۞ মাহমুদা খাতুন তামান্না
বাবা নওগাঁ থেকে ঢাকায় এসেছেন। মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এসেছেন। রোহিঙ্গাদের ব্যথা-বেদনা বাবাকে পীড়া দিত সব সময়। পীর সাহেব চরমোনাইয়ের আহ্বানে বাবা আজ পথে। রাস্তায়। লংমার্চে। রওনা করেছেন মিয়ানমারের পথে। কথা ছিল ঢাকায় বাবা-মেয়ের এক পলক দেখা হবে। কথা হবে।
রোহিঙ্গা বোনের কষ্ট যাতনার দগদগা গল্পে বাবার হৃদয়ে আরও প্রতিবাদের আগুন জ্বালিয়ে দেব। হলো না। বাবার সঙ্গে এখনও দেখা হলো না। ঢাকার কল্যাণপুরের বাসায় আসবে না। আমার বাসায় আসবার মত সময় হলো না বাবার। দেখা হলো এখনও। বাবা চলে গেলেন। প্রেসক্লাবের বদলে কাজলায় জমায়েত। তাই কাজলায় গেলেন।
ফোনে ফোনে আবেগী কণ্ঠে বাবা বললেন, তোর মতো হাজারও মেয়ের ইজ্জত বাঁচাতে মা বের হয়েছি। তোর সঙ্গে দেখা হয়নি তো কি হয়ছে?
কত মেয়ে, কতো মা আজ ঘর-বাড়ি ছাড়া তুমি জান? তুমি জান মজলুম মানুষের আহাজারি আল্লাহর আরশ কাঁপছে? নিস্পাপ শিশুরা খাবার পানির তাড়নায় চিৎকার করতে করতে মারা যাচ্ছে মায়ের সামনে?
মারে তুমি কি জান-লাশ দাফনের মাটি পাচ্ছে না রোহিঙ্গা মা বোন? এমন আরও অনেক কথা বলেই বাবা প্রায় কেঁদে ওঠলেন।
আমি বললাম, বাবা যাও, আমার বোনের ইজ্জত বাঁচাতে তুমি নাফ নদীতে ঝাপ দাও।
পল্টনে ইসলামী আন্দোলনের প্রতিবাদ সমাবেশ চলছে
লংমার্চে পুলিশের বাধা; পল্টনে সমাবেশের ঘোষণা
আমার মনে কোন ব্যথা নেই। আজ না হয় কাল তোমার আমার দেখা হবে। মায়ানমারে তো আমিই মরছি বাবা।
আমার মতো মেয়েরাই মরছে। সন্তানের লাশ মাথায় নিয়ে বাবা আহাজারি করছে। আমার মুহাম্মাদ মরছে! দুধের অভাবে ধুকে ধুকে ঘুঙাচ্ছে রোহিঙ্গা শিশু।
তাহিয়ার রক্ত ঝরছে! তাহিয়ারা নদীর বুকে রাতের পর রাত অনাহারে থাকছে। কঙ্কাল হয়ে যাচ্ছে খাদ্যের অভাবে। কতো শিশু মায়ের সামনে জ্বলে পুড়ে ছাই হচ্ছে। যাও বাবা আমার মনে কোন ব্যথা নেই। কষ্ট নেই।
যাতনা নেই। তুমি সফল হয়ে ফিরলেই বাবা শান্তি পাবো। আমার রোহিঙ্গা বোনের আর্তচিৎকার বন্ধ হলেই ভেজা চোখ শুকিয়ে যাবে। যাও বাবা যাও।
কেয়ামতের মাঠে আল্লাহর কাছে বলবো- আমি রোহিঙ্গাবোনের আহাজারি শোনেছি। বাবাকে ঘর থেকে বিদায় করে দিয়েছি- আমার বোনের মুক্তির জন্য!
আআ