[caption id="attachment_11263" align="alignleft" width="472"] ফাইল ছবি[/caption]
আওয়ার ইসলাম: কওমি সনদের স্বীকৃতি বিষয়ে পরামর্শ গ্রহণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাক) আগামী ১৭ অক্টোবর সোমবার জাতীয় উলামা-মাশায়েখ সম্মেলনের উদ্যোগ নিয়েছে। এ সম্মেলনে ঈমান-আকিদা ও শিক্ষা-সংস্কৃতিসহ নানা পর্যায়ে প্রতিকূল পরিস্থিতির এই সময়ে উলামায়ে কেরামের করণীয় নির্ধারণ, ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়সহ সকল পর্যায়ে ঐক্যবদ্ধ অবস্থানের আলোচনাও করা হবে।
আ (৭ সেপ্টেম্বর) বুধবার জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম হাটাহাজারী মাদ্রাসা মহাপরিচালকের কার্যালয়ে বেফাক সভাপতি শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সভাপতিত্বে এক জরুরি বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন বেফাকের মজলিসে শূরা ও কার্যকরী পরিষদের সদস্য প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী, বেফাক মহাসচিব মাওলানা আব্দুল জাব্বার জাহানাবাদী, বেফাকের কেন্দ্রীয় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মুফতী আবু ইউসুফ, বেফাক সভাপতির প্রেসসচিব মাওলানা মুনির আহমদ, মাওলানা শফিউল আলম প্রমুখ।
বৈঠকে বেফাক সভাপতি আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, ঈমান-আকিদা ও শিক্ষা-সংস্কৃতিসহ নানা পর্যায়ে ইসলাম বিদ্বেষী নীতিগ্রহণ ও ষড়যন্ত্রের কবলে বর্তমানে উলামা-মাশায়েখ ও সাধারণ তৌহিদী জনতা এক গভীর সংকটময় সময় পার করছে। ৯০ ভাগ মুসলিম জনসংখ্যা অধ্যুষিত বাংলাদেশে শুধুমাত্র জাতীয় পর্যায়েই যে নাস্তিক্যবাদি নীতি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে তা নয়, বরং এখন দেখা যাচ্ছে উলামায়ে কেরামের ঐক্যকে বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্রসহ খাঁটি ইসলামি শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র ক্বওমি মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে আদর্শচ্যুত করার জন্যেও নানামুখী অপতৎপরতা দেখা যাচ্ছে। এমন প্রতিকূলতায় উলামায়ে কেরামের ঐক্যকে আরো জোরদার করার পাশাপাশি যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ও সম্মিলিতভাবে।
বেফাক সভাপতি আল্লামা শাহ আহমদ শফী কওমি মাদরাসার পরিচালক, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আলেমদের আবেগ দিয়ে নয়, বুদ্ধি ও বিচক্ষণতা দিয়ে দুনিয়াবী মোহের ঊর্ধ্বে কওম ও মিল্লাতের প্রত্যাশা ও স্বার্থকে সামনে রেখে কথা বলতে হবে এবং সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, কওমি মাদরাসাসমূহ রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থে নয়, বরং সরাসরি জনগণের সাহায্য সহযোগিতায় পরিচালিত হয়। উলামায়ে কেরামের দুনিয়াবী মোহ বিসর্জন দিয়ে ইসলামী শিক্ষা ও দাওয়াতী কার্যক্রমের প্রচার-প্রসার, দ্বীনের জন্যে একনিষ্ঠ মেহনত ও আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ হয়েই কওম তথা জাতি অকুণ্ঠ চিত্তে কওমি মাদ্রাসা ও উলামায়ে কেরামকে সবসময় সর্বাত্মক সমর্থন সহযোগিতা দিয়ে আসছে। জনগণ উলামায়ে কেরামকে ইসলামের জন্যে ত্যাগ-তিতীক্ষার আদর্শকে সমুন্নত রেখে দ্বীন-ইসলামের খেদমতেই সবসময় নিবেদিত দেখতে চায়। সুতরাং যে কোন উক্তি, বক্তব্য ও সিদ্ধান্ত নিতে দুনিয়াবী খ্যাতি, মোহ ও স্বার্থের বিষয়ে আত্মত্যাগী হয়ে ইসলামী শিক্ষার প্রচার-প্রসার এবং মুসলিম জাতিসত্ত্বার চেতনাবোধ ও দ্বীন-ইসলামের স্বার্থকে সমুন্নত রাখার বিষয়টাকে প্রাধ্যান্য দিতে হবে।
বেফাক সভাপতি কওমি স্বীকৃতি প্রসঙ্গে বলেন, আমরা কওমি সনদের স্বীকৃতির প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করছি না। তবে ইসলাম বিরোধী শিক্ষা আইন, নাস্তিক্যবাদি ও হিন্দুত্ববাদি চেতানার স্কুল পাঠ্যবই, বিতর্কিত শিক্ষা আইন এবং শিক্ষা বিভাগের নীতিনির্ধারণী ও গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহে একটি বিশেষসম্প্রদায়ের লোকজনের প্রাধ্যানতার বিষয়ে আমাদের যৌক্তিক দাবি পূরণকে আমরা প্রাধান্য দিতে চাই। কারণ, এসব বিষয়ে সমাধানে না পৌঁছালে শুধু জাতীয় পর্যায়ে ইসলামি চেতনাবোধ বিলীন করার ষড়যন্ত্রই বাস্তবায়িত হবে না, পাশাপাশি কওমি মাদরাসা শিক্ষার স্বকীয়তা ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্যকেও মারাত্মক হুমকির মুখে ঠেলে দেবে। আল্লামা শাহ আহমদ শফী স্পর্শকাতর যে কোন বিষয়ে মতামত দেওয়ার আগে আলেম সমাজকে বিচক্ষণতা ও সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেন।
বেফাক সভাপতির প্রেসসচিব মাওলানা মুনির আহমদ জানান, আগামী ১৭ অক্টোবর সোমবার জাতীয় উলামা-মাশায়েখ সম্মেলন সফলভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে একটি সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করে জোর প্রস্তুতি গ্রহণের জন্যে বেফাক সভাপতি মহাসচিবকে বলেছেন। বেফাক আয়োজিত জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে বেফাকের বাইরে অন্যান্য আঞ্চলিক বোর্ডের প্রতিনিধি এবং কওমি মাদ্রাসাসমূহের জেলা পর্যায়ের শীর্ষস্থানীয় আলেমদেরও কওমি সনদের বিষয়ে পরামর্শদানের জন্যে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সম্মেলনে বেফাক সভাপতি আল্লামা শাহ আহমদ শফী উপস্থিত থাকবেন বলেও জানিয়েছেন।
আরআর