আওয়ার ইসলাম: শেষ হলো মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশ-এর ২২তম বার্ষিক ইজতিমা। দাওয়াতুল হকের প্রধান কার্যালয় জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম মাদানিয়া যাত্রাবাড়িতে ৩ দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানে সংগঠনের আমীর আল্লামা মাহমদুল হাসান হেদায়েতের বয়ান করেন।
৩ ডিসেম্বর শনিবার সকাল ৯টার পর পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ইজতেমা। এরপর পর্যায়ক্রমে বয়ান চলতে থাকে। সকাল দশটার মধ্যেই ঢাকাসহ বাইরের জেলা-বিভাগ থেকে আত্মশুদ্ধি ও জীবনের সকল ক্ষেত্রে সুন্নতের অনুসরণের প্রেরণায় আগত উলামায়ে কেরাম ও দ্বীনদার মুসলমানদের অংশগ্রহণে মসজিদ ও মসজিদের সামনের বারান্দা, সামিয়ানা টাঙ্গানো চত্বরসহ মাদরাসার মাঠ ও আশপাশের এলাকা কানায় কানায় ভরে যায়।
অনুষ্ঠানে ৬৪ জেলা থেকেই দাওয়াতুল হকের লোকজন অংশ নেন। বিভিন্ন জেলার আমীর, নায়েবে আমীর, কর্মীসহ দেশের আলেম-উলামা, ছাত্র শিক্ষকরা অনুষ্ঠানটিতে যোগ দেন। অনুষ্ঠানে মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক রহ. এর খোলাফাগণও তাশরীফ রাখেন। আলেম ওলামাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বেফাকের সহ-সভাপতি আল্লামা আশরাফ আলী, কিশোরগঞ্জ জামিয়া ইমদাদিয়ার মুহতামিম ও বেফাকের সহ-সভাপতি মাওলানা আযহার আলী আনওয়ার শাহ, ফরিদাবাদ মাদরাসার মুহতামিম ও বেফাকের নব নির্বাচিত মহাসচিব আল্লামা আব্দুল কুদ্দুছ, দৈনিক ইনকিলাবের সহকারী সম্পাদক মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী, ঢালকা নগরের পীর মুফতি জাফর আহমদ ও আব্দুল মতিন বিন হুসাইন, মুফতি মনসূরুল হক, প্রফেসর হামিদুর রহমান, প্রফেসর গিয়াস উদ্দীন, প্রিন্সিপাল মিজানুর রহমান চৌধুরী, মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ, জামিয়া রাহমানিয়ার মুহতামিম বেফাকের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে কুরআন তিলাওয়াত করেন হুফফাজুল কুরআন ফাউন্ডেশনের সভাপতি হাফেজ ক্বারী আব্দুল হক, ক্বারী হাবীবুল্লাহ বেলালী, পবিত্র হেরেম শরীফে কুরআন তেলাওয়াত করে বিশ্বে প্রথম স্থান অর্জনকারী হাফেজ ক্বারী নেছার আহমাদ আন নাছিরীর ছাত্র হাফেজ সা’আদ সুরাইল প্রমুখ।
এছাড়াও হাটহাজারী, পটিয়া, নানুপুর, দারুল উলূম খুলনা, জুম্মাপাড়া মাদরাসা রংপুর, জামিল মাদরাসা বগুড়া, জামিয়া ইমদাদিয়া কিশোরগঞ্জ, ঢাকার ফরিদাবাদ, রাহমানিয়া, বড়কাটারা, লালবাগ, আরজাবাদ, মিরপুর, ঢালকানগর, ইসলামবাগ, কামরাঙ্গিচর, বারিধারা, লালমাটিয়া, উত্তরাসহ বাংলাদেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলের প্রতিনিধিগণ নবীর সুন্নতের মহব্বতে আল্লামা শায়েখ মাহমূদুল হাসান এর ডাকে উপস্থিত হন।
হাজারও পাঠক যখন বলে হৃদয় গলে সিরিজ পড়ে হু হু করে কেদেছি, তখন নিজের চেষ্টাকে সফল মনে হয়
দাওয়াতুল হকের ইজতেমা মানেই দেশের সর্বস্থরের মানুষ ও আলেম-ওলামাদের মিলনমেলা। দেশ বরেণ্য ওলামায়ে কেরামের পদভারে গতকাল সারাদিনই ছিল জামিয়া প্রাঙ্গন মুখরিত। কখনো গুরুত্বপূর্ণ বয়ান, কখনো আজান-ইকামতের আমলি মশক, কখনো নামাযের আমলি মশক, সহী কুরআনের মশক, কখনো আত্মশুদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার মধ্য দিয়ে ইজতিমা চলতে থাকে। সবার মুখে একটাই অনুভূতি ছিল- আল্লামা মাহমুদুল হাসানই পারেন নবী করিম সা. এর সুন্নতের মাধ্যমে রক্তপাতহীন নীরব বিপ্লব ঘটাতে।
মজলিসে দাওয়াতুল হক মূলত হাকিমুল উম্মত শাহ আশরাফ আলী থানভি রহ.এর সুন্নত প্রতিষ্ঠার একটি বিপ্লবী আন্দোলন। যুগের সংস্কারক হজরত থানভি রহ. যখন দেখলেন মুসলমানদের মধ্যে সুন্নতের প্রতি গাফলতি সৃষ্টি হয়েছে এবং সুন্নতের ওপর আমল না থাকার কারণে পুরো দীন থেকেই তারা ছিটকে পড়ছে, তখন তিনি ‘দাওয়াতুল হক’ নামে একটি কার্যক্রম হাতে নেন। তাঁর এই উদ্যোগে থানভি সিলসিলার প্রত্যেক বুযুর্গ আন্তরিকভাবে যুক্ত হন। পাক-ভারত উপমহাদেশসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে দাওয়াতুল হকের কার্যক্রম ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করে। বর্তমানে দাওয়াতুল হককে হক্কানি উলামায়ে কেরামের সর্ববৃহৎ দাওয়াতি কাফেলা হিসেবে গণ্য করা হয়।
মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসানের দিক-নির্দেশনায় পরিচালিত মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশ-এর কাজকে যথাযথ ভাবে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে এ ইজতিমা অনুষ্ঠিত হয়। হযরত ওয়ালা হারদুয়ী রহ. এর সম্মানিত খোলাফা-মুরিদ ও দাওয়াতুল হকের সর্বস্তরের জিম্মাদার ও কর্মীদের ব্যাপক ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে লক্ষ করা যায়। সারাদেশে আলেম সমাজের ঐক্য একমাত্র দাওয়াতুল হকের ব্যানারেই হতে পারে বলে মন্তব্য করেন অনেক উলামায়ে কেরাম।
ইজতেমায় বাদ মাগরিব আমীরুল উমারা আল্লামা মাহমূদুল হাসান বয়ান পেশ করেন। মাত্র ২৮ দিনে কোরআন হিফজ করাএ মহামনীষীর সান্নিধ্য লাভে ও তার বয়ান শুনে সুন্নতি জীবনের প্রতি অনুপ্রাণিত হতে বর্তমান সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান কামালসহ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বহু গণ্যমান্য লোকসহ লাখো উলামায়ে কেরাম, আমজনতা উপস্থিত হন।
ইজতেমা শেষ হওয়ার পূর্বে রাত সাড়ে দশটায় অত্যন্ত আবেগঘন পরিবেশে মুনাজাত পরিচালনা করেন আমীরে দাওয়াতুল হক মুহিউসসুন্নাহ মাওলানা মাহমূদুল হাসান।
আরআর