শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দ্রুত নির্বাচনের বিকল্প নেই: তারেক রহমান জমিয়তের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হলেন শায়খ মাওলানা আবদুর রহীম ইসলামাবাদী কুমিল্লায় আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলন আগামীকাল মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর ইন্তেকালে চরমোনাই পীরের শোক প্রকাশ জমিয়ত সভাপতি মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী রহ.-এর বর্ণাঢ্য জীবন কওমি সনদকে কার্যকরী করতে ছাত্রদল ভূমিকা রাখবে: নাছির বড় ব্যবধানে জিতে প্রথমবারের মতো পার্লামেন্টে যাচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা আইফোনে ‘টাইপ টু সিরি’ ফিচার যেভাবে ব্যবহার করবেন  স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক: ধর্ম উপদেষ্টা আল্লাহকে পেতে হলে রাসূলের অনুসরণ অপরিহার্য: কবি রুহুল আমিন খান

গণতন্ত্রের অসারতা: গণভোটে বাতিল হয়ে গেল ইতালির সাংবিধানিক সংস্কার

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

 ۞ পলাশ রহমান

palash_rahman3গতকাল রোববার ইতালিতে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। যে কোনো বিবেচনায় এই ভোট ছিল অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। বয়সে যুবক ইতালীয় প্রধানমন্ত্রী মাত্তেও রেনসি দেশ পরিচালনার জন্য বেশ কিছু পরিবর্তন চেয়েছিলেন। তিনি সাংবিধানিক সংস্কারের প্রস্তাব করেছিলেন। তার উত্থাপিত প্রস্তাব পাশ হবে কি হবে না, ইতালীয় সংবিধানে পরিবর্তন করা হবে কি হবে না, তাকে পরিবর্তনের ক্ষমতা দেয়া হবে কি হবে না মূলত এই বিষয়ের উপর গণভোট নেয়া হয়। ভোটাররা 'না' ভোট দিয়ে রেনসির সংস্কার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে।

ভোটে রেনসির সংস্কার প্রস্তাব নাকচ হয়ে যাওয়ার পর তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। বলেছেন, সংস্কারের অভাবে ইতালিতে নতুন কোনো আইন করা যায় না। বার বার সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হয়। সরকারের পতন হয়। এর থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সংস্কার খুব বেশি জরুরি ছিল। কিন্তু জনগণ সংস্কারের পক্ষে রায় দেয়নি। ফলে আমি দেশ পরিচালনার দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে চাই এবং জনগণকে নতুন প্রধানমন্ত্রী খুঁজে নেয়ার সুযোগ করে দিতে চাই।

ইতালিতে এখন অনেক বিদেশি ভোটার তৈরি হয়েছে। অন্যান্য দেশিদের মতো বাংলাদেশি ভোটারদের মধ্যেও এই ভোট নিয়ে বেশ উৎসাহ লক্ষ করা গেছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে বেশ 'জনের সাথে কথা বলেছি, তারা প্রায় সবাই 'না' ভোট দিয়েছে। কেনো 'না' ভোট দিয়েছে এর কোনো গোছালো উত্তর তাদের কাছে নেই। আমার ধারণা তারা সংস্কারবিরোধীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে 'না' ভোট দিয়েছে।

গত ৭০ বছরে ইতালির সরকার পরিবর্তন হয়েছে ৬৩ বার। ঘন ঘন নির্বাচনের ধকল বহন করা ইতালীয় অর্থনীতির জন্য বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতীয় ঋণের বোঝা বৃদ্ধি পেয়েছে। মোট জিডিপি- ১৩০ শতাংশের বেশি ঋণ করতে হয়েছে। এসব থেকে উত্তরণের জন্য প্রধানমন্ত্রী রেনসি সংস্কার প্রস্তাব এনেছিলেন।

উল্লেখ্য, সিনোর রেনসির সংস্কার প্রস্তাব বিরোধীদলের পাশাপাশি তার দল পিডি' একটা অংশের বিরোধিতার মুখে পড়েছিল।

গত প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ইতালিতে 'না' ভোটের পক্ষে ব্যাপক প্রচারাভিযান হয়েছে। যারা সিনোর রেনসির সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে ছিল তারা ব্যাপক প্রচারাভিযান চালিয়েছে। অতীতের অনেক জাতীয় নির্বাচনের চেয়েও বেশি প্রচার প্রোপাগাণ্ডা করা হয়েছে। বিশেষ করে ইলেট্রিক মিডিয়া এবং ভার্চুয়াল মিডিয়াগুলো এক চেটিয়া সংস্কার বিরোধীদের দখলে ছিল। বড় বড় পোস্টার, লিফলেন, বিলবোর্ডেও তারা এগিয়ে ছিল। এসব দেখে হয়তো অনেকেই বিভ্রান্ত বা প্রভাবিত হয়েছেন।

etali5

তবে শেষ মুহূর্তে ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাবেক প্রেসিডেন্ট রোমানো প্রদিসহ বেশ 'জন বড় মাপের রাজনীতিক সংস্কারের পক্ষে তাদের মতামত ব্যক্ত করেছিলেন, কিন্তু তা কোনো কাজে আসে নি। বিশাল জনরায় সংস্কারের বিপক্ষেই গেছে। সংস্কার বিরোধীদের কথা হলো এই সংস্কার কার্যকর হলে প্রধানমন্ত্রীর হাতে বেশি ক্ষমতা প্রদান করা হবে। ফলে ভবিষ্যতে ক্ষমতার অপব্যবহারের সম্ভবনা বৃদ্ধি পাবে।

উল্লেখ্য, ইতালির জাতীয় সংসদ দুই কক্ষ বিশিষ্ট। নিম্নকক্ষের সদস্য সংখ্যা ৬৩০ এবং উচ্চকক্ষের সদস্য সংখ্যা ৩১৫, মোট ৯৪৫ জন সাংসদ। এরা সবাই সরাসরি জনভোটে নির্বাচিত হয়। কিন্তু একটা অদ্ভুত বিষয় হলো ইতালীয় সংবিধান মতে এই দুই কক্ষের সদস্যদের ক্ষমতা সমান সমান। যা ইউরোপের অন্য কোনো দেশে দেখা যায় না। সমান ক্ষমতার এই বিশাল সংখ্যার সদস্যদের নিয়ে প্রায়ই রাজনৈতিক জটিলতা সৃষ্টি হয়। কোনো আইন বা সংস্কার প্রস্তাব পাশ হতে পারে না। একটা আইন পাশ হতে বছরের পর বছর লেগে যায়। দেশ চালাতে হয় সনাতনি ধারায়। সংসদে কেউ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারে না। যার ফলে বারবার সরকার পরিবর্তন হয়। আস্থা-অনাস্থার ভোটে সরকার হেরে যায়।

গত ৭০ বছরে ইতালির সরকার পরিবর্তন হয়েছে ৬৩ বার। ঘন ঘন নির্বাচনের ধকল বহন করা ইতালীয় অর্থনীতির জন্য বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতীয় ঋণের বোঝা বৃদ্ধি পেয়েছে। মোট জিডিপি- ১৩০ শতাংশের বেশি ঋণ করতে হয়েছে। এসব থেকে উত্তরণের জন্য প্রধানমন্ত্রী রেনসি সংস্কার প্রস্তাব এনেছিলেন। তিনি সংসদের উচ্চ কক্ষের সদস্য সংখ্যা কমিয়ে ১০০ তে নামিয়ে আনতে চেয়েছিলেন। তাদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত না করে বিভিন্ন প্রদেশ থেকে মনোনীত করার প্রস্তাব করেছিলেন। নিম্নকক্ষে সদস্যদের ক্ষমতা কিছুটা কমাতে চেয়েছিলেন।

নির্বাচনে 'না' বিজয়ী হওয়ায় শুধু যে রেনসির সরকার ধাক্কা খেয়েছে তা নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নেও বড় ধরনের ধাক্কা লাগার সম্ভবনা তৈরি হয়েছে। কারণ বিরোধী দল মুভিমেনতি চিংকুয়ে স্তেল্লে বা ফাইভ স্টার মুভমেন্টের নেতা বেপ্পে গ্রিল্লো ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন, ক্ষমতায় যেতে পারলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভিন্ন মূদ্রা ইউরো বাতিলের জন্য গণভোট আহবান করবেন। অর্থাৎ ইতালিতেও ব্রেক্সিটের সম্ভবনা সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি সংস্কার প্রস্তাবে বলেছিলেন, নির্বাচনে যে দল জিতবে তারা আনুপাতিক হারে বাড়তি আসন পাবে যাতে সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারে। যাতে সরকার অতি প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজগুলি শুরু করতে পারে। নয়তো যুগযুগ ধরে ইতালির সরকার কাঠামোয় কোনো পরিবর্তন, আধুনিকায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।

নির্বাচনে 'না' বিজয়ী হওয়ায় শুধু যে রেনসির সরকার ধাক্কা খেয়েছে তা নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নেও বড় ধরনের ধাক্কা লাগার সম্ভবনা তৈরি হয়েছে। কারণ বিরোধী দল মুভিমেনতি চিংকুয়ে স্তেল্লে বা ফাইভ স্টার মুভমেন্টের নেতা বেপ্পে গ্রিল্লো ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন, ক্ষমতায় যেতে পারলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভিন্ন মূদ্রা ইউরো বাতিলের জন্য গণভোট আহবান করবেন। অর্থাৎ ইতালিতেও ব্রেক্সিটের সম্ভবনা সৃষ্টি হয়েছে।

গণভোটে প্রধানমন্ত্রী রেনসির সংস্কার প্রস্তাব বাতিল এবং তার পদত্যাগের ঘোষনার পরে রাজনীতি বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, দিনে দিনে গণতন্ত্রের অসারতা প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। অতি উদার গণতন্ত্রের জন্যেই ইংল্যান্ডে ব্রেক্সিট হয়েছে। আমেরিকায় ট্রাম্পের মতো ক্ষেপাটে মানুষ প্রেসিডেন্ট হতে পরেছে। এছাড়া পৃথিবীর অনেক দেশে এই গণতন্ত্রের কারনে, গড়ে সব মানুষের ভোটাধিকার থাকার কারণে উগ্রো জাতীয়তাবাদী ক্ষেপাটা মানুষরা অতি সহজে ক্ষমতার চেয়ারে বসার সুযোগ পাচ্ছে। পৃথিবীর নিরাপত্তা খুব দ্রুতো শিকেয় উঠছে।

লেখক: প্রডিওসার, রেডিও বেইস ইতালি

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ