আওয়ার ইসলাম: সবুজ বাংলার নানা প্রান্তে ছড়িয়ে আছে ওয়াজের সামিয়ানা। শহর-গ্রাম কিংবা প্রান্তিক জনপদেও খুব উৎসাহ নিয়ে আয়োজন করা হয় ওয়াজের। মাদরাসা মসজিদ বা ধর্মীয় সমিতি-সংগঠনগুলোই এসব ওয়াজ মাহফিলের আয়োজক। শীতের আমেজ যত বাড়বে, ওয়াজের সুর লহরিও ততই বাজবে। এই সব ওয়াজের প্রাণ ভ্রমরা বাংলার ওয়াজিনরা। ওয়ায়েজদের মন মানসিকতা, আয়োজকদের ইচ্ছা আগ্রহসহ নানা বিষয়ে কথা হয় বাংলা ওয়াজের কোকিল মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবীর সঙ্গে। হালের ব্যস্ততম এই সুবক্তার সঙ্গে আওয়ার ইসলামের পক্ষ থেকে কথা বলেছেন মুহাম্মদ আবু হানিফা ।
সামাজিক ও ব্যক্তিজীবনে ওয়াজের প্রভাব বিষয়ে বাংলা ওয়াজের কোকিল মাওলানা আইয়ুবী বলেন, ওয়াজ মূলত কয়েক রকম। তাই প্রভাবও কয়েক ধরনের। প্রথমত শুধু আলেম উলামা মাদরাসা শিক্ষার্থীদের জন্য ওয়াজ। যা উচ্চতর গবেষণামূলক হয়। সাধারণ মানুষ এসব ওয়াজ শোনে তেমন উপকার পায় না।
ভিন্ন আরেক রকম শ্রোতা হলো, সাধারণ মানুষ। ওয়াজে কুরআন হাদিসের সঠিক তত্ত্বভিত্তিক আলোচনা করে সাধারণ মানুষকে গঠনমূলক আলোচনা শোনানো হয়ে থাকে। দাওয়াতের মন মানসিকতা থেকে এই ওয়াজ সাধারণ মানুষের জন্য খুবই উপকারী। সেখানে জায়গা পায় আমলের ফজিলত ও পদ্ধতি ইত্যাদি। আকাবিরদের মালফুযাত ও বয়ানে উম্মাহর ফায়েদার জন্য বলা যেতে পারে। সাধারণ মানুষের জন্য এমন ওয়াজ খুবই উপকারী।
মাওলানা আইয়ুবী আরও বলেন, মজার বিষয় হচ্ছে সুরেলা বক্তার কদর বাজারে খুবই বেশি। তাদের ওয়াজেরও সাময়িক প্রভাব আছে। শুনে মজা পায়। কানে ভালো লাগে। কিচ্ছা-কাহিনী গল্পেভরা এসব ওয়াজ। এসব বয়ানে মানুষের কানের খোরাক হয় বটে আত্মার কোনো খোরাক হয়না। মানুষ তাদের ওয়াজ শুনে তবে এমন ওয়াজের আত্মিক উন্নতি হয় না। মাওলানা আইয়ুবী আয়োজকদের আচরণ ও তাদের মনোভাবের ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন, বর্তমানে তো আয়োজকরা ওয়ায়েজিদের কামলার (কাজের লোক) মনে করেন।
আলেমদের সাথে তারা যেমন তেমন ব্যাবহার করে। তারা ভাবে হাদিয়া দেব বক্তা আসবে। এমনটা ভাবা উচিৎ নয়। আবার অনেকে আগ থেকে টাকার চুক্তি করে আসা বা অগ্রিম টাকা নেয়টাও দুঃখজনক। তিনি আরো বলেন, অনেকে দেখা যায় বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে মাহফিলের আলোচনা করে থাকেন তাদের উদ্দেশ্য থাকে তারা সংগঠনের প্রচার ও কিছু আর্থিক উপার্জন। এখানে হেদায়াত বা আমলের উদ্দেশ্য থাক না। ফলে পুরা মাহফিল জুড়েই আলোচনা হয় দান দক্ষিণা আর চেষ্টা চলে মোট অংকের কালেকশনের। তবে আয়োজকদের মাঝে একরকম মনোভাব দেখা যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষদের থেকে আলেমদের আয়োজনে অনেকটা শান্তি পাওয়া যায়। তারা মানুষের যৌক্তিক সমস্যাটা বুঝে। কিন্তু সাধারণ মানুষেরা এগুলো বুঝতে চায় না। শেষে নিজের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমি আঠার বছর যাবত ওয়াজ করছি আজ পর্যন্ত আঠার টাকাও অগ্রিম নেইনি। তবে অনেক মধ্যস্তকারীর কারণে অনেক বড় বড় আলেমের বদনাম হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এফএফ
দেখুন মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবীর চমৎকার বক্তব্য...