মুসলিম ল’ বোর্ড অভিযোগ করেছে, এ প্রশ্নমালা ত্রুটিপূর্ণ। তারা এটা বয়কট করবে। তিন তালাক উচ্ছেদে এমন ধরনের ‘ইউনিফর্ম সিভিল কোড’ ভারতের জন্য ভাল নয়।
এর আগে মুসলিমদের তিন তালাক বিষয়ে ইউনিফর্ম সিভিল কোড (ইউসিসি) বাস্তবায়নে জনগণের মতামত নেয়ার ঘোষণা দেয় দেশটির আইন কমিশন। এ উপলক্ষ্যে একটি প্রশ্নমালা প্রকাশ করে তা ৪৫ দিনের মধ্যে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
গত সপ্তাহে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে তিন তালাক প্রথার বিরোধিতা করা হয়। বলা হয়, একসঙ্গে তিন তালাক প্রথা ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে না।
সংবাদ সম্মেলনে মুসলিম ল’ বোর্ডের মাওলানা ওয়ালি রহমান বলেন, আইন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে না। বরং তারা কেন্দ্রের নির্দেশেই কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, ইউনিফর্ম সিভিল কোড এই দেশের জন্য ভাল নয়। এ দেশে অনেক সংস্কৃতির মানুষ রয়েছে। তাদের অবশ্যই সম্মান দেখাতে হবে। জনগণের ওপর ভারত কেবল একটি মতাদর্শ চাপিয়ে দিতে পারে না।
ইসলামি আইন অনুযায়ী, স্ত্রীকে তিনবারে তিন তালাক দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে স্বামীকে। ভারতের ল’ কমিশনের ওই প্রশ্নমালায়, তিন তালাকের এ বিধান বিলুপ্ত বা যথাযথভাবে সংশোধন করা হবে কিনা, সে বিষয়ে জনগণের মতামত চাওয়া হয়েছে। মুসলিম ল’ বোড বলছে, তিন তালাকের বিষয়টি কুরআন নির্ধারিত আইন। সুতরাং তা কেন্দ্র সংশোধন করতে পারে না।
মাওলানা ওয়ালি বলেন, মুসলিমরা ভারতের স্বাধীনতায় সমানভাবে অংশ নিয়েছে। অতএব তাদের অবদানকে অবমূল্যায়ন করা যেতে পারে না। দেশটিতে তারাও সমান অধিকারের দাবিদার।
এর আগে গত সপ্তাহে মোদি সরকার জানিয়েছে, তিন তালাক প্রথা অন্যায্য ও অসাংবিধানিক৷ এই প্রথা নিষিদ্ধ হওয়া উচিত৷ এটা মুসলিম নারীদের আত্মসম্মানের প্রশ্ন. এটা ধর্মীয় স্বাধীনতার গ্যারান্টির প্রশ্ন নয়৷ এটা ধর্মনিরপেক্ষতার সঙ্গে সংঘাতের প্রশ্নও নয়৷ সৌদি আরবের মতো দেশেও মুসলিম বিবাহ এবং ডিভোর্সের জন্য আলাদা বিধি আছে৷
পশ্চিমবঙ্গের এক নারীবাদী কর্মী নাজমা বেগম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘বিবাহ যদি পুরুষ ও মহিলার সম্মতিক্রমে একটা সামাজিক চুক্তি হয়, তাহলে সেই চুক্তি কি একতরফাভাবে ভেঙ্গে দেওয়া যায়? যায় না৷ যে কোনো চুক্তিই একতরফাভাবে ভেঙ্গে দেওয়া যায় না, এমনকি বাণিজ্যিক চুক্তিও নয়৷ আর এটা তো দুটো জীবনের বৈবাহিক বন্ধনের চুক্তি, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ছেলেমেয়েদের সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তার সঙ্গে স্নেহ ভালোবাসার মতো গভীর আবেগ৷ এত ভঙ্গুর হলে কি চলে? তিন তালাক প্রথার অবসান বৃহত্তর স্বার্থেই দরকার৷ সব প্রাচীন প্রথার একটা মূল্যায়ন হয় সময়ের সঙ্গে তাল রেখে৷'' ধর্ম কখনো অন্যায় অবিচারের কথা বলে না, এমনটাই মনে করেন নাজিমা বেগম৷
নারী সমাজের দাবি, সরকারের পক্ষপাত এবং মুসলিম পার্সনাল ল বোর্ডের প্রতিহত করার ঘোষণায় শেষ পর্যন্ত এ আইনটি ঠিক কোন দিকে গড়াবে তা দেখার বিষয়। তবে ভারতের মুসলিম পুরুষ চান দেশটির সরকার যেন কুরআন বিরোধী কোনো আইন প্রণয়ন না করেন।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে ও ইন্ডিয়া টাইমস