শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল কুরআন-সুন্নাহর আইন ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না : মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী শীত ও শৈত্যপ্রবাহ নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস ফ্যাসিবাদ বারবার ফিরে আসবে, সতর্ক থাকতে হবে: গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা

যে কারণে ইসলামের ছায়াতলে ৩ মার্কিন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

markin_muslim

ঢাকা: ধর্মের পরিবর্তন হচ্ছে আপনার অতীত বিশ্বাসের সঙ্গে এক প্রকার যুদ্ধ এবং গভীরভাবে চিন্তা করা যে, আল্লাহ কে?

আত্মার অনুসন্ধান ও ইসলামে ধর্মান্তরিত হওয়ার সময়টা বর্তমানে আমেরিকায় একটা বাড়তি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানে প্রতিনিয়ত ইসলাম ভীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং মুসলমানদেরকে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস রক্ষার জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হচ্ছে।

ধর্মান্তরিতরা কোথা থেকে এসেছে এবং তাদের ধর্মীয় গন্তব্য কি ছিল ইত্যাদি। ধর্মান্তরিতদের  প্রায়ই তাদের বিশ্বাসের যাত্রায় এসব অপ্রত্যাশিত মন্তব্যের মুখোমুখি হতে হয়।

 সাম্প্রতি হাফিংটনপোস্ট ইসলামে দিক্ষিত তিনজন আমেরিকান নওমুসলিমের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। সেখানে তাদের বলা হয়েছিল-ইসলামের পতাকা তলে আশ্রয় লাভে কোন বিষয়গুলো তাদের প্রভাবিত করেছিল; তা তাদের নিজের ভাষায় ব্যাখ্যা করতে। এখানে আরটিএনএন পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো নওমুসলিম ওই তিন মার্কিন নাগরিকের  অভিজ্ঞতার কথা।
.
‘‘ক্যাথলিক বিশ্বাসে ঈশ্বরকে রাগী এবং শাস্তিপরায়ণ বলে মনে হত’’

[caption id="" align="alignright" width="353"] তিনি ‘আমাদের ঘাড়ের শিরা চেয়েও কাছাকাছি’ অবস্থান করেন। এ জন্য কুরআন শিক্ষা এবং নামাজের মাধ্যমে আমাদের বিশ্বাস এবং আধ্যাত্মিকতা বৃদ্ধির জন্য সবাইকে প্রচেষ্টা চালানো দরকার।ক্রিস্টিন  জ্রেমসস্কি (৫৫)। ওয়াশিংটন ডিসির এই নারী খ্রিস্টীয় লুথেরান চার্চ থেকে ইসলামে ধর্মান্তরিত হন।[/caption]

যেমনটি বলছিলেন ৫৫ বছর বয়সী এই নারী, ‘আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাসের যাত্রা আল্লাহ সর্ম্পকে বোঝার স্বচ্ছ ধারণা এনে দিয়েছে। এর অর্থ এই নয় যে, আমি আল্লাহ সম্পর্কে সবকিছু জানি কারণ তার সম্পর্কে বোঝার ক্ষমতা আমাদের খুবই সীমিত। কিন্তু যখন আমি একজন প্রোটেস্ট্যান্ট এবং পরে যখন একজন ক্যাথলিক ছিলাম তখন ঈশ্বরকে একজন রাগী এবং শাস্তিপরায়ণ বলে মনে হত।’

‘কিন্তু ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পর আমার সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ইসলাম আমাকে শিখিয়েছে যে, আল্লাহ কেবল পরাক্রমশালীই নয়, তিনি অসংখ্য গুণে গুণান্বিত।  তার ৯৯টি নাম থেকে আমি শিখতে পেরেছি, আল্লাহ হচ্ছে পরম প্রেম, করুণা, উদারতা, সহানুভূতি এবং বিশুদ্ধতার প্রতীক। এছাড়াও তিনি হচ্ছেন শ্রেষ্ঠ ন্যায় বিচারক এবং আমাদের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের হিসাব গ্রহণকারী।’

‘সুতরাং, আমার পূর্ববর্তী বিশ্বাস এবং ইসলামের সমন্বিত পথ আমাকে আল্লাহ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা এনে দিয়েছে। আর সেটা হল, মহান আল্লাহ হচ্ছেন আমাদের স্রষ্টা এবং তিনি একাই আমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং এর জন্য তাকে অন্য কারো সহায়তা নিতে হয়নি। আল্লাহ হচ্ছেন একক সত্ত্বা এবং একমাত্র তিনিই আমাদের উপাসনার যোগ্য।’

‘আমি অনুভব করতে পারি যে, আমাদের কাছে আল্লাহ খুব সহজেই প্রবেশযোগ্য। কেননা তিনি নিজেই আমাদের বলেছেন, তিনি ‘আমাদের ঘাড়ের শিরা চেয়েও কাছাকাছি’ অবস্থান করেন। এ জন্য কুরআন শিক্ষা এবং নামাজের মাধ্যমে আমাদের বিশ্বাস এবং আধ্যাত্মিকতা বৃদ্ধির জন্য সবাইকে প্রচেষ্টা চালানো দরকার। কেননা আল্লাহর দিকে আমরা এক পা অগ্রসর হলে তিনি (আল্লাহ) আমাদের দিকে দৌঁড়ে আসেন।’

‘’ইসলাম ধর্মনিরপেক্ষ ও ধর্মীয় জীবনের মধ্যে যে অস্পষ্টতা দুর করেছে’’

[caption id="" align="alignright" width="358"] ইসলাম আমাকে একেবারে আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে এসেছে এবং ধর্মনিরপেক্ষ ও ধর্মীয় জীবনের মধ্যে যে অস্পষ্টতা দুর করেছে।’[/caption]

সিমনি লোভানু (২৬)। নিউ জার্সির ব্রান্সউইকের বাসিন্দা। তিনি খ্রিস্টীয় ক্যাথলিক চার্চ থেকে ইসলামে দীক্ষিত হন।

সিমনি লোভানু হাফিংটন পোস্টকে বলেন, ‘ইসলামের পতাকা তলে আসা হচ্ছে আল্লার নিকট শান্তিপূর্ণভাবে নিজেকে সমর্পণ করা। আল্লাহ হচ্ছেন আমার চারপাশের সব কিছুর নির্মাতার একটি শক্তিশালী উপলব্ধি। ইসলামের অভিপ্রায় হলো একটি স্বীকৃতি যে, আমাদের সকল ক্ষমতা এবং জ্ঞান একমাত্র স্রষ্টা থেকেই আসে এবং তাকে স্মরণ করা এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এটি পালন করাই হচ্ছে ইসলাম। সবধরনের সাহায্যের জন্য আমাদের নিজেদেরকে আল্লার কাছে সমর্পণ করা, যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতে তাকে স্মরণ এবং তার অনুগহ লাভের জন্য প্রার্থনা করাই হল ইসলামের শিক্ষা। ইসলাম আমাকে একেবারে  আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে এসেছে এবং ধর্মনিরপেক্ষ ও ধর্মীয় জীবনের মধ্যে যে অস্পষ্টতা দুর করেছে।’

‘আমি আমার ইসলামের যাত্রায় আরো অনেক কিছু শিখব। ইসলামে আমি সর্বদা এক অদৃশ্য আল্লাহর একটি শক্তিশালী ধারণা লাভ করে থাকি। তিনি হচ্ছেন এক এবং অবিভাজ্য। তার কোন সঙ্গী নেই। তিনি হচ্ছেন স্রষ্টা  এবং সকল আকৃতির অবিরাম নির্মাতা। তিনি হচ্ছেন সর্বদা আমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল, পরম দয়ালু, শ্রেষ্ঠ বিচারক, শান্তির উৎস, সর্বশক্তিমান এবং শুরু থেকে শেষ।’

‘’ধর্ম-কর্ম পালনের জন্য খ্রিস্ট ধর্মের মতো একজন যাজকের উপর নির্ভরশীল নই’’

[caption id="" align="alignright" width="351"] ইসলামে আল্লাহর সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক অনেক বেশি ব্যক্তিগত, অনেক বেশি নিবিড় কারণ ইসলামের প্রচলিত ধর্ম-কর্মের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি ব্যক্তিগতভাবে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে। [/caption]

জেসিকা জোকসন ক্ল্যারমন্ট (৩৫)। তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দা। তিনিও খ্রিস্টীয় ক্যাথলিক ধর্ম থেকে ইসলামে দীক্ষিত হন।

জেসিকা জোকসন ক্ল্যারমন্ট বলেন, ‘আমি একটি ক্যাথলিক খ্রিস্টান পরিবার থেকে বেড়ে ওঠেছি এবং বেড়ে ওঠার সেই সময় থেকেই আমি অনুভব করতে থাকি আমার সকল ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান অন্ধ বিশ্বাস ছাড়া আর কিছুই না। এসকল ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমি কখনো আল্লাহর সঙ্গে আমার সরাসরি সংযোগের বিষয়টি অনুভব করতাম না।’

‘আমি অনুভব করতাম যে, আল্লাহ হচ্ছে একটি বিশাল ধারণা যা আমার বিশ্বাসে ছিল কিন্তু এটি কিভাবে আমার সঙ্গে সর্ম্পকিত তা আমি ওইসব ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে কখনো খুঁজে পাইনি। উদাহরণ স্বরুপ বলতে পারি, রোমান ক্যাথলিক চার্চে মানুষ অন্য লোকদের সামনে ধর্ম চর্চা করত কিন্তু সেখানে একজন ব্যক্তির জন্য আল্লাহকে একান্তভাবে স্মরণের অন্য কোনো উপায় ছিল না। যেকারণে ওই সব আচার-অনুষ্ঠান আমাকে টানত না।’

‘অন্যদিকে, ইসলামে আল্লাহর সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক অনেক বেশি ব্যক্তিগত, অনেক বেশি নিবিড় কারণ ইসলামের প্রচলিত ধর্ম-কর্মের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি ব্যক্তিগতভাবে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে। যেমন দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং রমজান মাসে রোজা পালনের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি নিবিড়ভাবে আল্লাহর সঙ্গে সংযোগ ঘটাতে পারে।’

‘আল্লাহর নিকট  আমার সম্পর্কের উন্নয়নের জন্য ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেই দায়ী এবং ইসলামের প্রচলিত ধর্মানুষ্ঠান পালন এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের দ্বারা আমি আমার প্রভুর সান্নিধ্য লাভ করছি। আমি এখন ধর্ম-কর্ম পালনের জন্য খ্রিস্ট ধর্মের মতো একজন যাজকের উপর নির্ভরশীল নই। ইসলামের এসকল ধর্ম-কর্ম আমি একান্ত ব্যক্তিগতভাবেই পালন করতে পারি এবং এতে আল্লাহর সঙ্গে আমার সরাসরি সংযোগও ঘটছে যা আমার পূর্ববর্তী ধর্মে ছিল না। আল্লাহকে অবিরাম স্মরণের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি অনিবার্যভাবেই ধীরে ধীরে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে। এভাবেই আল্লাহর সঙ্গে ব্যক্তির সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটে।’

‘আমি আমার প্রভুর নিকট অনেক বেশি কৃতজ্ঞ এবং কৃতজ্ঞতার সেই বোধটি এখন আমি বেশ ভালভাবেই অনুভব করতে পারি। সামগ্রিকভাবে শুধু সৌন্দর্য, আশীর্বাদ এবং জ্ঞান  যা আল্লাহ আমাকে দিয়েছে; এগুলোর কথা চিন্তা করলেও স্বাভাবিকভাবেই আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতার বোধ জন্মে।’

‘আমি মনে করি যে, আল্লার সঙ্গে আমার সংযোগ শুধু শুক্রবারের জুম্মা কিংবা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং আল্লাহকে স্মরণ এবং আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্য ইসলামে অগণিত সুযোগ রয়েছে এবং আমি সেগুলোই করছি।’

হাফিংটন পোস্ট অবলম্বনে ভাষান্তর মো. রাহুল আমীন

সূত্র: আরটিএনএন


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ