যুবাইর ইসহাক : চৌধুরী সাহেব ধনী মানুষ। গ্রামের মধ্যে তার সমান সম্পদ কারো নেই। চৌধুরীর নাম আজিম হলেও সবাই চৌধুরী নামে চিনে। চৌধুরী সাহেব বলে ডাকে।
আজিম চৌধুরীর এই বিশাল সম্পত্তি বাপ-দাদার ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া। বাপ-দাদা সবাই জমিদার ছিল। তখনকার জমিদাররা গ্রামের পর গ্রাম শাসন করত। তাদের অনেক জমিজমা থাকত। লোকেরা তাদের কাছ থেকে চেয়ে এনে বর্গা করে খেত। বড় বড় বাড়ি ছিল। গোলা ভরা ধান ছিল। পুকুর ভরা মাছ ছিল। ওরা খুব আয়েসে দিন কাটাত। তবে আজিম চৌধুরীর বর্তমানে বাপ-দাদাদের মতো সম্পদ নেই। তাদের কাছ থেকে আসতে আসতে হয়ত কিছুটা কমে গেছে।
আজিম চৌধুরী বড় ধনী হলেও কৃপণ। কখনো মানুষকে দান করে না। গরিবদের সাহায্য করে না। এমনকি ইসলামের বিধান যাকাত পর্যন্ত আদায় করে না। নবি সা. ও সাহাবা রা.-দের খেলাফতকালে এমন কিছু মানুষ নিয়োগ থাকতেন, যাঁরা ধনীদের কাছ থেকে যাকাত আদায় করতেন। কিন্তু বর্তমানে যাকাত নিয়ে কে এত মাথা ঘামায়।
যাকাত নিয়ে মাথা না ঘামালেও ধনীদের ঘাড় থেকে যাকাত নেমে যায়নি। ইসলামের প্রথম কালে যেমন যাকাত ফরজ ছিল। আজও আছে। কিয়ামত পর্যন্ত থাকবেও।
একদিনের কথা। মসজিদের ইমাম সাহেব আজিম চৌধুরীকে বলেন। চৌধুরী সাহেব, আপনি ধনী লোক। আল্লাহ তো আপনাকে অঢেল ধন-সম্পদ দান করেছেন। সে সম্পদ থেকে যাকাত আদায় করতেও তিনি নির্দেশ দিয়েছেন।
চৌধুরী বড় বড় চোখে তাকায়। ইমাম সাহেবকে জিজ্ঞেস করে, যাকাত কী?
ইমাম সাহেব বলেন, যাকাত এটি ইসলামের ৫টি মহান স্তম্ভের একটি স্তম্ভ। গরিবের প্রাপ্য। নেসাব পরিমাণ মালের ৪০ ভাগের এক ভাগ গরিবদের দান করাকে যাকাত বলে। যাকাত দ্বারা সম্পদ প্রবিত্র হয়। এটি আদায় করা প্রত্যেক ধনী লোকের ওপর অাবশ্যক। যাকাত না আদায় করলে বড় গোনাহ হবে এবং জাহান্নামে যেতে হবে।
ইমাম সাহেবের কথায় চৌধুরী কর্ণপাত করে না। বরং ভাবে তার সম্পদ কমে যাবে এবং সে আগের মতোই চলতে থাকে।
একদিন এক ফকির এসে আজিম চৌধুরীর দরজায় করাঘাত করে এবং কিছু খাবার চায়। কিন্তু আজিম চৌধুরী কিছু না দিয়ে তাকে তাড়িয়ে দেয় এবং বলে, এদিকে আর এসো না। সে রাতে চৌধুরী ঘুমুতে যায়। ঘুমের ঘোরে অচেতন হয়ে পড়ে। হঠাৎ স্বপ্ন দেখে। বড় একটি অগ্নিগিরি। তার পাশে সে দাঁড়ানো। গলায় বড় একটি সাপ জরানো। সে সাপটি থেকে বাঁচার প্রাণপণ চেষ্টা করছে। কিন্তু কোন লাভ হচ্ছে না। বরং অগ্নিগিরির দিকে তাকে ঢেলে দিচ্ছে।
চৌধুরী সাহেব সাপটিকে জিজ্ঞেস করে, তুমি কে? সাপটি উত্তরে বলে আমি তোমার পৃথিবীর সম্পদ। যা তুমি জমা করেছিলে। গরিব অসহায়দের দান করোনি।
আজিম চৌধুরীর ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘুম থেকে উঠে দেখে শরীর থেকে ঘাম ঝরছে। খুব তৃষ্ণা পেয়েছে তার। জগ থেকে ঢেলে এক গ্লাস পানি পান করল। তখন শুনতে পেল মসজিদে মুয়াজ্জিন সাহেব আজান দিচ্ছেন।
চৌধুরী অজু করে। মসজিদে যায়। নামাজ আদায় করে। নামাজ শেষে ইমাম সাহেবকে বলে, হুজুর আপনি আমার যাকাত আদায় করার ব্যবস্থা করে দিন। আমি আর গরিব অসহায় মানুষের সম্পদ ভোগ করতে চাই না।
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম / আরআর