের নির্দেশনায় রয়েছে_ ৫০ কোটি টাকা বা তার অধিক অর্থের প্রকল্পের জন্য অবশ্যই সম্ভাব্যতা যাচাই করে তা ডিপিপিতে সংযুক্ত করতে হবে। অথচ প্রস্তাবিত পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের এ প্রকল্পের ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও প্রশ্ন তোলা হয়।
পাসপোর্ট অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, ই-পাসপোর্ট তৈরিতে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর এমনকি বাংলাদেশের কোনো সংস্থার পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। তাই ই-পাসপোর্ট প্রকল্প প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা আবশ্যক। সমীক্ষা ছাড়া এ ধরনের উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন প্রকল্প নেওয়া হলে বড় ধরনের ভুল হতে পারে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ডিপিপিতে ৩৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ছয়টি ই-পাসপোর্ট
পার্সোনালাইজেশন মেশিন কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিষয়ে উল্লেখ করা রয়েছে, এমআরপি ও এমআরভি প্রকল্পের আওতায় এবং রাজস্ব বাজেট থেকে এরই মধ্যে ৯টি পার্সোনালাইজেশন মেশিন কেনা হয়েছে। কিন্তু ওই মেশিন আর প্রস্তাবিত মেশিনের পার্থক্য, কাজ চলবে কি-না তার বিস্তারিত বিবরণ না থাকায় প্রশ্ন উঠেছে। প্রকল্পের আওতায় ৫০টি ই-গেট নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। প্রতিটি ই-গেটের জন্য চার কোটি টাকা করে মোট ২শ' কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। ই-গেট কীভাবে স্থাপন হবে, কী কী যন্ত্রপাতি থাকবে তার বিস্তারিত বিবরণ ডিপিপিতে নেই।
তাই প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার পরামর্শ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অধিশাখার যাচাই-বাছাই সংক্রান্ত কমিটি। তাদের মতে, শুধু সংখ্যা ও ব্যয় বরাদ্দের প্রস্তাব নিয়ে প্রকল্পটি চালু করা মোটেই যৌক্তিক হবে না। কমিটি আরও বলেছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর ও আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে ই-গেট নির্মাণের প্রয়োজন নেই। তবে প্রয়োজন হলে শুধু ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ই-গেট স্থাপনের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।
বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার মো. মাসুদ রেজওয়ান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, 'সব ধরনের নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা করেই ই-পাসপোর্ট প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রকল্পটি নিয়ে আরও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। প্রস্তাবনায় ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতে পারে। তা সংশোধন করে পুনরায় মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে। প্রকল্পটি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আগ্রহ রয়েছে।' এমআরপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ নেই। এর আওতায় থাকা যন্ত্রপাতি এরই মধ্যেই অকেজো হয়ে গেছে। তাই জনস্বার্থে নতুন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।
ডিএস