শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


কুরআন শিখিয়েই যিনি বিশ্বটাকে পাল্টাতে চান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ওয়ালিউল্লাহ সিরাজ
প্রতিবেদক, আওয়ার ইসলাম

noman_ali_khan

মানুষকে কেবল কুরআন শিক্ষা দিয়েই যিনি বিশ্বকে পরিবর্তন করে দিতে চান, তিনি উস্তাদ নোমান আলী খান। কুআনের চমৎকার শৈল্পিক সৌন্দর্য উপস্থাপনার জন্য তিনি বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বের মুসলিম তরুণ প্রজন্মের কাছে বনে গেছেন এক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। বিশ্বের অগণিত মুসলিম তরুণ আজ তাঁকে আইডল হিসাবে কল্পনা করেন।

নোমান আলী খান জন্মগ্রহণ করেন জার্মানির রাজধানী বার্লিন শহরে। তাঁর মাতৃভাষা জার্মানি। কিন্তু শিশু নোমান সেখানে ছয় মাসও থাকেননি। তাঁর বাবা পাকিস্তান দূতাবাসে কাজ করতেন বলে পরিবারসহ ছয় মাস বয়সে তাঁকে পাকিস্তানে চলে আসতে হয়। এখানেও তাঁর পরিবার দুমাসের বেশি থাকেননি; চলে যান সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে।

তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় রিয়াদে, একটি পাকিস্তানি উর্দু মিডিয়াম স্কুলে। ১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ছয় বছর তাঁর পরিবার রিয়াদে অবস্থান করেন। এরপর তাঁরা চলে যান আমেরিকায়। সেখানে তিনি খ্রিস্টানদের পরিচালিত একটি হাইস্কুলে ভর্তি হন। সেখানে তাঁর বন্ধুদের আচার-আচরণের মধ্যে নৈতিকতা ও ধর্মের কোনো ছোঁয়া ছিল না। ফলে তিনিও ধীরে ধীরে তাঁদের আচার-আচরণে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। তাঁকে বাধা দেয়ার কেউ ছিল না; এমনকি তাঁর পরিবারও না।

একসময় তাঁর মাঝে প্রবল অপরাধবোধ জেগে উঠে। কিন্তু কিছুই করার ছিল না। হয় তাঁকে ধর্ম ত্যাগ করতে হবে, না হয় স্কুল ত্যাগ করতে হবে। দুর্ভাগ্য, অন্য কোথাও ভালো স্কুল নেই বলে পরিবার তাঁকে স্কুল ত্যাগ করতে দিল না।

স্কুল শেষে তিনি কলেজে ভর্তি হলেন। আগের মতই বন্ধুদের সাথে চলাফেরা, সবকিছু। এবার তিনি অবিশ্বাসীও হতে শুরু করলেন। প্রায় দুবছর তিনি নাস্তিকতার চর্চা করেন। ইসলাম থেকে তখন তিনি অনেক অনেক দূরে।

Image result for nouman ali khan hajj

তারপর অলৌকিক এক ক্ষমতায় নোমান আলী খান ইসলামে ফিরে এলেন আগের চেয়ে শতগুণ গতিতে। তিনি আমেরিকান মুসলিম স্টুডেন্ট এ্যাসোসিয়েশন ভর্তি হওয়ার পর সেখানকার দুজন সদস্যের প্রচেষ্টায় আবার ইসলামে ফিরে আসেন। তখন তিনি ভালোভাবে কুরআন বোঝার জন্যে গুগল সার্চ করতে লাগলেন। ইন্টারনেটে ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রচুর লেকচার পেলেন। কিন্তু কুআনের ধারাবাহিক কোনো আলোচনা তখনো তিনি পাননি।

কুরআনের ধারাবাহিক আলোচনা প্রথম তিনি শুনেন তাঁর মহল্লার একটি মসজিদে। রমজান মাস উপলক্ষে সে মসজিদে পাকিস্তান থেকে একজন আলেম আসেন। তাঁর নাম ছিল ইমাম ডক্টর আব্দুস সামি। তিনি প্রতিদিন এক পারা করে কুরআনের অনুবাদ এবং সংক্ষিপ্ত তাফসির করতেন। নোমান আলী খান তার সকল আলোচনায় অংশ নেন। এভাবে তিনি সম্পূর্ণ কুরআনের তাফসির শুনে শেষ করেন।

কুরআনের এই ধারাবাহিক আলোচনা শুনে তাঁর কাছে মনে হলো, তিনি এবারই প্রথম কুরআন শুনেছেন। এতে কুরআনের প্রতি তাঁর ভীষণ আগ্রহ জন্মে। তিনি তাঁর উস্তাদ ডক্টর আব্দুস সামিকে বলেন, ‘আপনি যেভাবে তাফসির করেছেন, আমিও সেভাবে তাফসির করতে চাই। ডক্টর আব্দুস সামি তাঁকে বললেন, ‘তাহলে আগে আরবি শেখো।

নোমান আলী খান বললেন, ‘আমি থাকি নিউইয়র্কে, সারাদিন কাজ থাকে, কলেজে যেতে হয়, আমি কিভাবে সৌদি আরব গিয়ে আরবি শিখব?’

ডক্টর আব্দুস সামি তাঁকে বললেন, ‘তুমি আগামী সপ্তাহ থেকে এ মসজিদে আমার আরবি ক্লাসে আসতে পার’।

কথা মতো পরের সপ্তাহে নোমান আলী খান ডক্টর আব্দুস সামির কাছে আরবি ব্যাকরণ পড়তে যান। ডক্টর আব্দুস সামি তাঁকে ব্যাকরণের কিছু নিয়ম-কানুন শিখিয়ে দেন। এরপর থেকে তিনি কিছু কিছু আরবি বুঝতে শুরু করেন এবং নিজেই কুরআনের স্বাদ পেতে থাকেন। নিজেকে নিজে বারবার বাধ্য করলেন – যেভাবেই হোক আরবি শিখতে হবে, আরবি বুঝতে হবে।

Image result for nouman ali khan hajj

মানুষ যা চায়, তা পায়। আল্লাহ তাঁর ইচ্ছা পূরণ করেছেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নোমান আলী খান আরবি ভাষা ও কুরআনের ওপর অসাধারণ জ্ঞান ও পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। চমৎকার উপস্থাপনা, যুক্তিযুক্ত কথা, সহজ-সরল পদ্ধতির কারণে পৃথিবীর নানা প্রান্তের মানুষ আজ কুরআন শেখার জন্যে তাঁর কাছে ভিড় করছে।

কেবল অনলাইনে বর্তমানে ১০ হাজারেরও বেশি তরুণ তাঁর কাছে কুরআন ও আরবি ভাষা শিখছে। অনেকে অভিযোগ করেন– আধুনিক তরুণরা কুরআন পড়ে না, এরা আরবি পড়তে চায় না। নোমান আলী খান এমন অভিযোগ করেন না। তাঁর কথা হলো– ‘আমরা যদি তরুণদের জন্যে আরবি ভাষাকে সহজ করে দিতে পারতাম, অবশ্যই তারা আরবি শিখত। আমরা যদি কুরআনকে তাদের কাছে সহজ ভাষায় পৌঁছে দিতে পারতাম, অবশ্যই তারা তা গ্রহণ করত। কারণ ইসলাম মানুষের স্বভাবজাত ধর্ম।’

তিনি বলেন, সবাই বলে, আরবি ভাষা ও কুরআন শেখার জন্যে আমার কাছে এসো; কিন্তু আমি নিজেই কুরআন শেখানোর জন্যে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে উপস্থিত হতে চাই।

মুসলিম উম্মাহর ব্যাপারে অন্যরা যেখানে কেবল অভিযোগ আর সমস্যা চিহ্নিত করে, সেখানে নোমান আলী দেখেন সম্ভাবনা ও স্বপ্নের দ্বার। তিনি তরুণদের মাঝে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা দেখতে পান। উম্মাহর ৭০ ভাগ তরুণকে যদি কেবল সঠিক অনুপ্রেরণা দেয়া যায়, তাঁর বিশ্বাস, বিশ্বের চেহারাটাই পাল্টে যাবে। আল-কুরআনকে দর্শকদের সামনে জীবন্ত করে তোলার ক্ষেত্রে সত্যিই নোমান আলী খান এক অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব এবং একটি অসাধারণ প্রতিষ্ঠান।

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ