এ এস এম মাহমুদ হাসান
স্টাফ রিপোর্টার
[caption id="attachment_21215" align="aligncenter" width="772"] হবিগঞ্জের আজিমনগর এমদাদিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসায় বিজয়ের র্যালি[/caption]
আজ মহান বিজয় দিবস। ৪৫ বছর পূর্বে ১৯৭১ সনের এই দিনে বিজয় লাভ করে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কালজয়ী নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর অর্জিত হয় বাংলার ভ‚খন্ড। বিশ্ব মানচিত্রে স্থান করে করে এ মাতৃভ‚মি। স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মদানকারী ত্রিশ লক্ষ শহিদের বিনিময়ে অর্জিত এ বিজয়কে প্রতিবছর জাতীয়ভাবে পালন করা হয়। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণি পেশার মানুষ এ দিবসটিকে নানান আয়োজনে পালন করে থাকেন। এর ব্যতিক্রম নয় দেশের শীর্ষ শিক্ষাব্যবস্থাপক কওমি মাদরাসাসমূহ। শহর থেকে শহরে, গ্রাম থেকে গ্রামাঞ্চলে, অজপাড়া গাঁয়ের কওমি মাদরাসাসমূহেও থাকে নানা আয়োজন। দেশ মাতৃকার প্রেম-ভালোবাসা ও দেশের প্রতি অগাধ মমতা নিয়ে স্বাধীনতার চেতনা লালন করছে দেশের বৃহত্তর বিদ্যাপিঠ কওমি মাদরাসাগুলো। আওয়ার ইসলাম এর পক্ষ থেকে কওমি মাদরাসা সমূহের আজকের বিজয় দিবসের আয়োজন সম্পর্কে বিভিন্ন মাদরাসায় খোঁজ নেওয়া হয়। প্রায় সকল মাদরাসাগুলোই বিজয় দিবস উপলক্ষে একই ধরনের আয়োজন করেছে।
গোপালগঞ্জের গওহরডাঙ্গা মাদরাসা স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়ার অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। বিজয় দিবস উদযাপনে ছাত্রদের জন্য বিশেষ খাবার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছে।
[caption id="attachment_21216" align="aligncenter" width="762"] মাদীনাতুল উলূম হবিবপুর হাফিজিয়া মাদরাসায় ছিল আলোচনা সভা সুনামগঞ্জ[/caption]
ঢাকার দারুর রাশাদ, মিরপুরের জামেউল উলুম, মোহাম্মাদপুরের রাহমানিয়া মাদরাসা, ফরিদাবাদ মাদরাসা, মালিবাগ, লালবাগ, যাত্রাবাড়ী মাদরাসাসহ দেশের প্রায় সকল শীর্ষস্থানীয় মাদরাসাসমূহ জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে তরুণ প্রজন্মের ছাত্রদের নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করে।
চট্টগ্রামের পটিয়া মাদরাসা, হাটহাজারি মাদরাসা, মেখল মাদরাসাসহ ছোট বড় প্রায় সকল মাদরাসাই বিশেষ আলোচনা ও দোয়ার আয়োজন করেছে।
এছাড়া বিভিন্ন কওমি মাদরাসাসমূহ মহররম ও বিজয় দিবস উপলক্ষে দেয়ালিকা প্রকাশ, কুইজ প্রতিযোগিতা, বিনোদন অনুষ্ঠান, ছাত্রদের আবাসিক ও শিক্ষাভবন বিভিন্ন সাজে সজ্জিত করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বজয় দিবসকে কেন্দ্র করে কওমি মাদরাসাসমূহে ১৯৭১ সনে মুক্তিযুদ্ধের প্রয়োজনিয়তা, পকিস্তানি বাহিনীর শোষণ র্নিযাতন, পূর্ব পকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানি নাগরিকদের মাঝে ও সরকারি বাহিনীতে চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্য, অর্থনৈতিকভাবে বাঙালি জাতিকে নিষ্পেশিত করার সরকারি ক‚টকৌশল প্রেক্ষিতে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করার স্বপ্ন ও পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন করার ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ছাত্রদেরকে দেশপ্রেম, স্বাধীনতা রক্ষায় নিবেদিত কর্মী হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া স্বাধীনতা যুদ্ধে তৎকালীন আলেমদের স্বাধীনতার জন্য স্বশরীরে রণাঙ্গনে অংশগ্রহন ও স্বাধীনতার পক্ষে বিশেষ ভ‚মিকা রাখার ইতিহাসও আলোচনায় উঠে এসেছে।
[caption id="" align="alignnone" width="960"] রাওজাতুল ইসলাম চাক্তা কওমী মাদ্রাসায় বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা[/caption]
বিজয় দিবসের তাৎপর্য ও অর্জন নিয়ে জানতে চাইলে গওহরডাঙ্গা মাদরাসার আদব বিভাগের প্রধান মোস্তফা হোসাইন বলেন, ত্রিশ লক্ষ শহিদের বিনিময়ে অর্জিত এ বাংলাদেশ আল্লাহ তায়ালার বিশেষ নিয়ামত। যদি আমরা স্বাধীন না হতাম, তাহলে হয়ত আমার বাক স্বাধীনতা, চলার স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন কিংবা আমার পছন্দসই দেশের নেতা নির্বাচন করতে পারতাম না। বুক ফুলিয়ে আমার অধিকার চাইতে পারতাম না।
মিরপুর জামেউল উলুম মাদরাসার প্রিন্সিপাল মুফতি আবুল বাশার নোমানী বলেন, আমরা ৪৫ বছর হলো দেশ স্বাধীন করেছি কিন্তু স্বাধীনতার স্বাদ কি আমরা পেয়েছি? দুর্নীতিতে সব সরকারই চ্যাম্পিয়ন হয়ে আপামর জনসাধারণকে অর্থনৈতিক কষ্টের যাঁতাকলে পিষ্ঠ করছে। আর অপজিশনকে সব সরকারই এমনভাবে কোণঠাসা করে রাখে যে, এতে সব শ্রেণি পেশার মানুষ নিজেদেরকে পরাধীন মনে করে। রাজনৈতিক দাঙ্গা-হাঙ্গামা তো বাংলাদেশে নিত্য নৈমিত্তিক ব্যপার। সে দিক দিয়ে স্বাধীনতার সুফল আমরা সামান্যই পেয়েছি। সব চেয়ে বড় কথা হলো, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা ধরে রাখা কষ্ট। বাংলাদেশের উপরে বা জনগণের উপরে যেন বিদেশি বা বিদেশি মদদপুষ্ট কোনো শকুনের ছায়া না পড়ে সে দিকে আমাদের বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।
স্বাধীনতা যুদ্ধে আলেমদের অংশগ্রহণ ও বর্তমান প্রজন্মের মাঝে বিজয়ের আনন্দ উপভোগে নানান আয়োজনের ব্যবস্থা করা হলেও কেন এক শ্রেণির মানুষ আলেমদের ভালো চোখে দেখেনা না? এমন প্রশ্ন করা হলে ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট মাদরাসার প্রিন্সিপাল মুফতি মামুনুর রশিদ বলেন, মূলত এসব ইসলাম বিদ্বেষী বর্তমান শক্তিশালী মিডিয়াগুলোর কারসাজি। দ্বীনি শিক্ষাকেন্দ্রগুলো তাদের উচ্ছৃঙখল স্বাধীনতার অন্তরায়। তাই তারা এ সকল মাদরাসাসমূহের ব্যপারে নানান প্রপাগান্ডা করে যাচ্ছে। আপনি খোঁজ নিয়ে দেখুন, এ দেশের শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ কওমি মাদরাসাকে ভালোবাসে। গুটিকয়েক শহুরে এলিট শ্রেণির মানুষ যারা মিডিয়ার কর্ণধার হয়ে মাদরাসাগুলোকে মূল বাংলাদেশের চেতনার বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সৈনিক হযরত হাফেজ্জী হুজুরকে কালিমা লেপনের চেষ্টা করছে।
এর থেকে পরিত্রাণের উপায় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের শক্তিশালী মিডিয়া তৈরি করতে হবে। রাষ্ট্রের উপর আমাদের প্রভাব বিস্তার করতে হবে। আলেমদের ঐক্য হতে হবে। তাহলে এ সব ধান্দাবাজ বুদ্ধিজীবীদের চেষ্টা সফল হবে না। তবেই আমরা স্বাধীনতার মূল চেতনা বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশের অগ্রগতী দিন দিন এগিয়ে নিতে পারব ইনশাআল্লাহ।
আরআর