۞ মুনির আহমদ
বৃটিশ শাসনামলের প্রায় ২০০ বছরের ইতিহাস সাক্ষ্য বহন করছে যে, ভারতবর্ষের সর্ব-জনসাধারণ পরাধীনতার জাঁতাকল থেকে বেরিয়ে আসার জন্য জীবনবাজি রেখে সংগ্রাম করেছিল। এ সংগ্রামের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতার পতাকাতলে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনে ধর্মীয় সাধনার চূড়ান্ত সীমায় আরোহণ করা। কেবলমাত্র বৃটিশ গোলামির নাগপাশ থেকে বেরিয়ে আসাটাই এ সংগ্রামের উদ্দেশ্য ছিল না। একটা স্বাধীন দেশের নাগরিক সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অধিকার ভোগ করা থেকে বঞ্চিত হলে এ স্বাধীনতা আর পরাধীনতায় বিন্দুমাত্র পার্থক্য থাকে না, থাকতে পারে না।
১৯৪৭ সালে অখণ্ড ভারতবাসী বৃটিশ বেনিয়াদের এদেশ থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে নিতে বাধ্য করে। অভ্যুদয় ঘটে দু’টি স্বাধীন স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের। একটির নাম হয় পাকিস্তান অপরটির নাম ভারত। সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতিসত্তার প্রতি লক্ষ্য রেখেই দু’টি রাষ্ট্রের ভৌগোলিক সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল। মুসলমানদের ঈমান আমল সংরক্ষণের দাবিতেই জন্ম হয়েছিল পাকিস্তানের।
তিক্ত হলেও সত্য যে, তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকবর্গ এসবের কোন তোয়াক্কাই করেনি। দ্বীনদার মুসলমানদের সমর্থন কুড়ানোর জন্য ফাঁকিবাজি ধোঁকাবাজির জাল ছড়িয়ে কেবল শাসন ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখতে চেয়েছিল। ইসলাম ও মুসলমানদের ঈমান আমল সংরক্ষণের পরিবর্তে ইসলামের উপর ক্ষুর চালাতে এতটুকু দ্বিধাবোধ করেনি তারা। আল্লাহর আইন রদ করে মানবাধিকারের নামে মনগড়া আইন প্রণয়ন করতেও কাঁপেনি তাদের অন্তর। আল্লাহর আইনে দেখেছিল তারা সম্মানের হানী, ইজ্জতের অবমাননা। তাই রচনা করে তাদের মতো করে মনগড়া আইন। আল্লাহর আইনে দেখেছিল তারা অধিকার খর্বতা। তাই অধিকার প্রতিষ্ঠার নামে কুরআনের বিপরীত আইন চালু করে সেসব জ্ঞানপাপী শাসকবর্গ।
এহেন দুর্দিনে উলামা-মাশায়েখগণ সভা-সমাবেশ ও অন্যান্য আন্দোলনের মাধ্যমে তাদেরকে বার বার হুঁশিয়ার করেও সুপথে আনতে পারেননি। বুঝেও না বোঝার ভান করে যারা, শুনেও না শোনার ভান করে যারা, তাদেরকে কে বোঝাতে পারে? স্বাধীনতা-পূর্ব তৎকালীন পাকিস্তান যখন নালায়েক শাসকবর্গের আত্মম্ভরিতা ও জুলুম-বর্বরতা এবং আল্লাহর আইন অবমাননায় নাপাক হয়ে ওঠে, তখনই তাতে বিস্ফোরণ ঘটে। দ্বি-খণ্ডিত হয়ে যায় পাকিস্তান নামের শক্তিশালী মুসলিম দেশটি। ১৯৭১ সালে জন্ম হয় মুসলিম প্রধান আরেকটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের, যা আজ স্বাধীন বাংলাদেশ নামে পরিচিত।
পাকিস্তান নামের স্বাধীন সার্বভৌম দেশটির যে কারণে অঙ্গহানি তথা দ্বি-খণ্ডিত হতে বাধ্য হয়েছিল, তা থেকে শিক্ষাগ্রহণ করাটাই হতো আমাদের দেশবাসী এবং শাসক শ্রেণির জন্য বুদ্ধিমত্তার কাজ। আল্লাহর আইনের পরিপন্থী সকল গর্হিত কর্মকাণ্ড পরিহার করা, মজলুমের খবরগিরি করা, হক্বদারের হক্ব বুঝিয়ে দেয়া, সকল জাতি ও সকল ধর্মাবলম্বীদের স্ব-স্ব ধর্ম পালনের এক নিবিড় পরিবেশ সৃষ্টি করা, ৯০% মুসলিম জন অধ্যুষিত দেশটিকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা, সংখ্যালঘু অমুসলিমদের জন্য নিরাপত্তা বিধান করা, ইসলাম ও মুসলমানদের সকল বিজাতীয় আগ্রাসনের হাত থেকে হিফাজত করে সর্বত্র ইনসাফ প্রতিষ্ঠাই ছিল আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মৌলিক দাবি ও লক্ষ্য উদ্দেশ্য। বিজয়ের ৪৫ বছর পার হতে চলেছে, কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সেই মহান লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের কতটুকু অর্জিত হয়েছে?
স্বাধীনতা-পূর্ব তৎকালীন পাকিস্তান যখন নালায়েক শাসকবর্গের আত্মম্ভরিতা ও জুলুম-বর্বরতা এবং আল্লাহর আইন অবমাননায় নাপাক হয়ে ওঠে, তখনই তাতে বিস্ফোরণ ঘটে। দ্বি-খণ্ডিত হয়ে যায় পাকিস্তান নামের শক্তিশালী মুসলিম দেশটি। ১৯৭১ সালে জন্ম হয় মুসলিম প্রধান আরেকটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের, যা আজ স্বাধীন বাংলাদেশ নামে পরিচিত।
কোন অমুসলমানের অধিকার খর্ব করার বিধান ইসলামি রাষ্ট্রের আদর্শের পরিপন্থী। ইসলামি আখলাক, তাহজিব-তামাদ্দুনের বিকল্প পথে শান্তি নামের সোনার হরিণটি তালাশ করা- পানি-শূন্য ট্যাংকি থেকে পানি আহরণের ব্যর্থ প্রচেষ্টারই শামিল। বিশ্ব পালনকর্তা যে পথে শান্তি রাখেননি, যে নৈতিকতায়, যে সমাজ ব্যবস্থায়, যে রাষ্ট্রনীতিতে মানব জাতির শান্তি সফলতা রাখেননি, স্থূলবুদ্ধির ঘূর্ণিপাকে আমাদের তথাকথিত বুদ্ধিজীবী ও শাসক শ্রেণি আজ তাতেই শান্তি খুঁজে বেড়াচ্ছে।
আমাদের এখনো সতর্ক হওয়ার সুযোগ আছে এবং সময় আছে। মানব রচিত ইজমে কস্মিনকালেও শান্তি ও সফলতার দ্বার প্রসারিত হবার নয় এবং প্রকৃত ইন্সাফ প্রতিষ্ঠা কখনো এতে সম্ভব নয়। বরং প্রসারিত দ্বার অতি শীঘ্রই রুদ্ধ হতে বাধ্য হবে। বিপর্যস্ত হবে দেশ ও জাতি, বিলীন হবে স্বাধীনতা ও স্বকীয়তা। দেশ ও মানবতার স্বার্থে, ইনসাফ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আল্লাহর দেয়া আইন ও বিধান-ই প্রকৃত সাফল্য বয়ে আনতে পারে।
দেশবাসী এবং আমাদের শাসক শ্রেণি যত দ্রুত এই কথাটা বুঝতে পারবে, তাতেই দেশ ও জাতি তথা সবার জন্য কল্যাণকর।
আরআর