আমিন আশরাফ
এ সেই আলেপ্পো। এ শহরের মুসলমানদের ওপর খ্রিস্টানদের বর্বরতা থেকে উদ্ধার করতে সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী জীবনবাজী রেখেছিলেন। এ শহরের প্রতিটি পরতে পরতে রয়েছে আলেপ্পোবাসীদের জীবনশক্তি, প্রাণের স্পন্দন। এ শহরটিকে ইউনেস্কো ১৯৮৬ সালে বিশ্বের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দেয়।
২০০৬ সালে এ শহরে ২৩ লাখ লোক বাস করতো। সে সময় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ আনতে শহরে একটি বাণিজ্য কেন্দ্র তৈরি করা হয়। নির্মাণ করা হয় বড় শপিং মলও। সিরিয়ার সবচেয়ে বড় প্রাচীনতম হোটেল ব্রেইন ২০১৪ থেকে বন্ধ। প্রায় দুবছর ধরে হোটেলটি একটি ধ্বংসস্তুপের সাক্ষী হয়ে আছে। এ দুবছর হোটেলটিতে কেউ থাকতে আসেনি। আলেপ্পো শহরটি সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। আলেপ্পো একটা সময় এমন ছিলো না। ছিল সুখ-সমৃদ্ধিতে মাখামাখিতে।
দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে এ শহরটাতে বিদ্রোহী এবং বাশার আসাদের অনুগত বাহিনীর ফ্রন্ট লাইন হিসেবে ব্যবহার হয়েছে। এ বছর পাঁচটিতে প্রতিদিনই সিরিয়ার এ আলেপ্পো শহর কেঁপে উঠেছে মুহুর্মুহু‚ বোমা বিস্ফোরণে। মানুষ প্রতিদিন ভোরে ওঠতো উপরওয়ালাকে ধন্যবাদ দিয়ে। কারণ এখনও সে বেঁচে আছে। কেউ কেউ তো বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াকেই ভালো মনে করতো। কারণ মরে গেলে তো তাঁকে আর আতঙ্কে কাটাতে হবে না। আলেপ্পোবাসী সে সময় রাস্তায় বের হলেও সে জীবন নিয়ে ঘরে ফিরে যাওয়াকে খুবই অস্বাভাবিক মনে করতো। কিন্তু চলমান যুদ্ধের আগে এ শহরটি ছিল শিল্পের রাজধানী। তখন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ এ শহরটিকে ছুঁতে যাচ্ছিল। তবে বাশার আসাদের ক্ষমতার লিপ্সা তা আর হতে দেয়নি।
যুদ্ধের প্রচণ্ডতায় শহরের এক চতুর্থাংশের দৃশ্য পুরোপৃরি বদলে যায়। গৃহযুদ্ধে দুই লাখ শহরবাসী এ শহরে আটকে যায়। শত শত লোক এ শহর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এ শহর থেকেই আয়লানের বাবা-মা, ভাইবোন ও পাড়া-প্রতিবেশি পালিয়ে ছিল জীবন বাঁচাতে। কেউ জীবন বাঁচাতে পেরে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। কেউবা যুদ্ধের ধ্বংস ও বিধ্বস্তা নিয়ে আজো বেঁচে আছে। যুদ্ধ মানবতার এ আকাশ ধ্বংস ছাড়া আর কিছ্ইু দিতে পারে না। আয়লানরা যুদ্ধে না বাঁচতে পারলেও তারা সব সময় যুদ্ধের ঘোর বিরোধী। আয়লানরা চায় পৃথিবীতে শত শত আয়লানকে যেন গৃহযুদ্ধের কারণে নিজ দেশে ছেড়ে পরদেশে পাড়ি জমানোর সময় যেন সাগরে প্রাণ দিতে না হয়।
আলে্েপ্পা শহরটির ছবিটি দেখলে মনে হবে আপনার শহরটির ওপর দিয়ে বয়ে গেছে স্মরণকালের সবচেয়ে কিয়ামতের বিভীষিকা। কিন্তু না, আপনি চাইলে সবটুকু ধ্বংস আপনি অনুভব করতে পারবেন না। আপনি যতোটুকু দেখে অনুভব করবেন তার চেয়ে বেশি ভয়াবহতার বিপন্ন সাক্ষী এ আলেপ্পো। আপনি যদি পাঁচ আগেকার ছবি আর এখনকার ছবি দেখেন তাহলে আপনি দুটি ফ্রন্টের ক্ষমতার লড়াইয়ের একটি ক্ষুদ্রতম উদাহরণ পাবেন। যে শহরটিতে ধ্বংস ঢেকে আনতে বাশার আসাদের অনুগত বাহিনীর সঙ্গে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে আফগানিস্তানের এক সময়ের পরাজিত শক্তি রাশিয়া ও কট্রর শিয়া গোষ্টী ইরানও। ক্ষমতা অক্ষুন্ন রাখতে ওরা হেন কাজ নেই যে, করে নাই।
সৌন্দর্যের রাজধানী আলেপ্পোতে আজ একটি হাসপাতালও আস্ত নেই। ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে শহরের স্কুল-কলেজগুলোও। মাটির সঙ্গে মিশে গেছে শহরের বাজার ও এবং শপিংমলগুলো। বড় বড় টাওয়ারগুলোর খুবই কমই আস্ত আছে। সোনালি যুগে এ শহরটি ধন্য হয়েছে মুসলিম বিজয়ী বীরদের অশ্বের খুড়ে।
আমরা চাই আবারও আলেপ্পোতে শান্তি ফিরে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি। ফিরে আসুক তার আগের প্রাণচাঞ্চল্যতা। পাখিদের কলকাকলিতে ভরে উঠুক আলেপ্পোর সবুজ উদ্যান। মুসলমানরা ফিরে পাক তাদের পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্যময় শহর আলেপ্পো। সঞ্জীবনী শক্তিতে জেগে উঠুক সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর স্মৃতিধন্য আলেপ্পো।
সূত্র: ডন নিউজ উর্দু