ওমর শাহ : ‘ইসলাম নারীকে নির্যাতন ও জোরজবরদস্তি থেকে মুক্তি দিয়েছে। আমাদের সমাজে মূল্যবোধ কমে যাওয়ার কারণে মানমর্যাদা ও আত্মসম্মানবোধের নামে ইসলামের বিধান নিয়ে তামাশা করা হয়। আত্মসম্মানের নামে হত্যা করা শুধু একটি মানবের জীবন শেষ করাই নয়, বরং ইসলামের ওপর হামলার নামান্তর।’
পাকিস্তানের দৈনিক জং- এ ‘মেকি আত্মসম্মানবোধ’ শিরোনামে প্রকাশিত এক কলামে এ কথা বলেন পাকিস্তানের জিও টিভির নির্বাহী সম্পাদক হামিদ মীর। পাকিস্তানে পালিয়ে যেয়ে স্বেচ্ছায় বিয়ে করার কারণে এক নারীকে পুড়িয়ে মারার সমালোচনায় তিনি এ মন্তব্য প্রতিবেদনটি লেখেন।
হামিদ মীর বলেন, আত্মসম্মানবোধের নামে হত্যাকে প্রতিহত করতে কঠোর আইন প্রয়োজন। যাতে হত্যাকারীকে ইসলামি বিধানের বিরুদ্ধাচরণের জন্য এত কঠিন শাস্তি দেয়া যায় যে, সে স্মরণীয় দৃষ্টান্তে পরিণত হয়।
তিনি বলেন, এ রকম অনেক ঘটনায় জালেম পিতা-মাতা তাদের মেকি মানমর্যাদা ও আত্মসম্মানবোধের নামে মিথ্যাও বলে, ধোঁকাও দেয়। হত্যা ও নির্যাতন করে ধর্মের আবরণে লুকানোর চেষ্টাও করেন। ধর্ম সন্তানদের পিতা-মাতার আনুগত্য ও সেবার আদেশ অবশ্যই করেছে, তবে ওই আনুগত্যের উদ্দেশ্য এটা নয় যে, সন্তানের সাথে গোলামের মতো আচরণ করা হবে। আমরা এটা কেন ভুলে যাই যে, হজরত খাদিজা রা: ও আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে পছন্দের বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। হজরত খাদিজা রা: তাঁর বান্ধবী নাফিসার মাধ্যমে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মতামত জেনে নেন। অতঃপর উভয় পরিবারের মুরব্বিরা বিয়ের কার্যক্রম চূড়ান্ত করেন।
ইবনে মাজাহতে বিয়ে অধ্যায়ে হজরত বুরাইদা বিন হুসাইব রা: বর্ণিত হাদিসে আছে, এক যুবতী নারী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে হাজির হয়ে আরজ করলেন, আমার পিতা তার ভাতিজার সাথে আমার বিয়ে দিয়েছেন, যাতে করে তার অমর্যাদাকর অবস্থা আমার কারণে সমুন্নত হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওই নারীকে বিয়ে ভেঙে দেয়ার অধিকার দিলেন। অধিকার পাওয়ার পর ওই নারী বললেন, আমার পিতার দেয়া বিয়েকে কবুল করছি; তবে আমি চাই, মেয়েরা জেনে নিক যে, সন্তানের ওপর জোরজবরদস্তি করার কোনো অধিকার পিতা-মাতার নেই।
জোরজবরদস্তি বিয়ের বিরুদ্ধে ভদ্রলোকদের বিদ্রোহের ধারা ইসলামের সূচনা থেকেই শুরু হয়েছিল। আর মুসলমানদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদা জোরজবরদস্তি বিয়ের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। সুতরাং নিজের কন্যা অথবা বোনকে তার পছন্দের বিরুদ্ধে বিয়েতে বাধ্য করা ইসলামবিরোধী। বিয়ে অস্বীকারকারী অথবা পছন্দের বিয়েকারী নারীকে হত্যা করা অথবা পুড়িয়ে মারা মূলত ইসলামের বদনাম করার নামান্তর।