এ এইচ এম ফারুক
ক্ষমতাবিমুখ রাজনীতির এক মহান পুরুষ ছিলেন মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম স্বপ্নদ্রষ্টা ও পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতিও ছিলেন। আজ মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪০তম মৃত্যু বার্ষিকী।
১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর গোটা জাতিকে শোক সাগরে ভাসিয়ে উপমহাদেশের এ রাজনৈতিক সূর্য অস্ত গিয়েছিল। মওলানা ভাসানীর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে। মজলুম মানুষের পক্ষে বলিষ্ঠ কণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে যায়।
বার বার রাষ্ট্রক্ষমতার পালাবদলে বা পছন্দের ব্যক্তিদের ক্ষমতায় বসাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করলেও কখনো ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণে সম্মত হননি এই মহান নেতা।
বাংলার মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী সারাটা জীবন কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য ব্যয় করেছেন। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের জীবনে কখনো কোথাও মাথানত করেননি। আপোষহীন থেকেছেন নিজের আদর্শের প্রতি। জাতীয়তাবাদী চেতনাকে ধারণ করে মেহনতি মানুষের মুক্তির সংগ্রামে ছিলেন অবিচল। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে জনগণকে জাতীয়তাবাদী চেতনায় জাগরিত করেন। জমিদারদের নির্যাতন-অত্যাচারের বিরুদ্ধে কৃষক-মেহনতি শ্রেণীকে ঐক্যবদ্ধ করে জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলেন তিনি। শুধু ব্রিটিশ নয়, পাকিস্তান স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে তিনি জীবনপণ লড়াই চালিয়েছেন।
পাকিস্তানের অংশ বাংলাদেশ একটি অচল রাষ্ট্রকাঠামো হিসেবে নিশ্চিত হয়ে ছিলেন এ দূরদর্শী নেতা। ১৯৫৭ সালে কাগমারী সম্মেলনে তিনি পাকিস্তানের পশ্চিমা শাসকদের ‘ওয়ালাইকুমুসসালাম’ বলে সর্বপ্রথম পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতার ঐতিহাসিক ঘণ্টা বাজিয়ে ছিলেন। শোষিত-বঞ্চিত ও নিপীড়িত অধিকারহারা মানুষের অধিকার আদায়ে সংগ্রামী মহাপুরুষ ছিলেন মওলানা ভাসানী। ভাসানী এমন একজন নেতা ছিলেন যাকে নিয়ে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনে গবেষণা চলছে।
আবদুল হামিদ খান ভাসানী ১৮৮০ সালে সিরাজগঞ্জ জেলার ধনপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন হাজী শরাফত আলী খান। হাজী শারাফত আলী ও বেগম শারাফত আলীর পরিবারে ৪ টি সন্তানের জন্ম হয়। একটি মেয়ে ও তিনটি ছেলে। মোঃ আব্দুল হামিদ খান সবার ছোট। তাঁর ডাক নাম ছিল চেগা মিয়া। ছেলে-মেয়ে বেশ ছোট থাকা অবস্থায় হাজী শারাফত আলী মারা যান। কিছুদিন পর এক মহামারীতে বেগম শারাফত ও দুই ছেলে মারা যায়। বেঁচে থাকলো ছোট শিশু আব্দুল হামিদ খান।
পিতৃহীন হামিদ প্রথমে কিছুদিন চাচা ইব্রাহিমের আশ্রয়ে থাকেন। ওই সময় ইরাকের এক আলেম ও ধর্ম প্রচারক নাসির উদ্দীন বোগদাদী সিরাজগঞ্জে আসেন। হামিদ তাঁর আশ্রয়ে কিছুদিন কাটান। এরপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কিছুদিন পূর্বে ১৮৯৩ সালে তিনি জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার জমিদার শামসুদ্দিন আহম্মদ চৌধুরীর বাড়িতে যান। সেখানে তিনি মাদ্রাসার মোদাররেসের কাজ করেন এবং জমিদারের ছেলে-মেয়েকে পড়ানোর দায়িত্ব নেন। পরে ১৮৯৭ সালে পীর সৈয়দ নাসীরুদ্দীনের সাথে আসাম গমন করেন। ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে আসামে স্থানীয় আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। এসময় তিনি আবারও প্রতিষ্ঠানিকভাবে ইসালামি শিক্ষার উদ্দেশ্যে ১৯০৭-এ দেওবন্দ যান। দুই বছর সেখানে অধ্যয়ন করে আসামে ফিরে আসেন। সময় দিচ্ছিলেন রাজনীতিতে। ১৯১৭ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস ময়মনসিংহ সফরে গেলে তাঁর ভাষণ শুনে ভাসানী অনুপ্রাণিত হন। তার ধারাবাহিকতায় ১৯১৯ সালে কংগ্রেসে যোগদান করে অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। বিট্রিশরাজের কারাগারে ১০ মাস কারাদন্ড ভোগ করেন।
১৯১৯ সালে ব্রিটিশ বিরোধী অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলনে যোগদানের মধ্য দিয়ে তাঁর মূল রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয়। কারাগার থেকে বের হওয়ার পরে তিনি টাঙ্গাইল জেলার সন্তোষে গিয়ে তখনকার অত্যাচারিত কৃষকদের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। তার কিছুদিন পর তিরিশের দশকের শেষ দিকে তিনি আসামের ঘাগমারায় বসবাসকারী বাঙালিদের স্বার্থরক্ষার জন্য আন্দোলন শুরু করেন। আবদুল হামিদ খান ঐ এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদীর ভাসানচরে বন্যার কবল থেকে বাঙালি কৃষকদের রক্ষার জন্য তিনি স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে একটি বাঁধ নির্মাণ করেন। এসময় তিনি এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াতে গিয়ে প্রায় নদীতে ভাসমান জীবন জাপন করতেন। তখন ভাসানচরের জনসাধারণ তাকে ‘ভাসানী সাহেব’ বলে অভিহিত করে এবং পরবর্তীকালে এই উপাধি তাঁর নামের অবিচ্ছিন্ন অংশে পরিণত হয়।
১৯৩৭ সালে ভাসানী মুসলিম লীগে যোগদান করেন এবং অচিরেই দলের আসাম শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। আসাম সরকার আইন করে এমন একটি ভৌগোলিক সীমারেখা টেনে দেয় যাতে বাঙালিরা ঐ সীমা অতিক্রম করে বসতি স্থাপন করতে না পারে। এই আইনের বলে স্থানীয় অহমীয়রা ‘বাঙালি খেদাও’ আন্দোলন শুরু করে। এই ভৌগোলিক বাধ্যবাধকতার ব্যাপারে আসামের মুখ্যমন্যী স্যার মোহাম্মদ সাদউল্লাহ্’র সঙ্গে মওলানা ভাসানীর সংঘর্ষ বাঁধে। ভারত বিভাগের সময় ভাসানী আসামের গোয়ালপাড়া জেলায় এই প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।
আসামে কৃষক-শ্রমীক মেহনতি মানুষের অত্যান্ত জনপ্রিয় নেতায় পরিণত হন ভাসানী। সরকারের সাথ তার প্রায় বিবাদ লেগেই থাকতো। পরে আসাম সরকার তাকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু তিনি চিরদিনের জন্য আসাম ছেড়ে চলে যাবেন এই শর্তে ১৯৪৭ সালের শেষের দিকে মুক্তি দেয়া হয়। ১৯৪৮ সালের গোড়ার দিকে মওলানা ভাসানী পূর্ব বাংলায় আসেন। কিন্তু মুসলিম লীগ আসাম শাখার এই সভাপতিকে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক মুসলিম লীগের নেতৃত্ব থেকে দূরে রাখা হয়। ফলে তিনি তখন অনুষ্ঠিত দক্ষিণ টাঙ্গাইল এলাকার উপ-নির্বাচনে মুসলিম লীগ প্রার্থী এবং করটিয়ার তৎকালিন জমিদার খুররম খান পন্নীকে পরাজিত করেন। কিন্তু প্রাদেশিক গভর্নর অসদুপায়ের অভিযোগ এনে নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করেন এবং সকল প্রার্থীকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতার অযোগ্য বলে ঘোষণা করেন।
অথচ ১৯৪৯ সালে পন্নীর ওপর থেকে এই বাধা তুলে নেওয়া হলেও ভাসানীর ওপর তা বলবৎ থাকে। ১৯৪৯ সালে ভাসানী পুনরায় আসাম যান এবং আসাম সরকার তাকে গ্রেপ্তার করে ধুবড়ি জেলে পাঠায়। কিছুদিন পর মুক্তি পেয়ে তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন। এ সময় পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ নেতৃত্বে সংকট দেখা দেয় এবং দলের যুব-সদস্য ও ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়। মুসলিম লীগের ক্ষুব্ধ সদস্যরা ঢাকায় ১৯৪৯ সালের ২৩-২৪ জুন এক কর্মী সম্মেলন আহবান করে। এ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয় স্বামীবাগের রোজ গার্ডেনে।
এতে প্রদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ৩’ শ প্রতনিধি যোগদান করেন। ২৪ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল জন্মলাভ করে। এর সভাপতি হন মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। সাধারণ সম্পাদক হন টাঙ্গাইলের শামসুল হক। জন্মদিনে নতুন দলটি ঢাকার আরমানিটোলায় ভাসানীর সভাপতিত্বে একটি জনসভার আয়োজন করে। ঐ স্থানে দ্বিতীয় সভাটি করা হয় ১১ অক্টোবর, এবং সভা শেষে প্রদেশে দুর্ভিক্ষাবস্থার প্রতিবাদে একটি শোভাযাত্রা নিয়ে সচিবালয় অভিমুখে অগ্রসর হলে ভাসানীসহ নতুন দলের অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কারাগারে বন্ধী থাকা অবস্থায় ১৯৫০ সালে সরকার কর্তৃক রাজশাহী কারাগারের খাপরা ওয়ার্ড এর বন্দীদের উপর গুলিবর্ষণের ঘঠনার প্রতিবাদে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অনশন ধর্মঘট পালন করেন ভাসানী। অসুস্থ হয়ে পড়লে ভাসানীকে মুক্তির দাবীতে আন্দোলন শুরু হয়। এক পর্যায়ে ১৯৫০ সালের ১০ ডিসেম্বর তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান।
বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম ভাষা করার দাবীতে তার ভূমিকা অপরিসিম। তার সভাপতিত্বে ১৯৫২-র ৩০ জানুয়ারি ঢাকা জেলার বার লাইব্রেরী হলে সর্বপ্রথম সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। পাকিস্তান সরকার ভাসানীকে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে সহযোগিতার অভিযোগে গ্রেফতার করেন। তখন টানা ১৬ মাস কারানির্যাতনের শিকার হন। অবশ্য জনমতের চাপে ১৯৫৩ সালের ২১ এপ্রিল মওলানা ভাসানীকে জেল থেকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় সরকার।
পূর্ববঙ্গের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ১৯৫৩ সালের ৩ ডিসেম্বর কৃষক-শ্রমিক পার্টির সভাপতি শের-এ-বাংলা এ.কে. ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তফ্রন্ট নামক নির্বাচনী মোর্চা গঠন করেন। ১৯৫৪ সালের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিপুল বিজয় অর্জন করে এবং পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক পরিষদে ২৩৭ টির মধ্য ২২৮ টি আসন অর্জনের মাধ্যমে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। মুসলিম লীগ পায় মাত্র ৭টি আসন। ফজলুল হকের নেতৃত্বে সরকার গঠন করার পর ২৫শে মে ১৯৫৪ মওলানা ভাসানী বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোল্ম যান এবং সেখানে বক্তব্য প্রদান করেন।
কিন্তু ৩০ মে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা ভেঙ্গে দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে গভর্ণরের শাসন জারি করে এবং মওলানা ভাসানীর দেশে প্রত্যাবর্তনের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেন। এসময় তিনি প্রায় ১১ মাস লন্ডন, বার্লিন, দিল্লী ও কলকাতায় অবস্থান করেন। সরকার দেশী-বিদেশী চাপে এক পর্যায়ে তার উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে তিনি ১৯৫৫-র ২৫ এপ্রিল দেশে প্রত্যাবর্তন করেন।
দেশে প্রত্যাবর্তণ করে আবারও কৃষক-শ্রমীক মেহনতি মানুষের জন্য কাজ শুরু করেন। ১৯৫৬-র ৭ মে পূর্ব বাংলায় খাদ্যজনিত দুর্ভিক্ষ রোধের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ৫০ কোটি টাকা আদায়ের দাবিতে ঢাকায় অনশন ধর্মঘট শুরু করেন। টানা ১৭ দিন অনশনের পর সরকার দাবি মেনে নিলে ২৪ মে অনশন ভঙ্গ করেন।
পঞ্চাশের দশকের প্রথম দিকে পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশ অংশে মওলানা ভাসানী সবচেয়ে প্রতিবাদী এবং শ্রদ্ধেয় রাজনীতিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। কিন্তু ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে যাওয়ার কোন বাসনা কখনো লক্ষ্য করা যায়নি। ১৯৪৯ থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে কখনো অগ্রভাগে থেকে কখনো নেপত্য নায়কের ভূমিকায় থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু আন্দোলনের সুফল আসার পরে আবার চলে গেছেন টাঙ্গাইলে।
বঙ্গবন্ধুসহ পূর্ব পাকিস্তান তথা আজকের বাংলাদেশের তৎকালিন নেতৃবৃন্ধ রাজনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতেন মওলাণা ভাসানির নিকট থেকে। শেখ মুজিবর রহমান বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার আগে থেকেই তিনিসহ তৎকালিন অনেক প্রতিথযষা নেতৃবৃন্দ মওলানা ভাসানীকে আব্বা এবং মওলানার স্ত্রীকে আম্মা বলে সম্ভোধন করতেন।
এদিকে বিট্রিশ রাজের সময় থেকে বারবার কারাবরণের ফলে কারাগারে কমিউনিস্ট নেতাদের সঙ্গে মওলানার যোগাযোগ ঘটে এবং তিনি সমাজতান্তিক মতবাদ সম্পর্কে আরও সচেতন হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে কমিউনিস্টরা তাকে আদমজী জুটমিল মজদুর ইউনিয়নের এবং পূর্ব পাকিস্তান রেলওয়ে এমপ্লয়ীজ লীগের সভাপতি করে। যার ফলে ১৯৫৪ সালের মে দিবসে তিনি ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে দুটি বৃহৎ শ্রমিক সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন। ঐ বছরই তিনি পূর্ব পাকিস্তান কৃষক সমিতির সভাপতি হন। এর অল্পদিন পরে তিনি কমিউনিস্ট প্রভাবিত আন্তর্জাতিক শান্তি কমিটির পূর্ব পাকিস্তান শাখার সভাপতি পদে আসীন হন এবং স্টকহোমে অনুষ্ঠিত বিশ্বসান্তি সম্মেলনে যোগদান করেন। এ সুযোগে তিনি ইউরোপের বহৃ দেশ ভ্রমণ করে বিশ্বব্যাপী সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পর্কে প্রত্যক্ষ জ্ঞান লাভ করেন। ইতিমধ্যে আওয়ামী মুসলিম লীগ এবং কৃষক শ্রমিক পার্টির দ্বন্দ্বের কারণে যুক্তফ্রন্ট ভাঙনের সম্মুখীন হয়। আপ্রাণ চেষ্টা করেও তিনি এই দ্বন্দ্ব মেটাতে পারেন নি।
এদিকে ১৯৫৬ সালে কেন্দ্রে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী আওয়ামী মুসলিম লীগ কোয়ালিশন সরকার গঠন করেন। সোহরাওয়ার্দী প্রধানমন্ত্রী হন এবং আতাউর রহমান খানকে পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী করা হয়। এসময় পাকিস্তানের সংবিধান প্রণয়নসহ কয়েকটি ব্যাপারে সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে মওলানার মতবিরোধ দেখা দেয়। প্রস্তাবিত পাকিস্তান সংবিধানে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মওলানা তীব্র প্রতিবাদ করেন। সোহরাওয়ার্দী পৃথক নির্বাচনের পক্ষপাতি ছিলেন। মওলানা তাঁর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘেষা বৈদেশিক নীতিরও বিরোধিতা করেন। তিনি চেয়েছিলেন চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে।
এসব বিষয়ে দুরুত্ব হতে হতে এক পর্যায়ে মওলানা ভাসানী ১৯৫৭ সালে কাগমারিতে আওয়ামী লীগের এক সম্মেলন আহব্বান করেন। ঐ সম্মেলনে তিনি সোহরাওয়ার্দীর বৈদেশিক নীতির তীব্র বিরোধিতা করেন। এই মতবিরোধের কারণে দলে ভাঙ্গ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। প্রধানমন্ত্রী সোহ্রাওয়ার্দী সেই দাবি প্রত্যাখান করলে ১৮ মার্চ তিনি তার প্রতিষ্ঠিত দল আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করেন।
একই বছর মওলানা ভাসানী ঢাকায় পাকিস্তানের সকল বামপন্থী দলের একটি সম্মেলন আহবান করেন এবং ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) নামে একটি নতুন দল গঠন করেন। তিনি এই দলের সভাপতি হন এবং এর সেক্রেটারি জেনারেল হন পশ্চিম পাকিস্তানের মাহমুদুল হক ওসমানী। এই সময় থেকে মওলানা প্রকাশ্যে বামপন্থী রাজনীতি অনুসরণ করতে থাকেন।
সময়েল পালাবদলের সাথে সাথে ১৯৫৭-র ৭ অক্টোবর দেশে সামরিক শাসন জারি করে জেনারেল আইয়ুব খান ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। তখন সকল রাজনৈতিক দলের কর্মকান্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ১২ অক্টোবর মওলানা ভাসানীকে কুমুদিনী হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করে কারাবন্ধি করা হয়। সেসময় তিনি ঢাকায় ৪ বছর ১০ মাস কারারুদ্ধ থাকেন।
বন্দী অবস্থায় বন্যাদুর্গতদের সাহায্য ও পাটের ন্যায্যমূল্যসহ বিভিন্ন দাবিতে কারাগারে ১৯৬২-র ২৬ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত অনশন ধর্মঘট পালন করেন। সরকার তাকে ৩ নভেম্বর মুক্তিদিতে বাধ্য হয়। কারাগার থেকে বের হয়ে মওলানা ভাসানী ন্যাশনাল ডেমোক্রাটিক ফ্রন্ট-এর রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত হন।
চীনের বিপ্লব দিবস-এর উৎসবে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ পেয়ে ১৯৬৩ এর ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা ত্যাগ করেন এবং চীনে প্রায় দেরমাস অবস্থান করেন।
১৯৬৪ সালে হাভানায় বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।
একই বছর ২৯ ফেব্রুয়ারি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি পুনরুজ্জীবিত করে দলের সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং একই বছর ২১ জুলাই সম্মিলিত বিরোধী দল (কপ) গঠনে ভূমিকা পালন করেন। এসময় তিনি আইয়ুব খানের প্রস্তাবিত মৌলিক গণতন্ত্রীদের দ্বারা গঠিত নির্বাচকমন্ডলীর কঠোর বিরোধিতা করেন এবং প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচনের পক্ষে আন্দোলন শুরু করেন।
১৯৬৭ সালে বিশ্ব সমাজতন্ত্র সোভিয়েতপন্থী ও চীনপন্থী এই দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে। পূর্ব পাকিস্তান ন্যাপও ভাগ হয় এবং মওলানা চীনপন্থী দলের নেতৃত্বে থাকেন। তিনি আইয়ুব সরকারকে সাম্রাজ্যবাদের লেজুড় হিসেবে গণ্য করেন এবং আইয়ুব খানকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের জন্য আন্দোলন শুরু করেন। এসময় তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং তাকে মুক্তি দানের জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। বিরোধীদলের কঠোর আন্দোলনের মুখে আইয়ুব খান পদত্যাগ করেন এবং সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় আসীন হন।
রাজনৈতিক সংকট নিরসনের জন্য ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ সালে পার্লামেন্ট নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে ৭ ডিসেম্বর তারিখ নির্ধারণ করেন। কিন্তু ১২ নভেম্বর (১৯৭০) পূর্ব পাকিস্তানে প্রলয়ঙ্কারী ঘুর্ণিঝড় হলে দুর্গত এলাকায় ত্রান ব্যবস্থায় অংশ নেয়ার কথা বলে ন্যাপ প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে সরে দাড়ান।
অনেকের মতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাঙ্গালীদের নেতৃত্বদানে অগ্রভাবে থাকা আওয়ামীলীগের জয়ের পথ প্রসস্থ করতে তিনি এ কৌশল অবলম্ভন করেছিলেন। কিন্তু ১৯৭০ সালের ৪ ডিসেম্বর ঢাকার পল্টন ময়দানে এক জনসভায় মওলানা ভাসানী স্পষ্টত ‘স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান’ দাবি উত্থাপন করেন।
মওলানা ভাসানী ১৮ জানুয়ারী ১৯৭১ পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভায় স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদানের জন্য শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আহবান জানিয়েছিলেন।
শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৬৬ সালের ৬ দফা দাবীতে সমর্থণ না দিলেও ১৯৭১ এর মার্চ মাসে শেখ মুজিবুর রহমানের অসহযোগ আন্দোলন এর প্রতি পূর্ণ সমর্থন প্রদান করেছিলেন।
২৫ মার্চ রাতে মওলানা ভাসানী সন্তোষে তার গৃহে অবস্থান করছিলেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী টাঙ্গাইলে তার বাড়িতে হানা দেয়। তিনি পাকিস্তান বাহিনীর দৃষ্টি এড়িযে টাঙ্গাইল ছেড়ে তার পিতৃভূমি সিরাজগঞ্জে চলে যান। পাকিস্তান বাহিনী তার সন্তোষের বাড়িটি পুড়িয়ে দেয়। মওলানা ভাসানী মোজাফ্ফর ন্যাপ নেতা সাইফুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে নৌকাযোগে ভারত সীমানা অভিমুখে রওনা হন।
অবশেষে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মইনুল হক চৌধুরীর সাহায্যে মওলানা ভাসানী ও সাইফুল ইসলাম ১৫/১৬ এপ্রিল পূর্ববঙ্গ অতিক্রম করে আসামের ফুলবাড়ী নামক স্থানে উপস্থিত হন। পরে তাদের হলদীগঞ্জ বিএসএফ ক্যাম্পে আশ্রয় দেয়া হয়। এরপর মওলানা ভাসানী ও সাইফুল ইসলামকে প্লেনে করে কলকাতায় পাঠিয়ে দেয়া হয় এবং পার্ক স্ট্রিটের কোহিনুর প্যালেসের ৫তলার একটি ফ্ল্যাট তাদের অবস্থানের জন্য দেয়া হয়। তবে অভিযোগ আছে, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কার্যত দিল্লি তাকে কৌশলে আটক রেখেছিলো।
এসময় বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ দু’বার কোহিনুর প্যালেসে এসে মওলানা ভাসানীর সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন এবং তার পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রার্থনা করেন। এসময় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সর্বদলীয় চরিত্র দেয়ার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে আট সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটিও গঠিত হয়েছিলো। যার সভাপতি ছিলেন মওলানা ভাসানী। ওই উপদেষ্টা কমিটির অন্যান্য সদস্য ছিলেন_ ১) তাজউদ্দীন আহমদ, ২) মণি সিং, ৩) অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ, ৪) মনোঞ্জন ধর প্রমুখ। মওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে ওই উপদেষ্টা কমিটির সভায় এই মর্মে অভিমত ব্যক্ত করা হয় যে, পূর্ববঙ্গের পূর্ণ স্বাধীনতা ব্যতিরেক অন্য কোন প্রকার রাজনৈতিক সমাধান গ্রহণযোগ্য হবে না।
১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে মওলানা ভাসানী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে একটি বিবৃতি প্রদান করেন। যা ভারতীয় বাংলা ও ইংরেজি দৈনিক পত্রিকায় গুরুত্বসহকারে প্রকাশিত হয়। এছাড়া মওলানা ভাসানী চীনের নেতা মাও সে তুং, চৌ এন লাই এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে তার বার্তা পাঠিয়ে তাদের অবহিত করেন যেন পূর্ববঙ্গে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ব্যাপকহারে গণহত্যা চালাচ্ছে। সেজন্য তিনি প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে অনুরোধ করেন এই মর্মে যে, তিনি যেন পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ না করেন। উপরন্তু মওলানা ভাসানী প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবার আহ্বান জানান।
১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল মওলানা ভাসানী সোভিয়েত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট কাছে পাকিস্তান বাংলাদেশের জনগণের ওপর যে বর্বরোচিত অত্যাচার চালাচ্ছে তার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন। ৩১ মে মওলানা ভাসানী অপর এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ দখলদার বাহিনীর সঙ্গে জীবনমরণ সংগ্রামে লিপ্ত। তারা মাতৃভূমি রক্ষার জন্য বদ্ধপরিকর। তারা এই সংগ্রামে জয়লাভ করবেই। ৭ জুন মওলানা ভাসানী অপর আরেক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশের সব অঞ্চল আজ দশ লাখ বাঙালির রক্তে স্নাত এবং এই রক্তস্নানের মধ্য দিয়েই বাংলার স্বাধীনতা আসবে।
দেশ স্বাধীনের পরে ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি তিনি ঢাকায় ফিরেন। তিনি ঢাকায় ফিরেই সর্বপ্রথম বাংলাদেশ ভৃখন্ড থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অপসারণের দাবি তোলেন।
দীর্ঘদিন বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্র গঠনের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া মওলানা ভাসানী শুরু থেকেই স্বাধীন রাষ্ট্রের সরকার থেকে কার্যত দুরেই ছিলেন। এমনকি তার পূর্বের নিয়মানুযায়ী কৃষক-শ্রমীক মেহনতী মানুষের পক্ষে অবস্থান নিয়ে তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সরকারের সাথে বিরোধে জড়ান। ’৭২ এর ২৫ ফেব্রয়ারি তিনি ‘হককথা’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রকাশনা শুরু করেন। অচিরেই পত্রিকাটির প্রচার সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে ভূমিকা রাখায় বঙ্গবন্ধুর সরকার পত্রিকাটি অল্পদিন পরেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। ১৯৭৩ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনের পর মওলানা দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্যের ঊর্ধগতি, আইন-শৃঙখলা পরিস্থিতির অবনতি এবং খাদ্য সংকটের প্রতিবাদে অনশন শুরু করেন।
১৯৭৪ সালের ৮ এপ্রিল তিনি হুকুমতে রাব্বানিয়া তরিকার প্রতিষ্ঠা করেন। এটা একটা সমিতি হিসেবেও পরিচিত ছিলো। সেময় মওলাণা ভাসানী আওয়ামী লীগ সরকার এবং ভারত-সোভিয়েতের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেন। ১৯৭৪ সালের এপ্রিল মাসে ছয়টি দল নিয়ে মওলানার নেতৃত্বে একটি যুক্তফন্ট গঠন করা হয়। এই ফন্ট ভারত-বাংলাদেশ সীমানা চুক্তি অবিলম্ভে রদ এবং বিরোধী দলের বিরুদ্ধে নির্যাতনমূলক কর্মকান্ড বন্ধ করার দাবি জানায়। ১৯৭৪ এর ৩০ জুন মওলানাকে গ্রেপ্তার করে টাঙ্গাইল জেলার সন্তোষে স্বীয় বাসভবনে গৃহবন্দী করা হয়।
মওলানা ভাসানী ফারাক্কা চুক্তিকে বাংলাদেশের স্বার্থের পরিপন্থী বলে মনে করেন। তিনি ১৯৭৬ সালের ১৬ মে রাজশাহী থেকে ফারাক্কা অভিমুখে এক লং মার্চে নেতৃত্ব দেন।
১৯৭৬ সালের ২ অক্টোবর তিনি খোদায়ী খিদমতগার নামে একটি নতুন সংগঠন গড়ে তোলেন এবং সন্তোষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি সন্তোষে একটি কারিগরি শিক্ষা কলেজ, মেয়েদের একটি স্কুল এবং একটি শিশু কেন্দ্র স্থাপন করেন। তিনি পাঁচবিবিতে নজরুল ইসলাম কলেজ এবং কাগমারিতে মওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। আসামে তিনি ইতিপূর্বে ৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিলেন।
তিনি আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে দিতে ৯৬ বছরে পদার্পণ করেন। কিন্তু বার্ধক্য বা ক্লান্তি তাকে কখনো থামিয়ে রাখতে পারেনি। ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর ৯৬ বছর বয়সে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। তাঁকে সমাহিত করা হয় তার প্রিয় সন্তোষে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়। বস্তুত: তিনি জাতীয়তাবাদী ও সমাজতান্ত্রিক আদর্শ-চেতনার সংমিশ্রণে একটি রাজনৈতিক দল গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর বিচিত্র এই রাজনৈতিক জীবন বিশ্লেষণ করলে- একটা কথা স্পস্ট বুঝা যায় যে, তিনি আজীবন মেহনতি মানুষের অধিকার, স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য লড়াই-সংগ্রামে কখনো পিছু হটেননি। বরং এই সকল লড়াই-সংগ্রামের জন্য জেল, জুলুম, হুলিয়াসহ নানা নির্যাতনের শিকার হন।
ক্ষমতাবিমুখ রাজনীতির এক মহান পুরুষ ছিলেন মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী।
সৈয়দ আবুল মকসুদ রচিত ভাসানী কাহিনী, দেশের সমস্যা ও সমাধান (১৯৬২) এবং মাও সে তুং-এর দেশে (১৯৬৩) অবলম্বনে।
আরআর