.
মাহিন মাহমুদ; ওমান থেকে
۞
তখন সন্ধ্যা মিলিয়ে গেছে। রাতবুড়িটা বেশ কিছু আঁধার ঢেলে দিয়েছে আকাশ জুড়ে। আমরা হাঁটছি। আমি আর জাকির ভাই। স্ট্রিট লাইটের আলোর কল্যাণে আমাদের শরীরের ছায়াগুলো আগুপিছু হচ্ছে। দেখতে খারাপ লাগছে না।
۞
আমরা যাচ্ছি একটা বিয়েতে। ওমানি বিয়ে। বিয়ে জিনিষটা মজার। একবার খেলে বারবার খেতে ইচ্ছে করে, আমাদেরও করছে। তাছাড়া ওমানি বিয়ে বলে কথা! ওমানের মসজিদগুলো চমৎকার। এর মধ্যে 'সুলতান তাইমুর' মসজিদটি অন্যতম। আমরা মসজিদে ঢুকলাম। ভাবছেন, বিয়ে খেতে এসে মসজিদ কেন? ভাবাভাবির কিছু নেই। ওমানি বিয়েগুলো মসজিদেই হয়। সুন্নাত তরিকায়। আমাদের দেশে যা এখন প্রায় অকল্পনীয় বিষয়।
۞
ইশা'র নামাজে আজ ভরপুর মুসুল্লি। অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি। না হবে কেন, আজ যে বিয়ে! বর এবং কনেযাত্রীরা সবাই সাদা জোব্বা-টুপিতে সজ্জিত। ওমানি টুপিগুলো বিশেষ কায়দায় তৈরি। দেখতে ভালো লাগে। জোব্বাগুলোও। এ দেশের জাতীয় পোশাক। যা অ-ওমানিদের পড়া নিষিদ্ধ।
۞
নামাজ শেষ। বিয়ে পড়ানো শুরু হল। সুন্নাত তরিকার বিয়ে। এখানে মেয়েদের আসার কোন চান্স নেই। তাই কোন হৈ-হুল্লোড়, হাঙ্গামারও অবকাশ নেই। দু'পক্ষের শুধু পুরুষ সদস্যরাই উপস্থিত। বিয়ে পড়ানো শেষ হলো। ওমানি হালুয়া দিয়ে সম্পন্ন হলো মিষ্টান্ন পর্ব। 'গাওয়া' নামক কফি সদৃশ তিতকুটে এক পদার্থ বিতরণ করা হচ্ছে। এর কিছুটা গলায় ঢেলে নিলাম অতি আদরে। খেতে খারাপ হলেও, এই জিনিষে চাঙ্গা হওয়া যায় মুহূর্তেই। এবারে খাবারের মূল আয়োজন।
۞
মসজিদের সামনে বিশাল চত্বর। অনেকগুলো দস্তরখান বিছানো সেখানে। বলা হলো- 'চার চারজন করে বসে যাই'। এখানেও সুন্নাতের প্রতিফলন। একপ্লেটে চারজন বসা চাই। আমরা দু'জন আরো দু'জনকে নিয়ে বসে গেলাম। পেটজুড়ে খিদেপোকারা এরই মধ্যে কিলবিল-বিলকিল করছে। সুতরাং অপেক্ষা অসম্ভব।
۞
প্রমাণসাইজ ডিশে করে খাবার চলে এল মুহূর্তেই। বিশেষ পদ্ধতিতে রান্না করা গরুর মাংস আর বাসমতি চালের পোলাও। খেয়ে দেয়ে তৃপ্ত হয়ে ঢেকুর তুললাম। মনে মনে বললাম- 'নাহ, ওমানি বিয়ে জিনিষটা খারাপ না।'
আরআর