আওয়ার ইসলাম: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী হত্যাকাণ্ড, বহু নারীকে ধর্ষণ, অমানবিক নির্যাতন, বহু গ্রাম ও বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়ার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের নতুন এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
সোমবার ভোরে সংস্থাটির প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গা মুসলমান বিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী এসকল বেআইনি কাজ করছে। সংস্থাটির মতে, যা মানবতাবিরোধী অপরাধের শামীল হতে পারে। খবর বিবিসি।
গত দু'মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা রাখাইন (আরাকান) রাজ্যে রোহিঙ্গাবিরোধী সেনা অভিযানে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক এ মানবাধিকার সংস্থাটি সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মিয়ানমার ও বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সাক্ষাৎকার, ভিডিও, ফটোর ভিত্তিতে এবং স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া চিত্র বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির সেনাবাহিনী রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিম মহিলা ও কিশোরীদের ধর্ষণ এবং যৌন নিপীড়ন করছে। এমন কয়েকজন মহিলার সাক্ষাৎকারও নেয়া কথা জানিয়েছ সংস্থাটি।
উদাহরণ হিসেবে ৩২ বছর বয়সের এক নারীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যার ভাষ্য, তাকে ধরে নিয়ে একটি ধানক্ষেতে তিন জন সেনাসদস্য উপর্যুপরি ধর্ষণ করেছে।
অ্যামনেস্টি তাদের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করেছেন, রাখাইনে বহু গ্রাম ও বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। হত্যা করা হয়েছে বহুসংখ্যক লোককে।
এছাড়া রয়েছে নির্বিচার গ্রেফতারের অভিযোগ। গ্রেফতারের সময় রোহিঙ্গাদেরকে নির্দয়ভাবে পেটানো হয়। এছাড়া গ্রেফতারের পর কারাগারগুলোতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তারা। এমন নজিরও রয়েছে বলে জানায় সংস্থাটি।
অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রেফতার অবস্থায় ছয়জন বন্দী নিহতের খবর মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমই স্বীকার করেছে।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বেসামরিক রোহিঙ্গাদেরকে অনুভূতিহীন ও নিয়মতান্ত্রিক সহিংসতার লক্ষ্যে পরিণত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণপূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকা বিষয়ক পরিচালক রাফেন্দি ডিজামিন।
তিনি বলেন, একটি সমন্বিত শাস্তির অংশ হিসেবে সেখানে পুরুষ, মহিলা, শিশু, পুরো পরিবার, পুরো গ্রামের ওপর হামলা হয়েছে এবং নির্যাতন করা হচ্ছে।
তার মতে, অং সাং সুচি এই ইস্যুতে তার রাজনৈতিক এবং নৈতিক দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
উদাহরণ হিসেবে অ্যামনেস্টির সর্বশেষ প্রতিবেদনটি গত ১২ নভেম্বরের একটি ঘটনার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। যেখানে বলা হয়, মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইন প্রদেশের উত্তরাঞ্চলে দুটি হেলিকপ্টার গানশিপ থেকে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। এসময় আতংকগ্রস্থ গ্রামবাসী পালাতে থাকে। হামলায় অজ্ঞাত সংখ্যক মানুষ মারা যায়।
এই সেনা অভিযানে আশিজনের মতো মানুষ নিহত হয়েছে বলে নিরাপত্তা বাহিনী স্বীকার করেছে।
তবে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে নিহতের সংখ্যা অনেক বেশী বলে মনে করছে তারা। অবশ্য কোনো সংখ্যা নিরূপণ করতে পারেনি সংস্থাটি।
মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর মতে তারা 'বাঙালী' দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। যারা গত ৯ অক্টোবর পুলিশের একটি তল্লাশী চৌকিতে হামলা চালিয়েছে বলে তাদের অভিযোগ।
আরআর