মাজিদা রিফা
পৃথিবীর শুরুর দিকে পৃথিবীর বুকে এক সম্ভ্রান্ত জাতির বসবাস ছিলো। আনন্দ, উচ্ছ্বলতা, সম্পদ, কোনোকিছুই তাদের কম ছিলো না! সেই সুখী জাতিকে একদিন মহান আল্লাহপাক পানিতে ডুবিয়ে ধ্বংস করে দিলেন। পৃথিবীর বুক থেকে একদম মুছে ফেললেন!
-কেন?
-কারণ তারা মূর্তিপূজা করতো এবং এই ব্যাপারে যিনি নিষেধ করতেন, তাকে নিয়ে হাসাহাসি করতো!
আরেক দেশে আরেক জাতির ঘরদুয়ার, রাস্তাঘাট, চায়ের দোকান, গলির মোড়ের জটলাসহ পুরো জমিনটাকে পৃথিবী থেকে উপড়ে শূন্যে তুলে আনলেন আল্লাহর ফেরেশতারা! ভয়ে আতঙ্কে চিৎকার করতে লাগলো মানুষগুলো! ফেরেশতারা তাদের জমিনকে এমনভাবে আবার পৃথিবীতে নিক্ষেপ করলেন যে সেখানে জমিনের কোনো চিহ্নই রইলো না। মৃত সাগরে পরিণত হলো মানুষের কৃত্রিম আনন্দের আবাসস্থল। আর মানুষগুলো হলো চিরকালের জন্য যন্ত্রণাপ্রাপ্ত! চিরজাহান্নামী।
-কেন?
-সেই জাতি চূড়ান্ত অশ্লীলতায় নিমজ্জিত ছিলো! ছেলেমেয়েতে অবাধ মেলামেশা ছিলো, জড়াজড়ি, ধরাধরির বিধি নিষেধ ছিল না।
শিরক, মূর্তিপূজা ও অবাধ্যতার কারণে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার এরকম আরো কয়েকটি উদাহরণ আছে। আল্লাহপাক আমাদের দয়া করেছেন, আমরা এক আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসী আলহামদুলিল্লাহ! কিন্তু আমরা কি আল্লাহপাকের ক্ষমার যোগ্য? আমরা যারা হিন্দি সিরিয়ালগুলো দেখি তারা কি ক্ষমার যোগ্য?
যে সিরিয়ালগুলোতো মূর্তির পূজা থাকে, মূর্তির কাছে অকাতরে প্রার্থনার দৃশ্য থাকে, আমরা যারা পাগলের মতো সেই সিরিয়ালগুলো দেখি, তারা কি ক্ষমার যোগ্য? আপনি হয়তো ভাবছেন, আপনি শুধু দেখছেন, কিন্তু না, আপনি শুধু দেখছেন না, আপনি এইসব সিরিয়াল দেখার মাধ্যমে মূর্তিপূজাকে নীরব সমর্থনও দিচ্ছেন! আপনার দেখার কারণে এইসব ঘৃণ্য সিরিয়ালের নির্মাতারা প্রচুর বিনিময় অর্জন করছে এবং তারা এরকম শতশত সিরিয়াল নির্মাণের সমর্থন পাচ্ছে!
আর অশ্লীলতা? অশ্লীলতা শুধু এখান থেকেই আসছে সেটা হয়তো না, কিন্তু সমাজের সাধারণ মানুষরা কী পরিমাণ এইসব সিরিয়ালে আক্রান্ত তা দেখলে মনে হবে এরা যা শেখে এখান থেকেই শেখে! এইসব সিরিয়ালে হিরোইনরা নাকি খুব ধার্মিক থাকে, ঘটনার মোড়ে মোড়ে তারা মূর্তির পূজা করে। প্রেমিকের জন্য তারা মানত করে।
আমাদের মেয়েদেরও অবস্থা তাই। মেয়েগুলো হিজাব পরছে, আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু হিজাব পরে আবার বয়ফ্রেন্ডের সাথে জড়াজড়ি করে ছবি তুলছে, এ কেমন দৃশ্য? আর হিজাবী ছাড়াও যেসব মুসলিমরা আছে তাদের অবস্থা দেখলে বুঝা যায় সমাজের অবস্থা কী যে ভয়ঙ্কর!
ফেসবুকের গার্লস গ্রুপগুলোতে যে পোস্টগুলো আসে সেগুলো দেখলে নিজেকেও আসলে দোষী মনে হয়।
আমরা কোথায় চলে গেছি! সিরিয়ালগুলোতে কী হচ্ছে না হচ্ছে সেটা নিয়ে মেয়েদের মন খারাপ। ইনডিয়ান স্টাররা কী করছে না করছে সেটা নিয়ে অকারণ আলাপ। এই অস্থায়ী স্টারদের যে কী পরিমাণ তারা পছন্দ করে, কী যে ক্রেইজি ফ্যান তা না দেখলে বিশ্বাস হয় না। অথচ একজন মানুষের তাদের সাথেই কেয়ামত হবে যাদের সে ভালোবাসে, পছন্দ করে। যদি এইসব অমুসলিম আর্টিস্টদের সাথে একজন মুসলিমের কেয়ামত হয়, কী ভয়ঙ্কর আজাবপ্রাপ্তই না হতে পারে মুসলিম মানুষটা!
আসলে আমাদের এইসব সিরিয়াল এতবেশি আমাদের মনে ছায়া ফেলেছে যে, এগুলোকে আমাদের আর পাপ বলে মনে হয় না। অথচ এই সিরিয়ালগুলো এমন ট্যাবলেট, সমাজে শুধু অশ্লীলতা আর অবাধ্যতাই নয়, ধীরে ধীরে একদিন ভয়ঙ্কর আজাব ডেকে আনবে!
অথচ একজন মানুষের তাদের সাথেই কেয়ামত হবে যাদের সে ভালোবাসে, পছন্দ করে। যদি এইসব অমুসলিম আর্টিস্টদের সাথে একজন মুসলিমের কেয়ামত হয়, কী ভয়ঙ্কর আজাবপ্রাপ্তই না হতে পারে মুসলিম মানুষটা!
তাই আসুন, আমরা এসব পরিহার করি। হয়তো আপনি নিজে আক্রান্ত নন। তাহলে আপনার চেনা কেউ না কেউ, যে আক্রান্ত; তাদের বলি। তাদের হাতে এসবের বিপরীতে বই তুলে দেই, অথবা তাদের এমনকিছু করতে উৎসাহী করি যা তাদের কাজে দিবে অন্তত দুনিয়াতে।
যা কোনোই উপকারের নয়, কী হবে এসব দেখে? আচ্ছা, বেশিদিন নয়, মাত্র চারবছর আগে আপনি কী দেখেছেন মনে আছে? দুইবছর আগে? তার স্বাদ কি এখনো মনে লেগে আছে? আমার মনে হয় উত্তরটা, 'না।' অথচ দেখুন, পাপটা আপনার আমলনামায় লেখা হয়ে গেছে। ব্যাধিগ্রস্ত অন্তরটাও আপনার কাছেই রয়ে গেছে।
মাত্র কিছুদিন পরেই আপনার কাছে আসছে সেই জীবন, যেখানে না আপনার এইসব স্বাদ থাকবে, আর না থাকবে এই সময়। সেদিন নিজের অন্তরের অন্ধকার দেখে নিজেই চমকে উঠবেন না। তাই প্লিজ চেষ্টা করুন। ধীরে ধীরে ছেড়ে দিন। টিভির সামনে যাওয়ার আগে ভাবুন। নিশ্চয়ই জানবেন, ওটা আপনি নয়, আপনার অন্তরে ওটা শয়তান। বিগত জাতির মতো শয়তানকে গ্রহণ করবেন না। নিজেই নিজের উপর লাঞ্চনার মৃত্যু ডেকে আনবেন না।
এএম