বেদনার আসমানে শোকের মিছিল
সাইফ সিরাজ
একটা করুণ সুরে আমার কথারা থেমে গেছে
প্রবহ নদীটা আজ স্রোতের আঁচলে লিখে দিল-
ঘুম ভাঙা নাবিকের থেমে গেছে দরদী আহ্বান...
বিরান মাঠের বুকে অলোক আশায় চাষ করে
ফসলের আশা নেই তবুও মাঠে সচল কাজে
জেগে থাকা একা বীর চলে গেছে আমাদের ছেড়ে...
বিষণ্ন বাতাসে ওড়ে প্রেমিকের আহাজারী খুব
বিরহের তীব্রতায় ছুটে চলেছি মর্সিয়া গেয়ে
হাহাকার ধ্বনি বাজে চারপাশে পৃথিবীর ভাঁজে...
ভেতরের অন্ধকারে আলোর আঘাতে দীপ জ্বেলে
প্রেমিক বানিয়ে দিয়ে সবুজ গম্বুজে দৃষ্টি নিয়ে থামালেন
আমাদের আজ বিরহে কান্নাতে তাই মর্সিয়া গাই নির্জনে...
স্বদেশের প্রয়োজনে প্রবল সাহস কে দেখাবে
ঈমানের ফুলকিতে কে জাগাবে প্রেমিক হৃদয়?
মদীনার ফানা হয়ে কে জানাবে রওজা কথন?
হৃদয় তীর্থ কখন যাবে দূর মদিনার পথে?
সিরাত মিশন আজ কার হাতে পাবে পরিণতি?
বেদনার আসমানে ভেসে ওঠে শোকের মিছিল...
পৃথিবীর মৃত্যু
তুহিন খান
একটু আগে পৃথিবীর মৃত্যু হল!
হাসপাতালে যায়নি আকাশ, নক্ষত্রেরা
ক্লান্তমুখে পায়চারী করেনি ওষুধগন্ধী করিডোরে-
কোথাও সশব্দ কোন শোকের বাতাস নেই
চাঁদের জখম থেকে ঝরেছে নির্লিপ্ত জোছনারা-
এইমাত্র পৃথিবীর মৃত্যু হলো!
আর মানুশেরা যথারীতি শুক্রবারের অপেক্ষায়,
বাথরুমে ভিজিয়ে রাখলো পাঞ্জাবি ও টুপী,
তরুণ লেখক-কবি মগ্ন অত্যাসন্ন
বইমেলার ব্যবসায়ীক জটিল হিশেবে,
জনৈক তালেবে ইলম খেলা দেখে চুপিসারে ফিরছিল মাদ্রাসার পথে
সারাদেশে শতাধিক জিএমবি আটক-এই খবর না শুনে
একটি লোক চেয়ে চেয়ে দেখছিলো সুন্দরী পাঠিকার ঠোঁটের ওঠানামা,
প্রজন্ম নিবিড় হয়ে বসেছিলো টিভিসেটে, ফেসবুকে
অথবা ভিন্নভাবে জীবন অন্বেষণে,
আর এসবের মাঝেই হঠাত্-
পৃথিবীর মৃত্যু হল,
অথচ কোথাও কেউ জানলো না,
মিডিয়ায় হলোনা খবর,
পৃথিবীর মানুশের মৃত্যু হলে হাসপাতাল ভরে ওঠে,
দিকে দিকে সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে,
দিনরাত তাদের লাশের 'পরে জমে ওঠে
কর্পোরেট ফুলের স্তুপ, রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও পদক-
পৃথিবীর মৃত্যু হলে মানুশ জানেনা,
পালিত হয়না কোন রাষ্ট্রীয় শোক-
আকাশের দিকে চেয়ে কেউ কেউ বলে শুধু
সুখী হোক, আকাশের সকল নক্ষত্র সুখী হোক!
.
চোখের পাতায় অন্ধকার
ওয়ালিউল ইসলাম
বাহির ভাঙলে সাজিয়ে ফেলি ভেতর ভাঙলে সাজাই না,
সুখের সুরে মাতিয়ে রাখি দুঃখের বীণা বাজাই না।
ধুসর করে রঙ-গোধুলি একলা হলে কালান্তর,
সাড়ে তিন হাত একটি ঘরই ভিজিয়ে দিল লক্ষ ঘর।
বিশ্বজোড়া খেলাঘরে খেললে তুমি অবিরাম,
আমরা কেবল ঘুমিয়ে ছিলাম জেগে দেখি তোমার নাম।
এখন আমার ভেতর ভাঙা চোখের পাতায় অন্ধকার,
আলোর মশাল ঘরের ভেতর কিন্তু আমার বন্ধ দ্বার।
হারিয়ে তাঁকে
জিসান মেহবুব
খান সাহেবও সাড়া দিলেন
মাওলা পাকের ডাকে,
অভিভাবক শূন্য জাতি
হারিয়ে আজ তাঁকে।
মাথার ওপর বটের মতো
ছায়া দিতেন তিনি,
ইলমে দ্বীনে তাঁর খেদমত
করে গেছে ঋণী।
আলেমকূলের শিরোমনি
খোদার প্রিয় ওলি,
নেই নেই নেই দুনিয়াতে
ঝরল ফুলের কলি।
ভালো থেকো, খান
নেসার উদ্দীন রুম্মান
খান, আপনার হৃদয়ের সংবৃত আঙিনায়
এই যে দাঁড়িয়ে আমি, এক
নিশ্চল নিরুপদ্রব জীবনের কাছে;
জীবনের খেলাঘরে
কত না বিচিত্র সব সোনালি রুপোলি
আপনার পাশ জুড়ে জমা হয়ে আছে!
আপনার সুশান্ত শমিত মুখ দেখে
কত জল বয়ে গেলো হৃদয়ের নিচে!
রাস্তাঘাট থমথমে,
ভোরটাও শীতল নরম—
রাতে বুঝি এক পশলা বিষ্টিও হয়ে গেছে।
আপনার উজ্জ্বল শব ঘিরে
সিরাতীয় যে মৌনতা টলটল করে
সে নিয়ে উড়ছে একটি সবুজ শ্যামল পাখি।
আমার খুব কান্না পাচ্ছে, খান—
এ জল কোথায় চেপে রাখি?
শত দূর আলোকবর্ষের পথ বেয়ে
এই তো রাজপুত,
দেখছেন সোনালি সিঁড়ি?
নিয়ে রব্বের অবিশ্রান্ত ঝিরিঝিরি
আপনি কী দীপ্র চলে যান
ফেলে-ফেলে ব্যথার পালক।
হা, হৃদয় কী ডুকরে ওঠে—
ভালো থেকো, খান;
মায়াঘন সিরাত-বালক।
.
যাকিছু রয়ে গেল আপনার পেছনে
সুলাইমান সাদী
আপনি চলে গেলেন আর পিছু নিয়েছে আপনার মাসিক মদিনা
সিরাত গবেষণা তাফসিরুল কুরআন
আর আপনার রাজপথের ব্যানার
যা আপনার বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইয়ের হাসি ছড়ায়
আজ থেকে লোকে বলবে,
চলে গেছেন রাজপথের লড়াকু
তাদের বক্তব্য নয়, নিন্দা করছি তাদের অভিব্যক্তিকে
তারা বুঝতে চাইবে না,
আপনি লড়াকু ছিলেন রাজনৈতিক নয় বৌদ্ধিক বৃত্তিতে
আমি জানি,
আপনি বলতে চেয়েছিলেন সবিস্তারে আপনার স্বপ্নের কথা
ভয়ঙ্কর কোনও অজানা হাত চেপে ধরেছিল আপনার মুখ
শেষ পর্যন্ত বলতে পারেননি আপনার স্বপ্নের কথা
আপনার চিন্তার কথা আপনার বুদ্ধিবৃত্তিক বিপ্লবের কথা
আপনি রয়ে গেছেন হৃদয়ে হৃদয়ে
যিয়াদ বিন সাঈদ
চলে যাওয়া মানে কি চলেই যাওয়া?
আমার তো মনে হয় না।
তাহলে আপনার এ বিদায়ের কথা শুনে বিষণ্ণ হচ্ছে ক্যানো বিহঙ্গকূল, অরণ্যানী, অমমতার
পদভারে পিষ্ট গৃহগুলো?
আপনি তো এখনও আছেন, চলে গেলেও তো এখনো আছেন
মনে হয় থাকবেন হৃদয়ে হৃদয়ে, অনেকের
মনগৃহে বসত করেন আপনি
মন কি কখনো যায় তার প্রিয় মনকে ছেড়ে?
মন তো এক মহাবিশ্ব, বরং তার চেয়েও বড়
মন তো হৃদয়, নির্যাস নিসর্গের
আপনি এখনো বেঁচে আছেন এই হৃদয়গুলোতে।
তবুও অবয়বজ অনুপস্থিতি প্রায়শই কাতর করে আমাদের
আমাদের চোখকে কাঁদায়
আমাদের নেপথ্যকে করে নীড়হীন
ভারী হয়, হতে থাকে বেদনার ভার।
সত্তার গোপনতম ধ্যানময়তায় বিবস্ত্র হয়ে আছে
একটি অগ্নিবর্ণ জলজ নদী
পাশে একটি কড়ুই তলা
আপনি একদিন আসেন স্বপ্নে
আপনি একদিন বেঁচে ওঠেন হৃদয়ে
আপনার মহান স্মৃতি নিয়ে নাচে নক্ষত্রেরা নিশীথের নিঝুম বাগানে।
রাতের স্তব্ধতায় হয়তো আমাদের ডাকেন আপনি হে মহান
আমরা সকলে সবার ডাক শুনি, কেবল শুনতে পাইনা মৃত্তিকার ডাক
হাহাকার ওঠে হৃদয়ে
অবলীলায় ভেসে যাই শোকের অসামান্য সমুদ্রে।
আপনি তো বেঁচে আছেন হৃদয়ে হৃদয়ে
সত্যিই তো বেঁচে আছেন।
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম /এসএস