ভারতের বিমানবাহিনীতে শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুশাসনের কারণেই দাড়ি রাখা যেতে পারে বলে এক রায়ে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
ইসলাম ধর্মের সঙ্গে দাড়ি রাখার কোনও সম্পর্ক আদালতের সামনে প্রমাণ করতে না পারায় আদালত বিমানবাহিনীর এক মুসলিম সদস্যকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছে।
মুহাম্মদ জুবায়ের নামে বিমানবাহিনীর এক কর্পোরালকে দাড়ি রাখার কারণে বরখাস্ত করেছিল ভারতীয় বিমানবাহিনী।
মি. জুবায়েরের দায়ের করা মামলাতেই বৃহস্পতিবার এই রায় দিয়েছেন ভারতের প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুরের নেতৃত্বাধীন একটি বেঞ্চ।
বিমানবাহিনী এক নির্দেশিকায় বলেছিল যে ২০০২ এর পহেলা জানুয়ারির আগে যেসব মুসলমান ব্যক্তি বিমানবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন দাড়ি-গোঁফ নিয়েই, কেবল তাঁরাই দাড়ি রাখতে পারেন। কিন্তু তার পরে বাহিনীতে যোগ দেওয়া কোনও মুসলিম ব্যক্তিকে দাড়ি রাখতে দেওয়া হবে না।
তবে শিখ ধর্মের অনুশাসনে যেহেতু দাড়ি, গোঁফ আর লম্বা চুল রাখা বাধ্যতামূলক, তাঁদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম বলবৎ করেনি বিমানবাহিনী।
ভারতীয় বিমানবাহিনীর নিয়মাবলীর ৪২৫ নম্বর ধারাতে বাহিনীর সদস্যদের চুল, দাড়ি, গোঁফ কীভাবে ছাঁটতে হবে, তা নিয়ে নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। সেখানেই ধর্মীয় অনুশাসনের কারণে ছাড় দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
এরপরে বেশ কয়েকবার ওই নিয়মাবলীর পরিমার্জন করেছে বিমানবাহিনী। সর্বশেষ পরিমার্জন করা হয় ২০০৩ সালে।
আবেদনকারী মি. জুবায়ের ২০০১ সালের ডিসেম্বরে বিমানবাহিনীতে যোগ দেন, আর ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে তিনি ইসলাম ধর্মের অনুসারী - এই যুক্তিতে দাড়ি রাখার অনুমতি চান।
সেই আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পরে পুনরায় দাড়ি রাখার আর্জি পেশ করেছিলেন মি. জুবায়ের।
তাঁকে এয়ার অফিসার কমান্ডিং ডেকে পাঠিয়ে বুঝিয়েছিলেন কেন তাঁকে দাড়ি রাখার অনুমতি দেওয়া নিয়ম বিরুদ্ধ। তবে সেই অফিসার একই সঙ্গে বিমানবাহিনীর সদর দপ্তরে দাড়ি রাখা-না রাখার নিয়মটি নিয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে পাঠান।
এরই পরে ছুটিতে চলে যান মুহাম্মদ জুবায়ের। আর যখন তিনি প্রায় দেড় মাস পরে কাজে যোগ দেন, তখন দেখা যায় যে তাঁর মুখে দাড়ি রয়েছে।
তাঁকে প্রথমে দাড়ি কেটে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হলেও পরে সাময়িকভাবে দাড়ি রাখার অনুমোদন দেন মি. জুবায়েরের সিনিয়ার অফিসার।
কিন্তু বিমানবাহিনীর সদর দপ্তর যখন আইনী ব্যাখ্যা পাঠায় যে ধর্মীয় কারণে যাঁরা দাড়ি রাখার অনুমতি পেতে পারেন, তাঁদের মধ্যে মি. জুবায়ের পড়েন না, তখনও নির্দেশ উপেক্ষা করেই তিনি দাড়ি কামিয়ে ফেলতে অস্বীকার করেন।
তখনই বরখাস্ত করা হয় মুহাম্মদ জুবায়েরকে।
বরখাস্ত হওয়ার নির্দেশের বিরুদ্ধে যে মামলা করেছিলেন মি. জুবায়ের, সেটা হাইকোর্ট হয়ে এসেছিল সর্বোচ্চ আদালতে।
সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে যে বিমানবাহিনীর মতো একটা সুশৃঙ্খল বাহিনীতে সমতা জারী রাখার উদ্দ্যেশেই দাড়ি গোঁফ রাখার যে নিয়ম জারী আছে, সেটা সবাইকেই মানতে হবে। ওই নিয়ম কোনও নির্দিষ্ট ধর্মে বিশ্বাসীদের প্রতি বৈষম্যের জন্য করা হয়নি।
সূত্র: বিবিসি