ফারুক ফেরদৌস: মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর জুলুম নির্যাতনের ইতিহাস পুরনো। ১৯৩৭ থেকে ২০১২ পর্যন্ত মুসলিমদের টার্গেট করে এখানে শত শত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, সহিংসতা ও সামরিক অভিযান চালানো হয়েছে। এসব দাঙ্গা সহিংসতায় গৃহহীন বহু রোহিঙ্গা স্বদেশত্যাগে বাধ্য হয়েছে। আরাকান সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে এসেও বহু রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়। ব্যাপক নিপীড়নের শিকার হয়ে ১৯৭৮ ও ১৯৯১ সনে শরণার্থী হিসেবে ৩০ হাজার রোহিঙ্গা এদেশে আসে এবং শরণার্থী শিবিরে বসবাস করে। তবে বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা পাঁচ লাখের কাছাকাছি।
গত মাসখানেক ধরে আবার অবর্ণনীয় জুলুম নির্যাতন চলছে বার্মার রাখাইন রাজ্যে। দেড় মাসে সাড়ে তিনশ’র বেশি মুসলমানকে মেরে ফেলা হয়েছে। অনলাইনে নির্যাতনের যে সব ভিডিও ও ছবি পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো দেখলে হৃদয় কেঁপে ওঠে। বর্বরতার সব সীমা মিথ্যে হয়ে গেছে মিয়ানমারে। বিনা দ্বিধায় হত্যা নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমারের বৌদ্ধ সন্ত্রাসীরা। প্রাণ বাঁচিয়ে শত শত রোহিঙ্গা প্রতিদিন বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে আসছেন । কিন্তু বাংলাদেশও তাদের আশ্রয় দিতে পারছে না। কোথাও জায়গা নেই রোহিঙ্গাদের। আশ্রয়হীন হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলমানের চারদিকে এখন শুধুই অন্ধকার। প্রতি মুহূর্তে মৃত্যু ও ভয়াবহ নিপীড়নের আশংকা মাথায় করে তাদের দিন রাত কাটছে ক্ষুৎপীড়িত অবস্থায়।
প্রতিবেশী মুসলমানদের উপর চলমান এই চরম অনাচার জুলুমের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বাংলাদেশের মানুষ। সরব হয়েছে ইসলামি দলগুলো। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কর্মসূচিও পালন করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত এই হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে কীভাবে দাঁড়াতে পারে ইসলামি দলগুলো? বাংলাদেশে কর্মসূচি পালন করে রোহিঙ্গা মুসলমানদের কী লাভ হচ্ছে?
এ সম্পর্কে আওয়ার ইসলামকে ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুস আহমদ বলেন, এই নির্মম নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় তোলা বাংলাদেশের ইসলামি দলগুলোর দায়িত্ব। আরও জোরালোভাবে আমাদের দেশের সরকারের কাছে যথাযথ উদ্যোগ নেয়ার দাবি তুলতে হবে। বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই এই অন্যায় জুলুমের বিরুদ্ধে সংসদে নিন্দা প্রস্তাব আনতে হবে এবং মিয়ানমারকে নির্যাতন বন্ধে চাপ দিতে হবে।
অধ্যক্ষ ইউনুস আহমদ বলেন, মানবিক কারণেই সীমান্তে আশ্রয়প্রার্থী রোহিঙ্গা মুসলমানদের এ দেশে আশ্রয় দেয়া উচিত। প্রয়োজনে এ দেশের মুসলমানরা সরকারকে এ বিষয়ে সাহায্য করবে। ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব মনে করেন, সরকারকে এসব উদ্যোগ গ্রহণে বাধ্য করা এদেশের ইসলামি দলগুলোর নৈতিক ও ঈমানি দায়িত্ব।
একই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ইসলামি ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ নেজামী বলেন, ইসলামি দলগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি দিচ্ছে, পত্রিকায় বিবৃতি দিচ্ছে। এটা শুধু ইসলামি দলগুলোর বিষয় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানবিক কারণে সব শান্তিকামী মানুষেরই এই মুহূর্তে রোহিঙ্গা মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। বাংলাদেশের সাংবিধানিক দায়িত্ব নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো।
তিনি বলেন, ইসলামি দলগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে রোহিঙ্গাদের পক্ষে জনমত গড়ে তুলছে। ইসলামি দলগুলো এই কর্মসূচিগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাচ্ছে। এই মুহূর্তে পুরো পৃথিবীরই দায়িত্ব রোহিঙ্গাদের উপর পরিচালিত পৈশাচিক নিপীড়ন প্রতিরোধ করা।
বিশ্ব সম্প্রদায়কে নাড়া দেয়ার মত কর্মসূচি বাংলাদেশের ইসলামি দলগুলোর পক্ষ থেকে আসা দরকার বলে মনে করেন আব্দুল লতিফ নেজামী।
মিয়ানমারে যেখানে প্রতিদিন হত্যাযজ্ঞ বেড়েই যাচ্ছে এ অবস্থায় ইসলামী দলগুলোর লম্বা সময় নিয়ে কর্মসূচি দেয়া যুক্তিযুক্ত কিনা জানতে চাইলে হেফাজতের ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, মিয়ানমার ইস্যুতে আরো জোরদার এবং কাছাকাছি সময়ের কর্মসূচি প্রয়োজন। একইসঙ্গে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচিও জরুরি। কিন্তু এটি আমাদের হচ্ছে না।
হেফাজত একটি লংমার্চের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল সেটি কবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা লংমার্চের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুতি নিচ্ছি, হাটহাজারীর মহাপরিচালক আল্লামা আহমদ শফী অসুস্থ থাকায় তারিখটি নিয়ে ফাইনাল সিদ্ধান্তে আসা যায়নি।
এই মুহূর্তে মিয়ানমারে যে অমানবিক নির্যাতন হচ্ছে তা বন্ধে করণীয় সম্পর্কে আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, এই মুহূর্তে সরকারের উচিত সীমান্ত খুলে দেয়া। কারণ একাত্তরে ভারতও এই পরিস্থিতিতে আমাদের উপকার করেছিল। আর এতে করে বাংলাদেশের লাভও রয়েছে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের সুনাম বেড়ে যাবে দ্বিগুণ। সরকরি এটি করলে মুসলিম বিশ্বগুলোর থেকে নানান সহায়তাও আসবে বলে মনে করি।
এফএফ