শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন: মজলিস মহাসচিব ডেঙ্গুতে এক সপ্তাহে ৩১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬২৩০ মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল কুরআন-সুন্নাহর আইন ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না : মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী

আজ বাড়িতে কেউ নেই

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

bird2যিয়াদ বিন সাঈদ : এই অন্ধকারপূর্ণ সন্ধ্যায় আমি পেছনে ফিরে তাকাবোনা। মেঘ খুব ভারী। এক্ষুণি বৃষ্টিজল ধেয়ে আসবে পৃথিবীর বুকে। প্রাণহীন বাতাসগুলো অভিমান করতে জানে, তারা কৃত্রিম অভিমানের অন্তরালে পরম রিক্তহাতে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। তবুও এই নিস্তব্ধতা মারিয়ে আমি হাঁটছি। আমরা হাঁটছি। আজ তো আমাদের বাড়িতে কেউ নেই। অভিমানের বুকে হারিয়ে যাওয়া মেঘের কথা বলি, একদিন ঝড় এসেছিলো এই শহরে। শহরের যত অলি-গলি, নল-নালা, নোঙরা যত পথঘাট। ধুয়ে মুছে নিয়ে গিয়েছিলো সেই বৃষ্টি। হয়তো পরিশুদ্ধতার এই বৃষ্টির উদাহরণ তোমার কাছেই পাওয়া যাবে হে প্রিয়তম! কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত আক্রোশ জ্বলে উঠছে বারংবার। তাই আমাকে হাঁটতে হচ্ছে একান্ত চুপিসারে। তুমি আছো। তবুও নিঃসঙ্গ মনে হয়। হাঁটছি। উদভ্রান্ত হয়ে। অকস্মাৎ। আজ তো আমাদের বাড়িতে কেউ নেই। আগে কখনো চা খেতেনা তুমি, আজ এই অভিমানমুখর সন্ধ্যায় তোমার আয়েশি চুমুক দেখে মনে হলো, সময় হয়তো সিগারেটের দুর্দান্ত ধোঁয়ার মতো। আলাপিনী আমার হে প্রিয়তম! হাঁটছো। পথেরকাঁটা হয়ে কেবল জহুরী মহল্লা গত করলাম। অশান্ত পায়ের দুলুনিতে আজ কেমন যেন ক্লান্তি নেমে আসছেনা। তবুও আমরা ক্লান্তিবিনোদনে বসে যাই পার্কের খালি বেঞ্চি টাতে।

আমরা নিশ্চুপ। আবারো বৃষ্টি আসবে। কিন্তু কোথাও যাওয়ার নাই। আমাদের বাড়িটা আজ শূন্য পড়ে আছে। আমাদের বাড়িতে কেউ নেই। বৃষ্টির বিরুদ্ধে আজ জারী হয়েছে ধৃষ্ট অবরোধ। উৎসারক তোমাকেই হতে হবে। পৃথিবীর কোথাও সে অন্ধত্বকে চ্যালেঞ্জ করতে পারবেনা, এই প্রেমকে কেন্দ্র করে পৃথিবীও একটি বৃন্দাবন হয়ে গেছে। হয়ে গেছে একটি প্রেমারা শহর। সন্ধ্যার লালিমার পর পশ্চিমাকাশে যে শুভ্রতা ফুটে উঠে, আজ তা নেই। বাবররোডের নীল রঙা বাড়িটার দেয়াল ঘেষে লালের সূর্যটা এক্ষুণি হারিয়ে যাবে। ঘন অন্ধকারে আবৃত হবো আমি আর তুমি। এখন নিঃসঙ্গতার ডানাওয়ালা পাখিটা উড়তে যাবে দক্ষিণে। আমরা আটকে রেখে আবারো নিঃসঙ্গতাপ্রিয় হয়ে উঠবো। নিশ্চলভাবে হাঁটছি। তুমি হাঁটছো।

আজ আমাদের সেই বাড়িটাতে কেউ নেই। বৃষ্টির অসমাপ্ত ভালোবাসায় যখন লেপ্টে গেলো আমাদের আপাদমস্তক, আমরা কিন্তু হাতে হাত রেখেই পথগুলো শেষ করছি। ৩৭ নং বাড়িটার ৬তলার ছোট্ট ব্যালকোনির ছিদ্র ভেদ করে বেরিয়ে আসে একটি মায়াবী হাত। ঝনঝনে শব্দের তরঙ্গ। মেয়েটার এই হাত দেখে আমি পুলকিত হয়েছি খুব। কিন্তু তুমি রইলে আগেকার মতই। তুমি হয়তো আজ ক্রোধের শীতল আগুনে জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছো। তবুও তো আমাকে সাথে করে হাঁটছো। অনুগ্রাহী প্রাণপ্রতিম আমার। এই পথের সমাপ্তি আমি জানিনা। আমি মৃত্যু অব্ধি হাঁটবো। আমার বাড়িটাতে কেউ না থাকার শোকে। আমার বাড়িটাতে কেউ নেই। ঈষৎ অপ্রত্যাশিত তিরস্কারের ছোবল প্রশান্ত মুখের উপর নির্মমভাবে ছেয়ে গেছে তোমার। একদল হরিদ্রা পাতায় আরোহীর অস্বাভাবিক দৃষ্টতা। আকাশ হাটু গেড়ে বসেছে আমাদের শহরে। ঈশ্বরপ্রবণতার চাদরে মুড়ে ঘন কুয়াশার গভীর অরণ্যে তুমি পৌঁছে গেলে।

এবার বজ্রপাত। তোমার অনাকাঙ্ক্ষিত ক্রোধে আমি হাসছি। কিন্তু আমরা কেউ কাউকে তাড়িয়ে দিচ্ছিনা। আমরা হাঁটছি। আমাদের বাড়িতে তো কেউ নেই। আমি আবারও আমার মাথা তোমার চরণধূলি তে মিশিয়ে দিতে চাইলাম। আমি তো বরাবরই চাচ্ছি বালুর কঠিন আবরণ ভেদ করে ঢুকে যেতে। আমি পারছিনা। ভাগ্য ভালো, আমাদের শহরে প্রচুর নর্দমা আছে। নিঃসীম বিষাদে আমি ঝাপ দেই নর্দমার ভেতর। তুমি হাঁটতে হাসতে দেখবে আমার রক্ত কাঠিন্যতা। কিন্তু তারপরেও হাটতে থাকবে। আমিও হাঁটবো। আর সাথে থাকবে একদল মেঘরাজ। হয়তো মেঘের বাড়িতেও কেউ নেই। আমার বইগুলোতে একটি ফ্রক পরা মেয়ে এসে মিথ্যা বলে চলে গেল, পৃথিবী নাকি ঘোরে। আমরা তো পেছনের পথ আর ফিরে পাইনি। কেননা, পৃথিবীপতি বহুকাল যাবৎ চুপসে মরে আছে। সেই চা-দোকানেত কোনই অস্তিত্ব আর পাওয়া যায়নি। অতঃপর আমরা জেনে যাই, আমরা তো হাঁটছি। আর পাখিরা ধোঁয়ার কালি হয়ে সামোনের দালানে লেগে গিয়েছে।

আমি মৃত্যু অব্ধি হাঁটবো। আমার বাড়িটাতে কেউ না থাকার শোকে। আমার বাড়িটাতে কেউ নেই। ঈষৎ অপ্রত্যাশিত তিরস্কারের ছোবল প্রশান্ত মুখের উপর নির্মমভাবে ছেয়ে গেছে তোমার। একদল হরিদ্রা পাতায় আরোহীর অস্বাভাবিক দৃষ্টতা।

মরুভূমির ভেতর পাপিস্থান নামক একটি শহর আছে, আমরা এখন সেখানেও পৌঁছে গিয়েছি। তুমি তো জানোই, আমরা হাঁটবো। পৃথিবীও হাঁটছে। পৃথিবীর বাড়িতেও কেউ নেই। পত্নী পৃথিবী এখন আমাদের বন্ধু। অতঃপর রাত হয় সন্ধ্যার ভেতর দিয়ে। আমাদের পথগুলো আরও পাষাণ হতে থাকে। আমরা অবাক দৃষ্টিতে দেখতে থাকি। ঘ্রাণে ঘ্রাণে প্রাণের সংগীতে দুলে উঠে দোলনার দেহ। মাঠ-ঘাট পথ-প্রান্তরে পাহাড়ে ঘোড়ার ধ্বনি। ল্যাম্পপোস্টের উষ্ণ আলোয় আমরা একজন আরেকজনের চোখে চোখ রাখলাম, আহা কী মায়াবীয়তা! এই অসমাপ্ত ভালোবাসার চাদর মুড়ে আমরা তবুও হাঁটছি। অবাধ নৃশংসতার একটি দালান দেখবো বলে। আমাদের বাড়িতে কেউ না থাকার শোক আত্মাতে। আমাদের বাড়িতে কেউ নেই। তারপর একা হয়ে যাই এক জীবনের জন্য। সবকিছু ছেড়ে বসে যাই ফকির হবার খেলায়। হারাই বংশ পদবী, দেশ, ঠিকানা। নির্মাণ করি আহারে কিংবা অনাহারে তোমার নামে উৎসর্গিত কবিতা।

যাকে ঘুমের নিচে জন্ম হতে দেখেছে কেউ, ধূলোমঞ্চ ছেড়ে সর্পসুড়ঙ্গে। খোলা খাতাটা প্যাপিরাস যুদ্ধ যুদ্ধ মাঠ। শূন্যতা'রা আক্রমণ করে প্রায়শই। তাই বলি, একদিন এসে দেখে যেয়ো এই পথের জন্তুটাকে। আর মনে করো, একদিন তুমি আর আমি হেঁটেছিলাম একটি পথের অন্দরে। যে পথে আমার চিরায়ত অবস্থান। তুমি সেই সন্ধ্যায় ফিরে গিয়েছিলে ঘরে। আমার তো ঠিকানামাত্র মনে ছিলো। ভুলে গিয়েছিলাম সব। তুমি চলে গেলে অদূরস্থ ভবিষ্যৎের দোহাই দিয়ে। আমি কেবল পড়ে রইলাম এই নগরের নোংরা পথটাতে। সেদিন তো আমাদের বাড়িতে কেউ ছিলোনা। আজ কেবল আমার বাড়িতে কেউ নেই।

আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম /এসএস


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ