শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল কুরআন-সুন্নাহর আইন ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না : মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী শীত ও শৈত্যপ্রবাহ নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস ফ্যাসিবাদ বারবার ফিরে আসবে, সতর্ক থাকতে হবে: গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা

কবি ফুয়াদ রিফকা ও তাঁর কবিতা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

fuad_rifka 
অনুবাদ; তুহিন খানআওয়ার ইসলাম

 

গেল শতকের পঞ্চাশের দশকে বৃহত্তর আরব ভূখণ্ডে চলছিল ভৌগোলিক স্বাধীনতা প্রাপ্তি কিংবা অর্জনের সংগ্রাম। আর এই সংগ্রামের পাশাপাশি শুরু হয়েছিল বুদ্ধিবৃত্তির নবতর বিন্যাসের প্রলম্বিত প্রয়াস, যার সূত্রপাত ঘটেছিল স্থবির আরবি সাহিত্যের নতুন গতিপথ নির্ধারণের প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে।

 

এই প্রচেষ্টায় লেবানিজ কবি ইউসুফ আল খাল এবং সিরিয়ান কবি এদোনিসের সঙ্গে যুক্ত আরো এক মহানায়কের নাম-ফুয়াদ রিফকা। এদের হাত ধরেই আরবি কবিতা ছোঁয়া পায় আধুনিকতার।

রিফকার জন্ম লেবাননের প্রত্যন্ত গ্রাম কাফরুনে, ১৯৩০ সালে। পরে তিনি সপরিবারে লেবাননে আসেন। বৈরুত বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন নিয়ে অধ্যয়নের পর মার্টিন হাইডেগারের ওপর গবেষণার জন্যে জার্মানির তুবেনজেন বিশ্ববিদ্যালয় যান এবং ১৯৬৫ সালে পিএইচডি অর্জন করেন। ১৯৬৬ সাল থেকে বৈরুতের লেবানিজ-আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন পড়াচ্ছেন।

 

রিফকার প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৯৬১ সালে। এযাবত তার প্রকাশিত কাব্যসংখ্যা ১৪ টি। জার্মান ও ইংরেজি ভাষার বহুগ্রন্থ, নোভালিস, হোলড্রিন এবং রিলকের মত কবিদের কবিতা তিনি আরবিতে অনুবাদ করেছেন।

 

কবিতা ও অনুবাদে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি The Gundolf Prize (২০০১) এবং The Mediterranean Prize পান।

fuad_rifka2
ইচ্ছা

ক্ষুধার্তের জন্য তার কবিতা হয়ে উঠুক
রুটি ও যয়তুন;
তৃষ্ণার্তের জন্য হোক
শীতল জলধারা!
উদ্বাস্তুর জন্য হয়ে উঠুক
ঘর এবং ঘরের পিদিম,
জীবনের জন্য এই কবিতা হয়ে উঠুক
পদ্ম ও শিশির
কষ্টার্জিত ফসলের স্তুপ!

অগ্নিস্ফুলিঙ্গ

তার কবিতায় আছে একধরনের কম্পমান
অগ্নিস্ফুলিঙ্গ।
যা তার চোখের পাতা ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়
সেগুলোকে প্রসারিত করে কোন এক
পলায়নপর দিগন্তের দিকে
অথচ কুয়াশায় সেই শিখা লুকিয়ে যায়
দাঁড়ি, কমা ও বর্ণের আড়ালে!

বাগান

বেড়া এবং দেয়াল আছে,
বিপদের কথা ভুলে গিয়ে
আঙুর বাগানে আনমনে জেগে আছে চৌকিদার!
রাতের বেলা
দরজায় কড়া না নেড়েই, দৃঢ়পায়ে
শরত্‍ চুপিচুপি এসে প্রবেশ করে গাছের ভেতর
তাদের ফলে ফলে ভরিয়ে তোলে আর
সেগুলো পাথার ফাঁকে ঢেকে রাখে।
(মেঘের ভেতর থেকে একটি কণ্ঠ বলে ওঠে)
প্রার্থনা করো এবং দেখতে থাকো
কেউ জানে না
কখন চোর আসবে!

চিন্তা

তার চোখ আর অশ্রুর মাঝে
পড়ে থাকে একটি সদাপ্রস্তুত স্যুটকেস
আর অনেক অনেক দীর্ঘ যাত্রার দূরত্ব
যেন অচেনা কোন ভূমিতে দেখা যায়
অনুভব করা যায়

কবিতার মৃদু অগ্নিতাপ!

তীর

পৃথিবীর অন্ধকার ছিঁড়েখুড়ে
একটি তীর ছুটে যায় সমুখে!
বাতাসের মধ্যেই শুরু হয় প্রবল
কম্পন
তারপর তীব্র দহন
অবশেষে পড়ে থাকে ছাইভস্ম!

ঐ তীর আর তার মাঝে
তবুও থেকে যায়
কেমন সুদূরবিস্মৃত এক বন্ধুত্ব!

অমানিশা

কাঠকুড়ুনীর কী হলো?
আগে তো সে রোজ ভোরবেলা
পর্বতের কাঁধে চেপে
পাখিদের মত গাইতো,
আর আজ একেবারে কথাই বলছে না
নির্জন গুহায় পড়ে থাকা পাথরের মত
একদম বোবা হয়ে আছে!
কে জানে! হয়ত সে ক্লান্ত খুব।
আর ক্লান্ত হয়ে পড়লে
নদী খোঁজে সমতল ভূমি
ভালোবাসে সমুদ্রের অমানিশা!

ফুল

বিজন বনভূমিতে
কোন এক জলাশয়ের তলদেশ থেকে
ফুটে উঠছে একটি ফুল
সূর্যের নীচে, পানির উপরে
তার চোখের পাতাগুলো উন্মোচিত করছে
মৌমাছিদের জন্য একটি দ্বীপ!

শুকতারা

একদম শেষরাতে
সে স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে
শুকতারাটির দিকে!
তারাটি সারারাত একা একা
জানালায় আলো দিয়ে যায়
সে সারারাত একা একা
জানালা খুলে বসে থাকে;
দুই বন্ধু ওরা,
মাঝখানে আস্ত একটা আকাশ!

কানাকানি

পথিকের কানে কানে নদী বলে
আমিই অনন্ত যাত্রা!
নদীর কানে কানে সমুদ্র বলে
আমি তবে জাহাজ!
মহাকালের দূরত্ব সমুদ্রের কানে কানে বলে
আর আমি তাহলে কাপ্তান!

বিষন্নতা

তার ডানহাতে চঞ্চল হয়ে ওঠে সূর্য
তার বামহাতে চাঁদ হয়ে ওঠে সবুজ
আর তার হৃদয়ে আছে
ভালোবাসার রাজকন্যা!
উফ, তবু, এই বিষন্নতা,
কালোপাতাদের মত বিষন্নতা!
কেন?
কোত্থেকে?

বিস্ময়

বসন্তের রাত!
আকাশে ঘুরছে হৃষ্টপুষ্ট চাঁদ
নিচে একটি উচ্ছল পাথর
একটি ঝর্ণাধারার মৃদু গুঞ্জন!
আর তবুও কী অদ্ভুত প্রশ্ন করে ওরা-
কী হয়েছে তোমার?’
‘কিছু বলছ না কেন?’

এসএস


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ