আওয়ার ইসলাম: কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পাকিস্তানের দিকে জঙ্গীদের লঞ্চপ্যাডে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালানো হয়েছে, ভারত এ কথা ঘোষণা করার পর এক সপ্তাহ না-ঘুরতেই সেই হামলার প্রমাণ পেশ করার জোরালো দাবি উঠতে শুরু করেছে সে দেশের ভেতরেই।
পাকিস্তান আগেই এই ধরনের কোনও হামলার কথা অস্বীকার করেছে - এখন ভারতেও বিভিন্ন বিরোধী দলের রাজনীতিকরা কেউ ঠারেঠোরে, কেউ সরাসরি বলছেন ভিডিও বা ছবির প্রমাণ ছাড়া এটা বিশ্বাস করা কঠিন যে সত্যিই হামলা চালানো হয়েছে।
সরকার অবশ্য বুঝিয়ে দিয়েছে, তাদের এই মুহুর্তে কোনও প্রমাণ পেশ করার পরিকল্পনা নেই - এমন কী যারা প্রমাণ চাইছেন তাদের দেশপ্রেম নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে শাসক দল বিজেপি।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে ভারতের ডিরেক্টর জেনারেল মিলিটারি অপারেশনস পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের ভেতর সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে সফল হামলা চালানোর কথা যখন ঘোষণা করেন, তার কিছুক্ষণের মধ্যেই পাকিস্তান সেনাবাহিনী জানিয়ে দেয় সীমান্তে রুটিন শেলিং বা সংঘর্ষের বাইরে মোটেও কিছু হয়নি।
হামলা কি সত্যিই হয়েছে বা হলেও ঠিক কীভাবে হয়েছে, সে দিন থেকেই তা নিয়ে ভারতেরই কোনও কোনও মহলে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। কিন্তু এই হামলার যে প্রমাণ দেওয়া দরকার - প্রকাশ্যে এক ভিডিও বার্তার মাধ্যমে সে কথাটা প্রথম বলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তার বক্তব্য ছিল, ‘পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোকে সীমান্তে নিয়ে গিয়ে প্রমাণ করতে চাইছে আদৌ এরকম কোনও হামলা হয়নি। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলব, তিনি যেমন সেনাবাহিনী ও অন্যদের সঙ্গে মিলে পাকিস্তানকে ধরাশায়ী করেছেন - সেভাবেই পাকিস্তানের এই মিথ্যা প্রচারকেও ভুল প্রমাণ করে দিন।’ প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কেজরিওয়াল বিজেপির পাল্টা আক্রমণের মুখে পড়েন। ক্যাবিনেট মন্ত্রী ও বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ পাল্টা প্রশ্ন তোলেন সেনাবাহিনীর শৌর্যবীর্যে কি তিনি বিশ্বাস করেন না?
প্রসাদ বলেন বলেন, ‘কেজরিওয়ালের যদি সত্যিই ভারতীয় সেনার বীরত্বের ওপর আস্থা থাকবে তাহলে কেন তিনি অযথা মিথ্যা প্রোপাগান্ডায় প্রভাবিত হবেন?’ তবে ঘটনা হল, এই বিতর্কে পরোক্ষে সেনাবাহিনীকে টেনে এনেও সরকার বা শাসক দল প্রমাণ পেশের দাবি বন্ধ করতে পারেনি।বিজেপির এই বক্তব্যের পরদিন মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস নেতা সঞ্জয় নিরুপম বলে বসেন, প্রমাণ না-মেলা পর্যন্ত তিনি মনে করবেন এই দাবি জাল।গুজরাটের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী, কংগ্রেসের শঙ্কর সিং বাগেলা দাবি করেন বিজেপির এই ধরনের ভুয়ো নাটক সাজানোর অনেক ইতিহাস আছে। প্রমাণ পেশের দাবি জানান কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক দিগ্বিজয় সিংও, তবে আর একটু পরিশীলিত ভঙ্গীতে। দিগ্বিজয় সিংয়ের যুক্তি ছিল, ‘জাতিসংঘের সরকারি মুখপাত্র বা পর্যবেক্ষকরাও আমাদের বক্তব্য ভুল প্রমাণ করতে চাইছেন। পাকিস্তানের কথা ছেড়েই দিলাম, একটা নিরপেক্ষ সংস্থাও যদি এ ধরনের কথা বলে তাহলে আমাদের সেনাবাহিনীর বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখতে যা-করার সেটা কিন্তু করতে হবে।’
দেশের ভেতরে ও বাইরে এই প্রবল চাপের মুখেও ভারত কিন্তু মনে করছে এই মুহুর্তে তারা যেটুকু বলেছে সেটাই যথেষ্ট - এর অতিরিক্ত কোনও প্রমাণ দেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। স্ট্র্যাটেজিক বিশ্লেষক সুশান্ত সারিন তাতে কোনও ভুলও দেখছেন না। তার কথায়, ‘অভিযানের ফুটেজ কেনও প্রকাশ করা হচ্ছে না, তার কোনও ট্যাকটিকাল বা কৌশলগত কারণ থাকতে পারে - তবে এটা আবার সরকারের একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তও বটে।’ ‘তারা মনে করছে পাকিস্তানকে একটা বার্তা দেওয়া দরকার ছিল, সেটা দেওয়া হয়েছে - এই মুহুর্তে অযথা পরিস্থিতি আরও উত্তেজনাপূর্ণ করে তোলার কোনও দরকার নেই’, বলছেন সারিন।
তবে ভিডিও প্রমাণ পেশ না-করার পক্ষে যুক্তি যাই থাক, তাতে ভারতে যারা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে সন্দিহান তাদের মুখ কিন্তু বন্ধ করা যাচ্ছে না।সরকারের একটি সূত্র অবশ্য বলছে, সোয়াশো কোটির দেশে সবাই ঠিক একই রকম ভাবে ভাববে সেটা তারা কখনও আশাও করেননি।
সূত্র: বিবিসি
এফএফ