আওয়ার ইসলাম: গাইবান্ধা-১ সুন্দরগঞ্জ আসনের দুর্বৃত্তদের ছোড়া গুলিতে নিহত সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের হত্যাকাণ্ডের মূল ক্লু উদ্ঘাটনের জন্য তদন্তকারীদের লক্ষ্য এখন পরিবার ও সহচরদের দিকে।
গত ৩১শে ডিসেম্বর সন্ধ্যায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে এমপি লিটন নিহত হওয়ার পর র্যাব, পুলিশ, বিজিবি, পিবিআইসহ দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের গোয়েন্দারা হত্যাকাণ্ডের মূল ক্লু উদ্ঘাটনের জন্য রাতদিন চষে বেড়াচ্ছেন। দীর্ঘ ৬ দিন ধরে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদ্ঘাটন ও আসামি গ্রেপ্তারে মরিয়া হয়ে ওঠা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা ও সদস্যরা বিভিন্ন পর্যায়ের ৪০ জনকে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদ করে জেল হাজতে প্রেরণ করলেও হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য অন্ধকারেই থেকে যাওয়ায় তাদের সন্দেহের তীর এখন পরিবার ও দলীয় সহচরদের দিকে।
গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তারা নিহত এমপি’র বড় শ্যালক সৈয়দ বেদারুল আহসান বেতার, কাজের লোক ইসমাইল হোসেন, ইউসুফ, সৌমিত্র, গাড়িচালক ফোরকান আকন্দ, এমপি’র সহধর্মিণী সৈয়দা খুরশিদ জাহান স্মৃতি, চাচি শামীম আরাসহ ১৩ জনকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এমপি লিটনের সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক সহচর ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল ইসলামকে র্যাব আটক করে। আটকের বিষয়টি র্যাবের এডি এএসপি হাবিবুর রহমান নিশ্চিত করে জানান, শহিদুল ইসলাম এমপি লিটনের সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক সহচর হওয়ায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
এদিকে এলাকায় গুঞ্জন উঠেছে এমপি লিটন হত্যাকাণ্ডের আগের দিন ৩০শে ডিসেম্বর তার বাড়িতে কর্মরত ১২/১৩ জন কাজের লোক ছুটিতে যাওয়ার পেছনের কারণ প্রশ্নবিদ্ধ। দীর্ঘ ৬ দিনেও এমপি লিটনের প্রকৃত খুনিদের গ্রেপ্তার করতে না পারায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলাবলি করছেন এমপি লিটনের সঙ্গে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বকারীদের বিষয়ে তদন্তকারীদের খতিয়ে দেখাও প্রয়োজন। মামলার বাদী ফাহিমা বুলবুল কাকলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার ভাই এমপি লিটনকে যারা খুন করেছে তারা এখনো গ্রেপ্তার না হওয়ায় আমি বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছি।
পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলাম জানান, পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা বিভাগ, পুলিশের বিশেষায়িত তদন্ত দল এই খুনের প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটনসহ খুনিদের গ্রেপ্তারে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছে। অতিসত্বর খুনের প্রকৃত তথ্য জানা যাবে এবং দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। এ নিয়ে থানা অফিসার ইনচার্জ আতিয়ার রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, এমপি লিটনের হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদ্ঘাটন ও আসামি গ্রেপ্তার এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। অচিরেই প্রকৃত খুনিরা গ্রেপ্তার হবে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবু হায়দার মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান জানান, অনেক তথ্য-উপাত্ত আমরা পেয়েছি। অপেক্ষা করুন সবকিছু দেখতে ও জানতে পারবেন।
প্রতিবাদ সভা, বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অব্যাহত: এমপি লিটনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে উপজেলার সর্বত্রই প্রতিবাদ সভা, বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলার ধুবনী কঞ্চিবাড়ি হাইস্কুল মাঠে ৮ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠন প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন সভাপতি গোলাম রব্বানীর সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন, রাজু মিয়া, ফজলার রহমান, মোস্তাফিজুর রহমান, ডাক্তার শফিউল আলম, স্বপন কুমার, ওসমান গণি প্রমুখ। বক্তারা অবিলম্বে প্রকৃত খুনিদের গ্রেপ্তারপূর্বক শাস্তির দাবি জানান। এছাড়াও সোনারায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠন এমপি লিটনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ও খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ইউপি চেয়ারম্যান বদিরুল আহসান সেলিমের নেতৃত্বে প্রতিবাদ সভা, বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন।