সুলাইমান সাদী:
বলতে দ্বিধা নেই, চিত্রকলায় আমাদের চুলকানি আছে। চিত্রকলার কখ তাই পড়া হয় না। আড়ালে বড় হয় শিল্পের প্রধানতম এ মাধ্যমটি। শুধু বংলা ভাষা পর্যন্ত আসতে আমাদের সময় লেগেছে কয়েক যুগ। সাহিত্যে উত্তীর্ণ হওয়ার প্রথম সিঁড়িটি এখনও মাড়ানো হয়নি। তবু আশানুরাগে ভাষা সাহিত্য মিডিয়ায় গতি আসছে আমাদের। শিল্পপ্রণোদনা যদিও পায়নি সে গতিটি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ধীরে সেটাও হয়ে যাবে।
চিত্রকলা হয়ে উঠেছে আধুনিক শিল্পের প্রধান উৎস বা উপজীব্য। চিত্রকলার রঙ ঢঙ ছড়াছড়ি মাতামাতিও চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশের চিত্রকলা যদিও শিল্পের যাদুটা ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে চিত্রকলা তার চেহারার দ্যুতি পুরোপুরি ছড়িয়ে দিতে পেরেছে। আধুনিক-উত্তরাধুনিক বা স্বভাবজাত প্রাকৃত চিত্রকলার রঙ রুপে অনেক পরিবর্তন এসেছে। স্বভাবজাত প্রাকৃত চিত্রকলাই শিল্পের গোঁড়া । আধুনিকতা-উত্তরাধুনিতা তার পথ দেখায় কেবল।
.....................................................
মানুষ প্রগতিশীল প্রাণী। কোনও বিশেষ গোষ্ঠীর কপালে প্রগতিশীলতার লকব সেঁটে দেওয়া সাম্প্রদায়িকতা। আধুনিক চেতনা মানুষের স্বভাবজাত প্রগতিশীল চিন্তার বর্ধিত ফর্ম। অবশ্য ইউরোপীয় বুদ্ধি চিন্তা ও রুচির মধ্যে কোনও রাজকীয়তা না থাকায় তাদের শিল্পচেতনা ও সৃষ্টিশীলতায় অরাজক মাতামাতি লক্ষ করা যায়।
আধুনিক চিত্রকলায় দেশকাল স্বাপেক্ষে কমবেশি সবার অবদান আছে। মানুষ প্রগতিশীল প্রাণী। কোনও বিশেষ গোষ্ঠীর কপালে প্রগতিশীলতার লকব সেঁটে দেওয়া সাম্প্রদায়িকতা। আধুনিক চেতনা মানুষের স্বভাবজাত প্রগতিশীল চিন্তার বর্ধিত ফর্ম। অবশ্য ইউরোপীয় বুদ্ধি চিন্তা ও রুচির মধ্যে কোনও রাজকীয়তা না থাকায় তাদের শিল্পচেতনা ও সৃষ্টিশীলতায় অরাজক মাতামাতি লক্ষ করা যায়। কারণ এগুলিই তাদের একমাত্র সম্বল। শিল্পের অন্যান্য দেশগুলো সফর করার আগে ঘেঁটে নিতে পারি ‘আধুনিক’ শিল্পের হাড়কঙ্কাল।
ক্লদ মনে
কামিল পিসারো
অগস্ট রেনোয়া
এডগার দেগা
পল গগাঁ ১৮৪৮-১৯০৩।
পল সেজান ১৮৩৯-১৯০৬।
ভ্যান গঘ ১৮৫৩-৯০।
মাতিস ১৮৬৯-১৯৫৪।
এরা ইমপ্রেশনিস্ট ও উত্তর ইমপ্রেশনিস্ট শিল্পের জনক। প্রকৃতিবাদী চেতনা ও প্রতীকের সাহায্যে পৃথিবীর মুখ দেখেন। প্রকৃতির মগ্ন সরোবরে নিজেদের ভাসিয়ে দিয়ে আরাম অনুভব করেন।
পল সেজান, আভাগাদ চিত্রকলার জনক,১৮৩৯-১৯০৬।
পাবলো পিকাসো, ১৮৮১-১৯৭৩, স্পেনের মালাগা।
জর্জেস ব্রাক, ১৮৮২-১৯৬৩, ফরাশি।
কবি রাইনে মারেয়া রিলকে, ১৮৭৫-১৯২৫।
ফার্নান্দ লেজের, ১৮৮১-১৯৬৫, ফরাসি।
রবের ডিলোনে, ১৮৮৫-১৯৪১,ফরাশি।
হোয়ান গ্রিস. ১৮৮৭-১৯২৯,স্পেন।
মার্সেল দুশাঁ, ১৮৮৭-১৯৬৮, মার্কিনি।
হোয়ান মিরো, ১৮৯৩-১৯৮৩, স্পেন।
উইফরেডো ল্যাম ,১৯০২-১৯৮২, কিউবান।
এরাই আধুনিক শিল্পের অনুপ্রেরণা। এদের শিল্পউপাদানে গড়ে উঠেছে আধুনিক শিল্পের শরীর। এদের মধ্যে পাবলো পিকাসোর নামটা বেশি উচ্চারিত। স্পেনিশ এ শিল্পী গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন চিত্রকলার প্রাচীন সব ধারা। এক পর্যায়ে তিনি আধুনিক উন্মাদনাকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন। বিরোধিতা করেছেন এবস্ট্রাক্ট বা বিমূর্ত শিল্পের। তার প্রধান যাদুকরি মন্ত্র, ‘আমি বাস্তবতার পুনর্নির্মাণ করি’। তার মতে বাস্তবতাই প্রথম শিল্পীর চেতনায় কড়া নাড়ে। শিল্পীকে দেয় নতুন জীবন। নকশা ও রঙ ব্যবহার করেছেন তিনি ‘অস্ত্রের মত’ ।
পিকাসো আর জর্জেসের প্রচারণায় কিউবিজমের পত্তন। অর্ফিজম, ফিউচারিজম ও অংশত এক্সপ্রেশনিজম যার ছায়াউৎস। মৌলিকভাবে আধুনিক চিত্রকলা যে মতবাদগুলোর সমন্বয় সেগুলো হলো-ফভিজম, এক্সপ্রেশনিজম, ফিউচারিজম, কিউবিজম, ডাডাইজম, সুররিয়ালিজম। আরও অনেক মতবাদ আছে যেগুলো এ মতবাদগুলোরই উৎসসংকেত বা এগুলো থেকে বের হয়ে আসা কার্যকর চিন্তা। তবে উল্লেখিত মতবাদগুলো পর্যালোচনা করলেই আধুনিক শিল্পের কাঠামোটা ধরতে পারব আশা করি।
হুলুস্থুল প্রাণীরা
প্যারিসে ১৯০৫ সালে একটি প্রদর্শনী হয়। এক সমালোচক যার নাম দেন ‘লে ফভস’-হুলুস্থুল প্রাণীরা। সেখান থেকে ফভিজম। শতাব্দীব্যাপী চর্চা হয়ে আসা শিল্পচেতনা দলিয়ে মাড়িয়ে গিয়েছিল প্রদর্শনীটি। হাজির করেছিল নতুন আঙ্গিক। প্রদর্শনীটি যে ন’জন শিল্পীর চিত্রকর্মে সমৃদ্ধ হয়েছিল তারা হলেন-
আঁরি মাতিস ১৮৬৯-১৯৫৪।
আরকেয়ার মারকুএৎ ১৮৫৭-১৯৪৭।
আঁদ্রে দিরেঁ ১৮৮০-১৯৫৪।
মারিস ব্লামিংক ১৮৭৬-১৯৫৮।
আঁরি শার্ল ম্যাংগুইন ১৮৭৪-১৯৪৫।
শার্ল কসিঁ ১৯৭৯প্রয়াত।
জাঁপাই ১৮৭৬-১৯৬০।
ওথন ফ্রিগজ ১৮৮৯-১৯৪৯।
জর্জেস রুঅলৎ ১৮৭১-১৯৫৮।
মূলত ইমপ্রেশনিজম বা প্রকৃতিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন এরা। ছবির রঙরুপরেখা যখন ইঙ্গিত ও যান্ত্রিকতায় ধূসর হয়ে উঠছিল তখন এরা তীব্র কড়া চড়া রঙের ঝলক ওঠালেন। পুরনো বিকৃত রেখামালা, সমতল কাঠামো ও প্রথাগত খরতার সামনে এসে লাগিয়ে দিলেন ঝলমলে রঙের হোলি।
ফভিস্টদের সবচেয়ে বড় প্রেরণা মুসলিম চিত্রকলা। হুবহু প্রাণীর ছবি আঁকা ইসলামে নিষিদ্ধ হওয়ায় মুসলিম চিত্রকররা বিমূর্ত চিত্রকর্মের দিকে ঝোঁকেন। তাবত শিল্পী মননে খুঁজে পায় ভেতরমুখি ছবির ধ্যান। মুসলিম চিত্রকলাকে রাহবার বানিয়ে বিশ শতকের শুরুর দিকে উদ্ভাস ঘটে বিমূর্ত শিল্পের। ফভিজম ছিল যার বাঁক ফেরানো ঢেউ।
রঙের মোহে এরা গুলিয়ে দিলেন বস্তুর আাসল আদল। রেখার টানে ফুটিয়ে তুললেন পৃথিবীর নতুন চেহারা। দর্শককে মাতিয়ে রাখলেন রুপের অনিমেষ উৎসবে। চিত্রকলাকে মুক্তি দিলেন প্রতিচিত্রনের একঘেয়েমি থেকে। দেখালেন, বিষয়বস্তু চিত্র বা ভাস্কর্যর মূল নয়, বর্ণ বা প্রকরনই আসল। বিষয়বস্তুর প্রশ্ন উড়িয়ে দিয়ে হুললুস্থুল প্রকরনে চারিয়ে দিলেন ফভিজমের ভূত।
ফভিস্টদের সবচেয়ে বড় প্রেরণা মুসলিম চিত্রকলা। হুবহু প্রাণীর ছবি আঁকা ইসলামে নিষিদ্ধ হওয়ায় মুসলিম চিত্রকররা বিমূর্ত চিত্রকর্মের দিকে ঝোঁকেন। তাবত শিল্পী মননে খুঁজে পায় ভেতরমুখি ছবির ধ্যান। মুসলিম চিত্রকলাকে রাহবার বানিয়ে বিশ শতকের শুরুর দিকে উদ্ভাস ঘটে বিমূর্ত শিল্পের। ফভিজম ছিল যার বাঁক ফেরানো ঢেউ। মাতিস ও তার সহযোগীরা যার পথিকৃৎ। চলবে...
এসএস