আলী হাসান তৈয়ব
লেখক
সময়ের জনপ্রিয় এক বক্তা। তাকে কেউ বলেন, বাংলার জাকির নায়েক, কেউ দ্বিতীয় জাকির নায়েক। অবশ্য তিনি নিজেকে বলেছেন, ‘ভার্সিটির মাল’। সপ্তাহ দুয়েক আগে চাঁদপুর সফর থেকে আসার সময় তার সঙ্গে আমার দেখা। মধ্য রাতে চা খেতে নেমেছি আমি আর মুফতি মাসউদুল করিম সাহেব চালককে চাঙ্গা রাখতে। স্টলের দিকে যেতেই দেখি তিনিও সেখানে গরম জলে গলা ভেজাচ্ছেন বহরসহ। না দেখা মানুষের অপ্রত্যাশিত সাক্ষাতে খানিকটা বিস্ময়ভরা কণ্ঠে আমি বললাম, ‘ভাই আপনিই কি সেই মুফতি ... সাহেব? তিনি সহাস্যে বললেন, ‘জী ভাই। তবে মুফতি ছাড়া। আমি মুফতি নই।’ তাঁর উত্তরে আমি খুশি হয়েছিলাম।
আজ ইউটিউবে তার ওয়াজের ভিডিও দেখলাম। তিনি সোফায় বসা। উপস্থাপক তার সম্পর্কে বলছেন, ‘এখন আপনাদের সামনে আলোচনা করবেন ... .... .... হাফেজ মাওলানা মুফতি ... সাহেব।
দুই.
দু’বছর আগের কথা। পঞ্চগড়ের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে দাওয়াতি সফর। গিয়ে দেখি পোস্টারে লেখা ‘মুফতি আলী হাসান তৈয়ব’! উপস্থাপক ঘোষণাতেও উচ্চারণ করলেন শব্দটি। আমি অবাক এবং বিরক্ত হলাম। আলোচনার শুরুতেই সবিনয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে বললাম, ‘আমার প্রতি সুধারণার জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ। নগণ্য বান্দার ফতোয়া বেশ পড়াশোনা ও ঘাঁটাঘাঁটি করা হয়, তবে সে একাডেমিক মুফতি নয়।’
আচ্ছা, আলেম-মাওলানা শব্দগুলো কি কারও ন্যূনতম পরিচয়ের জন্য যথেষ্ট নয়? মুফতি না হলে কি আলেমরা কুরআন-হাদিস জানেন না? সাধারণ মানুষের কাছে বড় আলেম বোঝাতেই যখন মুফতি শব্দ বলছেন, প্রকারান্তরে আপনি আলেম শব্দের সম্মানহানি করছেন। আপনিই সমাজে চালু করছেন মুফতি লকব ছাড়া কেউ আলেমই নন। আর আপনিও যখন মুফতি শব্দে খুব পুলকিত ও সম্মানিত বোধ করছেন মুফতি না হয়ে, আপনি নিজেও নিজের সম্মানহানি করছেন অজান্তেই।
দুঃজনক সত্য হলো, ওয়াজ মাহফিলের সুবাদে এখন লকব আর উপাধিগুলো একেবারে সস্তা হয়ে গেছে। বিদেশের মাটিতে জীবনে পা না রেখেও কেউ হচ্ছেন ‘আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন’। মাহফিলটি আয়োজিত হচ্ছে প্রথমবারের মতো তবুও তা হচ্ছে ‘ঐতিহাসিক’ কিংবা ‘ঐতিহ্যবাহী’। সন্তানের বাবাই হননি এমনকি বিয়ে পর্যন্ত করেননি তাতেই তিনি ‘আল্লামা’। আর ইফতা পড়া দূরের কথা হাদিসের কিতাব না পড়েও হচ্ছেন ‘মুফতি’। যাদের প্রতিবাদ করার কথা তারা তা করছেন না। কেউ কেউ নানা অজুহাতে সাফাইও গাইছেন।
আসলে উপস্থাপক ও ওয়ায়েজরাই পারেন এর কার্যকর প্রতিকার করতে। তারাই তৎক্ষণাৎ সংশোধনী দেবেন কেউ বাড়িয়ে বললে। রাসূল সা. যেখানে হাদিসে সুস্পষ্ট নিষেধ করেছেন তাঁর প্রশংসায় বাড়িয়ে বলতে। আর আপনি আমি কেন নিজের বাড়িয়ে বলা প্রশংসা হালাল করতে চাই ‘সুধারণা’, ‘দোয়া’ কিংবা ‘মাজায’ বলে চালিয়ে দিয়ে?
আরআর