শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দ্রুত নির্বাচনের বিকল্প নেই: তারেক রহমান জমিয়তের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হলেন শায়খ মাওলানা আবদুর রহীম ইসলামাবাদী কুমিল্লায় আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলন আগামীকাল মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর ইন্তেকালে চরমোনাই পীরের শোক প্রকাশ জমিয়ত সভাপতি মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী রহ.-এর বর্ণাঢ্য জীবন কওমি সনদকে কার্যকরী করতে ছাত্রদল ভূমিকা রাখবে: নাছির বড় ব্যবধানে জিতে প্রথমবারের মতো পার্লামেন্টে যাচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা আইফোনে ‘টাইপ টু সিরি’ ফিচার যেভাবে ব্যবহার করবেন  স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক: ধর্ম উপদেষ্টা আল্লাহকে পেতে হলে রাসূলের অনুসরণ অপরিহার্য: কবি রুহুল আমিন খান

রোহিঙ্গা মুহাজির ও আমাদের দীনি দায়িত্ব

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাহফূযুল হক
কলামিস্ট

rohinga17মিয়ানমারের উগ্রবাদী বোদ্ধ জঙ্গীদের ইন্ধনে মিয়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক রাখাইন রাজ্যে পরিচালিত রোহিঙ্গা মুসলিম জাতি নির্মূল অভিযান নতুন করে শুরু হওয়ার পর নির্যাতিত রোহিঙ্গারা আশ্রয়ের আশায় আমাদের দেশে প্রবেশের চেষ্টা করে। তিনটি কারণে তারা আমাদের দেশে আসতে চাচ্ছিল। ভৌগলিক অবস্থানে আমরা তাদের নিকটতম প্রতিবেশি, ধর্মবিশ্বাসে আমাদের ও তাদের জাতিয় পরিচয় অভিন্ন এবং ভাষার পরিচয়েও আমরা তাদের মতোই বাঙ্গালী।

উগ্র সাম্প্রদায়িক চেতনার নির্লজ্জ প্রকাশে এ পৃথিবীর মাটি অগণিত বার রঞ্জিত হয়েছে। নির্যাতিতের আহাজারিতে পৃথিবীর আকাশ-বাতাস বহুবার ভারি হয়েছে। কিন্তু এ বারে মিয়ানমার সেনাবাহিনী সে দেশের উগ্রবাদী জঙ্গী জনতাকে সাথে নিয়ে রোহিঙ্গা মুসলিম জনগণের উপর যে নির্যাতন করেছে তা বুঝানোর জন্য নির্যাতন শব্দও যথেষ্ট নয়। নির্যাতন শব্দ বললে তার কিছুই বুঝে আসবে না। কোন ভাষার কোন শব্দ দিয়েই তা বুঝানো সম্ভব নয়। কেউ যদি তা উপলব্ধি করতে চায় তার একমাত্র উপায় নির্যাতনের ভিডিওগুলো দেখা। সে ভয়াবহ নিষ্ঠুর দৃশ্যের বিবরণ লেখতে গেলেও চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠে, হাত কাঁপতে থাকে, মাথা ঘোরে বমি আসতে চায়। সম্ভবত পৃথিবীর অতীত ইতিহাসে ও বর্তমানে এভাবে কোন জাতিকে নির্যাতন করা হয় নি। জাতি নির্মূলের উদ্দেশ্যে বহুবার পৃথিবীতে হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা হয়েছে, রক্তের স্রোতে নদীর পানি লাল হয়ে গেছে কিন্তু সরকারের তত্তাবধনা বিশাল এক জনগোষ্ঠীর সাথে এরকম নিষ্ঠুর পৈশাচিক নির্যাতনের কোন রেকর্ড পৃথিবীতে নেই।

এতকিছুর পরেও আমাদের সরকার ও সাম্প্রদায়িক বামগোষ্ঠীগুলো রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানের ঘোর বিরোধী ছিল। কিন্তু মাবাধিকারের পতাকাবাহী ইসলামপন্থীদের জোরাল দাবি ও বিভিন্ন কর্মসূচিতে সরকার যথেষ্ট নমনীয় হয়েছে এবং কিছুটা দেরিতে হলেও সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রোহিঙ্গারা এখন আমাদের দেশে আসছে। তারা আমাদের ধর্মের ভাই-বোন। তারা আমাদের মুহাজির ভাই-বোন। আমাদের আসতে হবে মদীনার আনসার সাহাবীদের ভূমিকায়। যেহেতু ইসলামপন্থীদের জোরাল দাবির সুফলে তারা আশ্রয় পেয়েছে সেহেতু তাদের ব্যাপারে এ দেশের ইসলামপন্থীদের দায়িত্বটা সবচেয়ে বেশি। ইসলামপন্থীদের অনেকেই ঘোষণা দিয়েছেলেন এদের পিছনে যা ব্যয় হবে সব তারা বহন করবে। এখন সময় এসেছে নিজেদের দায়িত্বশীলতা প্রমাণ করার, নিজেদের অঙ্গীকার রক্ষা করার।

এদেশের ইসলামপন্থীদের উচিৎ রোহিঙ্গা ইস্যুতে দু’ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করার। এ ইস্যুর স্থায়ী সমাধানের পথ বের করা এবং নগদ জীবন বাঁচানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রয়োজন কঠোর রাজনৈতিক কর্মসূচি, বুদ্ধি দীপ্ত নরম কুটনৈতিক কর্মসূচি। পূর্বঘোষিত মায়ানমার অভিমূখে লংমার্চ, ঢাকাস্থ মিয়ানমার দূতাবাস ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচিগুলো শতভাগ সফলতার সাথে বাস্তবায়ন করতে হবে। এ জন্য যে কোন ত্যাগ ও বিসর্জন দিতে রাজনৈতিক কর্মীবাহিনীকে তৈরি করতে হবে। কোন অবস্থাতেই পিছু হটা যাবে না। এ সকল কর্মসূচি দ্বারা মিয়ানমার সরকার বিব্রত হবে, আন্তর্জাতিক মহলে সাড়া পড়বে।

রাজনৈতিক কর্মসূচি অনেক ধরণের আছে। আবার আমাদের দলও অনেকগুলো। এটাও একটা সুবিধা। একএক দলের ব্যানারে একএক ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন হতে থাকলে মূল দাবি জোরাল হবে। একের পর এক কাজ চলতে থাকবে। দাবি উত্থাপন দীর্ঘায়িত হতে থাকবে। এটা অবশ্যই ইতিবাচক দিক। তাই সবার কর্মসূচির প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল ও আন্তরিক হয়ে সাধ্য মতো সবাইকে সহযোগিতা করব। রাজনৈতিক ব্যানারের প্রতি নাক শিটকাব না। আমাদের বুঝতে হবে, ব্যানারেরও একটা গ্রহণযোগ্যতা আছে, প্রতিক্রিয়া আছ, প্রভাব আছে। দীর্ঘদিনের পুরোনো ব্যনারগুলো অকেজ নয়। আবার নতুন উদিত বৃহদাকারের ব্যানার নিষ্ফল নয়। ব্যানারের এ দুনিয়াতে কাজের মূল্যায়ন হয় ব্যানারের দামে। একই দাবিতে ভিন্ন ব্যানারের সুবিধা আছে।

ইসলামীপন্থী রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক দলগুলোর অনেকেরই সাথে মধ্যপ্রাচ্য সহ বহি:বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সুসম্পর্ক আছে। পরিকল্পিত ভাবে এ সুসম্পর্কগুলো কাজে লাগাতে হবে।

স্থায়ী সমাধানের জন্য দৃশ্যমান রাজনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি অদৃশ্য কুটনৈতিক তৎপরতাও বাড়াতে হবে। ইসলামীপন্থী রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক দলগুলোর অনেকেরই সাথে মধ্যপ্রাচ্য সহ বহি:বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সুসম্পর্ক আছে। পরিকল্পিত ভাবে এ সুসম্পর্কগুলো কাজে লাগাতে হবে। তাদের দিয়ে মিয়ানমার সরকারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে। প্রয়োজনে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে আমন্ত্রণ করে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে নিয়ে যেতে হবে, সরাসরি নির্যাতিতদের মুখ থেকে তাদেরকে নির্যাতনের বিবরণ শোনাতে হবে। ভিডিওগুলো সংরক্ষণ করে বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সরবারহ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, রোহিঙ্গা ইস্যুর স্থায়ী সমাধানের কোন বিকল্প নেই। যে কোন মূল্যের বিনিময়ে মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করতে হবে রোহিঙ্গাদের নাগিরত্ব মেনে নিতে, সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে। পৃথিবীর ইসলামিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর সাথে যোগাযোগ করে তাদের মাধ্যমে জাতিসংঘে জোরাল আওয়াজ তোলার চেষ্টা করা যেতে পারে।
স্থায়ী সমাধানের প্রক্রিয়া বেশ জটিল ও দীর্ঘ সময় সাপেক্ষ। তাই সে অপেক্ষায় বসে না থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের নগদ আশ্রয় দিতে হবে, বাঁচাতে হবে। তাদের নিরাপত্তা দিতে হবে। তাদের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থানের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। যেহেতু তারা মুসলিম আর মুসলিম হওয়ার অপরাধেই আজ তারা বাস্তুহারা সেহেতু ইসলামপ্রিয় তাউহীদী জনতাকেই তাদের সেবায় সর্বাগ্রে এগিয়ে আসতে হবে। অন্যদের সক্রিয় করার চেষ্টাটাও তাদেরই করতে হবে। সরাদেশ থেকেই শুধু নয়, বরং দেশ-বিদেশ থেকে ত্রাণ সংগ্রহ ও যথাযথ বিতরণ তো করতেই হবে।

তবে যে বা যারাই, যে নামে বা ব্যানারে ত্রাণ সংগ্রহ করছে তাদের নৈতিক দায়িত্ব থাকবে সংগ্রহ ও বিতরণের স্বচ্ছতা সম্পূর্ণ ভাবে নিশ্চিত করা। হিসাব যথাযথ ভাবে, প্রমাণ সহ সংরক্ষণ করা। সোসাল মিডিয়া সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সে হিসাব আপডেট করতে থাকা। এ ব্যাপারে কোন গোপনীয়তা বা উদাসিনতা মনে হয় ঠিক হবে না। ত্রাণ বিতরণ ছাড়াও আরো কিছু করা যেতে পারে।

এভাবে হয়তো স্বামী হারা, ভাই হারা, সন্তান হারা সর্বহারা মধ্যবয়সের নারীদের ইজ্জতের একটা সুব্যবস্থা হবে

যে সকল শিশু অভিভাবক হারা হয়েছে আমাদের পুরুষ-মহিলা মাদরাসাগুলো নিজেদের সাধ্যমতো তাদের অভিভাবকত্বের দায়িত্ব নিতে পারে। কওমী মাদরাসাগুলোর মুহতামিম সাহেবরা এগিয়ে আসতে পারেন। আপনারা যদি নিজ নিজ মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা অনুপাতে প্রতি দুই শত ছাত্র-ছাত্রীর বিপরীতে একজন রোহিঙ্গা এতিম শিশুর সকল দায়িত্ব মাদরাসার কাঁধে নিয়ে নিজেদের মাদরাসায় জায়গা দেন, আশাকরি খুব একটা বেগ পেতে হবে না। ছেলে-মেয়েগুলো মানুষ হবে, আলেম হবে। হয়তো স্বজন হারা এ শিশুগুলো ইলমের জন্য নিজের জীবন ওয়াক্ফ করে গভীর বুৎপত্তি অর্জনে সক্ষম হয়ে ইলমী জগতে বিশাল খেদমত আঞ্জাম দিবে। মহিলা মাদরাসার মুহতামিম সাহেবরা প্রস্তাবটি বিশেষ ভাবে বিবেচনা করে দেখতে পারেন।

দেশের প্রচলিত আইন রক্ষা করে বিবাহযোগ্য কুমারী নারীদের উপযুক্ত সৎ, সাহসী, সত্যিকার দ্বীনদার ছেলের হাতে বিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। সবার ব্যবস্থা না হলেও যে কয়জনের ব্যবস্থা হবে তাদের তো একটা সম্মানজনক বাঁচার উপায় হবে। সামান্য কয়েক জনের হলেও তো উপকার হবে। প্রয়োজনে ধনাট্যবান, নি:সন্তান পরিবারের দ্বীনদার কর্তাদের বহুবিবাহে উৎসাহিত করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে হয়তো স্বামী হারা, ভাই হারা, সন্তান হারা সর্বহারা মধ্যবয়সের নারীদের ইজ্জতের একটা সুব্যবস্থা হবে।

সর্বোপরি আমরা সবাই নিজ নিজ প্লাটফর্ম থেকে নিজ নিজ সাধ্য মতো কাজ করি। কারে বিরোধিতা করে সময় নষ্ট না করি। যদি ইখলাসে ও আদবে আমাদের ঐক্য ঠিক থাকে তবে কর্মসূচিতে ঐক্য না থাকলেও চলবে। কোন ক্ষতি হবে না। সফলতা ইন শা আল্লাহ আসবে। রোহিঙ্গাদের মুখে একদিন হাঁসি ফুঁটবে।

আরআর

প্রতিদিন কুইজ প্রতিদিন ৩০০ টাকার বই পুরস্কার, জিততে অংশ নিন রকমারি-আওয়ার ইসলাম সিরাত কুইজে। 

rakamari2


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ