রোকন রাইয়ান
সেদিন এক বন্ধু পেপসি কিনছিল। বাধা দিয়ে বললাম, ভাই এটা না কিনে অন্য কোনো পানীয় কেনা যায় না? তার চোখে কৌতূহল, বলল, কেন? আমি বললাম, এটা ইহুদিদের পণ্য, এই পন্যের বিকল্প দেশি পণ্য আছে। আপনি দেশিগুলো কিনতে পারেন।
বেচারা রাগ করে বললেন, আরে ভাই আমি একা এটা বাদ দিয়ে দেশিটা কিনলে কি হবে আর কেউ তো কিনছে না। আমি একা বাদ দিলে তো আর দেশ লাভবান হয়ে যাবে না। একা বাদ দিলে তো ইহুদিরা বিরাট ক্ষতির মুখে পড়বে না।
তাকে কিছু বলার ইচ্ছে হলো, তার আগে একটা ঘটনা শোনাই জঙ্গলে ভ্রমণে গেছে এক ব্যক্তি। ঘুরতে ঘুরতে লোকটি একটি কাক দেখল, যার দুটি ডানাই ছিল কাটা। কাকটির ওই অবস্থা দেখে লোকটি ভীষণ দুঃখ পেলো। ভাবলো, হায় আল্লাহ এই কাকটি এখন উড়বে কিভাবে? আর যদি উড়তে না পারে এবং খাবার সংগ্রহ করতে না পারে তবে বাঁচবে কিভাবে?
লোকটি যখন এসব ভাবছিলো তার কিছুক্ষন পর সেখানে একটি ঈগল উড়ে এল, যার ঠোঁটে ছিল খাবার। খাবারগুলো সে কাকের সামনে ফেললো এবং সেখান থেকে উড়ে চলে গেল।
এই দৃশ্য দেখে লোকটি খুব অবাক হল। সে ভাবল যদি এভাবেই আল্লাহ তার সৃষ্টিকে বাঁচিয়ে রাখেন তবে আমার এত কষ্ট করে কাজ করার দরকার কি? আমি আজ থেকে কোনো কাজ করবো না, তিনিই আমাকে খাওয়াবেন।
লোকটি বাড়ি ফিরে কাজ করা বন্ধ করে দিল। কিন্তু দুই-তিন দিন পার হয়ে গেলেও সে কোনো সাহায্য পেল না। এর কারণ জানতে সে একজন বিশেষজ্ঞ লোকের কাছে গেল এবং তাঁকে সবকিছু খুলে বলল।
সব শুনে জ্ঞানী ব্যক্তি তাকে বললেন, তুমি দুটি পাখি দেখেছিলে। একটা সেই আহত কাক, আরেকটা সেই ঈগল। তুমি কেন সেই কাকটিই হতে চাইলে? কেন তুমি সেই ঈগলটির মত হতে চাইলে না, যে নিজের খাবার তো যোগাড় করেই, সাথে যারা না খেয়ে আছে তাদের মুখে খাবার তুলে দেয়?
কথা শুনে লোকটি বেশ লজ্জিত হল এবং নিজের ভুল বুঝতে পারল।
বাঙালি হিসেবে দুটি গুণ আমরা বেশ বড়াইয়ের সঙ্গে গায়ে মেখে বেড়াই তার একটা হলো হিনমন্যতা (আমি একা প্রতিবাদ করেই বা কি হবে)। আরেকটা হলো ভালো পাখিটার মতো হতে না চাওয়া।
আমি একা প্রতিবাদ করলে কিছুই হবে না মনে করে প্রতিবাদ ছেড়ে দিয়েছি, আর ভালো উদারহরণও একা নিয়ে লাভ নেই বলে সেটাও দূরে রেখেছি। দুইটা জিনিস ছেড়ে আমরা এখন হিনমন্য জাতি যাদের দ্বারা ভালো উদাহরণ তৈরি দূর অস্ত।
কিন্তু আমরা চাইলেই কি পারি না গল্পের সেই ঈগলের উদাহরণ নিয়ে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা। আমরা কি পারি না নিজের খাবারটা যোগার করে আরেকটা ক্ষুধার্তের মুখে খাবার দিতে। আরেকটা নিচের মানুষকে একটু হাত ধরে উপরে তুলে আনতে? পারি, তবে চেষ্টা করি না। এসব নিয়ে ভাবার প্রয়োজন হয়নি। ‘এখন হলো স্বার্থের পৃথিবী’ এই বাক্যের মোচ পাকিয়ে বসে আছি সবাই। ওদিকে আমাদের আদর্শ অন্যরা নিয়ে যাচ্ছে। তারা নিজেদের পৃথিবী আলোকিত করছে। আমরা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখছি আর দেখছি।
আমাদের নবীজি সা. তো এ শিক্ষাই দিয়েছেন। এ আশ্চর্য মন্ত্র বলেই তিনি জাহেলিয়াতকে আলোকময় করেছেন। যে সমাজে সবাই সবার ক্ষতি করে সেখানে তিনি অন্যের বোঝা মাথায় করে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন। খলিফা হয়েও ওমর রা. নিজের পিঠে আটার বস্তা নিয়ে ক্ষুধার্তের বাড়ি গেছেন। এ কারণেই না দূষিত আরব হয়ে ওঠেছে পবিত্র আরব। তামাম পৃথিবীর জন্য এক শিক্ষণীয় সময়। এ শিক্ষা তো আপনার, আমাদের। তাহলে একা সৎ হওয়াকে আপনি কেন দোষের মনে করছেন। বরং একাই শক্তি, একাই সাহস একাই গড়তে পারি পৃথিবী। এই মন্ত্রে বিশ্বাস রাখুন। আল্লাহ জয়ীদের কাতারে আপনাকে শামিল করবেন।
আ আ