আওয়ার ইসলাম: দেশের ঐতিহ্যবাহি দীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগে অনুষ্ঠিত হলো জমকালো সাহিত্য মজলিস। শতাধিক সাহিত্যানুরাগী শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয় মজলিস। এতে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও গবেষক মাওলানা আহমদ মায়মূন।
অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মালিবাগ জামিয়ার সাহিত্যামোদি শিক্ষক, অনুবাদক ও লেখক মাওলানা আ.ন.ম শামসুল আলম। তরুণদের মাধ্যে আলোচনা করেন লিটলম্যাগ 'পরাগ' এর সম্পাদক মাহদী হাসান, ফিচার লেখক তানজিল আমীর, 'হেরার জ্যোতি'র নির্বাহী সম্পাদক আবদুল্লাহ মারুফ ও 'ঘাসফড়িঙ' সম্পাদক সুহাইল ইসলামসহ আরও অনেকে।
কওমি অঙ্গনে মাতৃভাষা ও সাহিত্যচর্চার দিকপাল হিসেবে পরিচিত যে কয়টা প্রতিষ্ঠান-মালিবাগ জামিয়ার তার অন্যতম। অনেকেই লেখালেখির হাতেখড়ি হয়েছে জামিয়ার এই সাহিত্য মজলিস থেকে। সেই ধারাবাহিকতায় আজও উক্ত অনুষ্ঠানে সাহিত্যের নানাদিক নিয়ে কথা বলেন আলোচকবৃন্দ।
'কী পড়ব, কিভাবে পড়ব?' বিষয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে মাওলানা আহমদ মায়মূন বলেন, জেনারেল শিক্ষিতদের সাহিত্যচর্চা আর আমাদের সাহিত্যচর্চার মাঝে মূল পার্থক্য হল, ওদের সাহিত্যচর্চা করাটাই মূল লক্ষ হয়। আর আমাদের মূল লক্ষ হল, দীনের প্রচার-প্রসার। আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দীন প্রচারের লক্ষে সাহিত্যচর্চা করি। তাই ওদের সাহিত্যচর্চার পথ ও পদ্ধতির সাথে আমাদের বিস্তর তফাৎ আছে। আমাদের কিছু ছেলেপেলে সাহিত্য শিখতে গিয়ে ঈমান-আমল থেকে বিচ্যুত হয়। এরকম সাহিত্য চর্চা থেকে মূর্খ থাকা ভালো। আমি ওই ছুড়ি তোমার হাতে তুলে দিতে পারি না, যা তুমি তোমার নিজের গলায় চালাবে। সাহিত্য চর্চা করবে দীনের দাঈ হওয়ার উদ্দেশ্যে। সাহিত্য বিষয়ে যারা ভালো ধারণা রাখে তাদের নির্দেশনায় তোমাকে ভালো লেখকদের পড়তে হবে। প্রচুর পরিমাণে পড়তে হবে। বাংলা ছাড়াও আরবিতে তোমার মাহের হতে হবে। উর্দূ এবং ইংরেজিটাও শিখতে হবে। আমি এখন টের পাই, ইংরেজিটা জানলে আরেকটু ভালো হত।'
মাওলানা শামসুল আলম বলেন, যে কোন বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রধান শর্ত হচ্ছে সে বিষয়ের দক্ষ লোকদের কাছে যাওয়া, তাদের লেকচার শোনা, তাদের বই পড়া। আমি মনে করি এর কোন বিকল্প নেই। সুতরাং বাংলায় দক্ষ হতে হলে বাংলা ভাষায় যারা অবদান রেখেছেন অবশ্যই তাদের বই পড়তে হবে। আর শব্দের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করতে তোমাকে অবশ্যই 'কথাসাহিত্য' পড়তে হবে।
গল্পের কলকব্জা বিষয়ে কথা প্রসঙ্গে মাহদি হাসান বলেন, গল্প লিখতে হলে গল্প বলতে হয়। যে ভাল গল্প বলতে পারে সে ভাল গল্প লিখতে পারবে। রবীন্দ্রনাথের মামা খুব ভাল গল্প বলতে পারতেন। পরবর্তীতে রবীন্দ্রনাথের বলায় গল্প লিখা শুরু করেন এবং একজন সফল গল্পকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
রাত নয়টায় শুরু হওয়া এ সাহিত্যাড্ডা চলে সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত। আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে স্বরচিত ছড়া-কবিতা আবৃতি এবং গল্পপাঠ করে জামিয়ার ছাত্ররা। 'আমার দেশ' শিরোনামে চমৎকার একটি রচনা প্রতিযোগিতাও হয় মজলিসে। দশমিনিটের এ রচনা প্রতিযোগিতাটি ছিলো উপভোগ্যের বিষয়। তিনজনকে স্পেশাল এবং পাঁচজনকে বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়।
মজলিস শেষে মুড়ি-চানাচুরের ব্যবস্থা করা হয়। নবীন লিখিয়েরা মুড়ি খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে প্রবীনদের সঙ্গে খোশগল্প, সাহিত্যালোচনাসহ স্মৃতিকথা ও আত্মনুভূতি প্রকাশ করে। এতে পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে আনন্দঘন মুহূত বিরাজ করে।
আরআর