গতকাল
গতকাল থেকে আমি হঠাৎ মানুষ থেকে অমানুষ তারপর পশু হয়ে গেছি!
পূর্ণিমার চাঁদ উঠতেই জনমানবের চোখের সামনে একটি লাশ ভেসে উঠলো। শুধু যে জনমানব তা নয় কিছু পশুও নিজ আগ্রহে দেখছে মৃত লাশটাকে। কেউ হাসছে আবার কেউ মন খারাপ করে দেখছে। পশুদের ভাষা আমি বুঝি না তাই ওদের কথা কিছু বলতে পারলাম না। দূরে জনসেবায় নিয়জিত পুলিশের শব্দ শুনা গেলো। পশুরা নিজ দায়িত্বে সেখান থেকে চলে গেলো। দাঁড়িয়ে রইলো একদল মানুষ আর অমানুষ অপেক্ষায়, কিছু মানুষ আর অমানুষের জন্য।
কিছু সময় পরে দায়িত্বরত পুলিশ এসে হাজির হলো। নিয়ম অনুযায়ী সকল মানুষ ও অমানুষদের সরিয়ে জায়গা করে নিলেন। লাশের চারপাশে বৃত্ত করে দিলেন। সকলে বৃত্তের বাইরে দাঁড়িয়ে অস্কার জয়ী চলচিত্র দেখতে লাগলো খুব মনোযোগ দিয়ে।
পশুরা কিন্তু একেবারে চলে যায় নি, দূরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব দেখছে।
দায়িত্বরত পুলিশ মৃত ব্যক্তিটির পরিচয় জানার চেষ্টা করলো কিন্তু তার পকেটে কোন কিছুই খুঁজে পাওয়া গেলো না। মোবাইলটাও খুঁজে পেল না। অস্কার জয়ী দর্শকদের কাছে জানতে চাওয়া হলো দুর্ঘটনা কেমন করে হলো। তারা নীরব দর্শক তাই নীরব রয়ে গেলো।
অবশেষে মর্গের উদ্দেশে রওনা দিলো লাশ। ডাক্তার বাবু তাকে অনেক প্রশ্ন করলো কিন্তু পরিচয় বলতে পারলো না লাশটা।
এসব দেখে দেখে আমি মানুষ থেকে প্রথমে অমানুষ তারপর পশু হলাম। তার পর পশুদের দলে যোগ দিলাম। পশুরাও মানুষের ভাষা বুঝতে পারে না তবে তারা দেখতে পারে।
পশুদের দলে যোগ দেবার পর তাদের ভাষা বুঝতে পারলাম। তারা বলাবলি করছিল আর হাসছিল, ‘শালার মানুষ সুযোগ পেলে খালি টাকা পয়সা নয় চোখ-কিডনিও খুলে নিয়ে নিবে, শালা মানুষের বাচ্চা।’
তারপর থেকে আমি আজও পশু!
ব্যবধান!
মজিদ সাহেবের প্রতিবেশী রাকায়েত। প্রতিবেশীদের সাথে আমার জানা মতে ভালো সম্পর্ক থাকে। কিন্তু এরা ভিন্ন। প্রত্যেক দিন সকালে এদের ঝগড়া না করলে ভালো লাগে না। এটাকে ঝগড়া বললে ভুল হবে এটা আসলে একতরফা ঝগড়া।
মজিদ সাহেব প্রত্যেক দিন সকালে গরিব রাকায়েতের সাথে ঝগড়া করতে আসে। কিন্তু গরিব রাকায়েত তার কোন প্রতিউত্তর করে না। সে গরিব তার জন্য না। সে মানুষ তাই সে ঝগড়া করতে ভালোবাসে না।
মজিদ সাহেবের ঝগড়ার মডেল অন্যরকম। সে মুখে কোন ঝগড়া করে না। প্রত্যেক দিন ভোরে সবাই ঘুম থেকে উঠার আগে শুধু তার বাসায় জমা সকল নোংরা রাকায়েতের ঘরের দরজার সামনে রেখে আসে। এ নিয়ে রাকায়েতের বউ জরিনা প্রতিবাদ করতে চায় কিন্তু রাকায়েত কিছু বলতে দেয় না।
একদিন রাকায়েত সারাদিন রিক্সা চালিয়ে অনেকগুলো ফল কিনে বাড়ি ফিরলো। তার বউ ফল কেনা সম্পর্কে জানতে চাইলে সে কিছু বলল না।
পর দিন ভোর। সকলে ঘুম থেকে উঠার আগে রাকায়েত মজিদ সাহেবের ঘরের সামনে ফলগুলো রেখে আসলো।
বউ রাগে রাকায়েতকে বলল, ‘সারাদিনের কষ্টের ট্যাকা দিয়া ফল-ফলান্তি কিনা তুমি ওই খারাপ লোকটারে দিয়া আইলা কেন? যে আমাগোর প্রতিদিন ময়লা দেয়?’
রাকায়েত বউকে আদর করে বলল, ‘যার যা আছে সে তাইতো দিবো।’
বিবর্তনের ইতিহাস
উদ্ভাস সাহেব একজন বিজ্ঞানী। লোকে তাকে পাগল বলে। তবে মানুষের কোন ভুল নাই। তার কথা ও চলাফেরা দেখলে যে কোন মানুষ তাকে পাগল বলবে। কিন্তু সে নিজেকে সব সময় বিজ্ঞানী বলতেই ভালোবাসে। লোকে তাকে পাগল-ছাগল যাই বলুক না কেন, সে বিজ্ঞানী।
উদ্ভাস সাহেবের কাজ হলো বিজ্ঞানের ভুল ব্যাখ্যা সঠিকভাবে মানুষের সামনে তুলে ধরা। সে শুধু বিজ্ঞানীদের ভুল ধরতে ব্যস্ত হয়ে থাকে।
যেমন পৃথিবীর বিবর্তনে আমরা সবাই বানর থেকে মানুষ হয়েছি। কিন্তু বিজ্ঞানী উদ্ভাস এ কথা মানে না।
তার বিজ্ঞানের জ্ঞান মতে, ‘পৃথিবীর বিবর্তনে মানুষ থেকে বানর হয়েছে এবং প্রতিমূহুর্তে মানুষ থেকে বানর হচ্ছে। পৃথিবী যতদিন থাকবে মানুষ বিবর্তন হয়ে বানর হতে থাকবে...।’
আরআর