আমিন ইকবাল
বর্তমান সময়ে আলোচিত একটি বিষয় ‘কওমি শিক্ষাসনদের সরকারি স্বীকৃতি’। কওমি মাদরাসার শিক্ষা ব্যবস্থাপনা, শিক্ষাদানের বিষয় ও কওমি মাদরাসা শিক্ষাসনদের সরকারি স্বীকৃতির লক্ষ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে শিক্ষামন্ত্রণালয়। ৯ সদস্যের এই কমিটির আহ্বায়ক- জামিয়া ইকরার মহাপরিচালক মাওলানা ফরীদ উদ্দিন মাসউদ, সদস্য সচিব- গহরডাঙ্গার মাওলানা রুহুল আমীন। তবে কমিটি ঘোষণার মাত্র দুই দিনের মধ্যেই প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকসহ দেশের শীর্ষ আলেমরা।
কমিটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে যেখানে স্বীকৃতি বিষয়ে সম্ভাবনার সূর্য উদয় হলো, সেখানে অন্ধকার নেমে এসেছে এই প্রত্যাখ্যানের মধ্য দিয়ে। ফলে বাহ্যত সরকার ও শীর্ষ আলেমগণ স্বীকৃতি নিয়ে অনেকটা মুখোমুখি দাঁড়িয়েছেন। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য গঠনমূলক মতামত জানিয়েছেন তরুণ আলেম ও লেখকগণ। আওয়ার ইসলামের পাঠকদের জন্য ১ম পর্ব প্রকাশের পর এবার ২য় পর্ব।
ব্যক্তি স্বার্থ ও রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে কাজ করতে হবে
আলী হাসান তৈয়ব
সহ-সম্পাদক, দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ
কওমি সনদের স্বীকৃতি- দাবি নয় অধিকার। দাবি শুধু এটাই- উলামায়ে কেরামের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত ও কুশলী পরিকল্পনার ভিত্তিতেই যেন তা বাস্তবায়িত হয়। এর অন্যথা হলে ইতিহাস ক্ষমা করবে না। লাখ লাখ তরুণ এর চূডান্ত বাস্তবায়ন দেখার অপেক্ষায়। এ নিয়ে কোনো রাজনীতি বা স্বার্থের দ্বন্দ্ব অভিপ্রেত নয়। সব মহলের নেতৃবৃন্দকে ব্যক্তি স্বার্থ ও রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে কাজ করতে হবে।
তাল গাছ আমার বলে ঐক্য চাইলে হবে না
মুফতি মুহাম্মদ তাসনিম
তথ্য সচিব,কওমী সনদ স্বীকৃতি বাস্তবায়ন পরিষদ
বেফাকের নামেই স্বীকৃতি দিতে হবে- এই দাবি থেকে সরে আসা উচিত
মুহাম্মদ এহসানুল হক
সহকারী সম্পাদক, মাসিক রাহমানী পয়গাম
কওমি সনদের স্বীকৃতি নিয়ে বর্তমান সময়ে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে উত্তরণের জন্য আমার মনে হয় সবাইকেই সমঝোতায় আসতে হবে। সমঝোতার দুটি পথ হতে পারে- এক. বেফাকের দায়িত্বশীলদের মধ্যে বিরোধীদলীয় রাজনীতির সাথে যারা জড়িত তাদের বাদ দিয়ে নতুন একটি কমিটি করা। দুই. তৃতীয় কোন একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে নির্বাচিত করা। যাকে বেফাক মানবে, ফরীদ উদ্দীন মাসুদ সাহেবরাও মানবে। বেফাকের নামেই স্বীকৃতি দিতে হবে এই দাবি থেকে এখন বেফাকের সরে আসা উচিত।
তবে আমাদের মনে রাখতে হবে কওমি সনদের স্বীকৃতির ধারণা কিন্তু বেফাকই দিয়েছে। এবং স্বীকৃতির পক্ষে জনমত সৃষ্টির জন্য বেফাকই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে। সেই নব্বই দশক থেকে বেফাক স্বীকৃতির দাবিতে কাজ করছে। তাই সরকার যদি বেফাককে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে স্বীকৃতির পথে এগিয়ে যায় তাহলে সেটা কারো জন্যই কল্যাণকর হবে বলে আমার মনে হয় না।
সকল বোর্ডের নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব
মুহাম্মদ জামীলুল হক
শিক্ষক, জামেয়া কাসিমুল উলূম দরগাহ শাহজালাল রহ., সিলেট
পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে কওমি মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি থাকা জরুরি। বলা যায় নিজেদের প্রয়োজনেই স্বীকৃতি আবশ্যক। ভারত পাকিস্তানের কওমি মাদরাসা সরকার স্বীকৃত। সেখানকার মাদরাসাগুলো যুগযুগ ধরে স্বকীয়তা বজায় রেখে স্বাধীনভাবে পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশের কওমি মাদরাসাগুলোও নিজেদের স্বকীয়তা বহাল থাকবে, এমন নিশ্চয়তা পেলে সরকারি স্বীকৃতি নিতে পারে।
আমার মনে হয়- বেফাক-আঞ্চলিকসহ সকল বোর্ডের নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এক্ষেত্রে আল্লামা আহমদ শফী আহুত আজকের বৈঠকে সৃষ্ট জটিলতার অবসান হবে, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করছেন অনেকেই। আমরা আশা করব শীর্ষআলেমগণ কওমি মাদরাসার স্বকীয়তা ঐতিহ্য বহাল থাকবে- এমন নিশ্চয়তা পেলেই স্বীকৃতি নেবেন অন্যথায় নয়। জাতির আমানত হেফাজতের দায়িত্ব আলেমদের হাতেই।
আরো পড়ুন: কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিই কওমি মাদরাসার স্বীকৃতির পথে অন্তরায়: মুসলেহ উদ্দীন রাজু
আরআর