মাহ্দী খান অয়ন : ফজরের নামাজান্তে এলাকায় বের হই। হাঁটতে। সকালের মৃদু- মন্দ মিষ্টি হাওয়ায়। হাঁটার সময় প্রায়ই দেখা হয় একজন ছানা মাঠা বিক্রেতার সাথে। উনি আমাকে দেখলেই সালাম জানান হাত উঁচিয়ে। শ্রদ্ধাভরে। মিষ্টি হেসে। তারপর দাঁড়িয়ে যান। পাশ করে। আমাকে একটু ছানা মাঠা খাওয়াবেন বলে। আমিও না করি না। কারণ, তিনি আমাকে ছানা মাঠা দেন, আলাদা করে, বিশেষভাবে। খেলে যেমন জিভে লেগে থাকে, তেমনি হৃদয়টাও ভরে ওঠে, শীতল মাঠার শীতলতায়।
কখনো টাকা না থাকলে যখন তাকে বলি, তখন তিনি বলেন, ‘থাক, পরে দিয়েন।’
ঐদিন দেখলাম, উনি একটি ছোট্ট ছেলেকে টাকা দিচ্ছেন। ছেলেটি খুব খুশি।
জিজ্ঞাসা করলাম, ওকে চেনেন?
বললেন, ‘না’।
তা, টাকা দিলেন কেন?
বললেন, ‘ছেলেটা ওই দোকানদারের কাছে রুটি চাইছিল। কিন্তু, ওর কাছে টাকা নাই বইলা, ওরে রুটি দিতাছে না।’
কথাটা শুনে, হৃদয়টা আবেগে আপ্লুত হয়ে উঠলো।
এক সকালে ছানা-মাঠা খাচ্ছিলাম। খেতে খেতে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ভাই! আপনার নাম কি?’ সরলভাবে বললেন, ‘দিলীপ বড়ুয়া।’
শুনে আমি 'থ'!!
বললাম, আপনার সালাম দেয়া, আচার-আচরণ দেখে আমি ভেবেছিলাম, আপনি মুসলিম!
বললেন, হিন্দু হইছি তো কি হইছে, ইসলামই আমার প্রিয় ধর্ম। ইসলামই সঠিক ধর্ম। আমি আপনেরে যেমনে সালাম দেই, তেমনে আমি আমগো পুরোহিত গোরেও প্রণাম করি না।
আমি প্রতিদিন ব্যবসায় বাইর হওঅনের আগে, 'বিসমিল্লাহ্' আর 'কালেমা তাইয়্যেবা' পড়ি।
বললাম, তাহলে আপনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন না কেন?
বললেন, আমার পূর্বপুরুষেরা এবং পরিবারের সবাই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। কেমনে আমি হেগো থেইকা আলাদা হমু?
ইসলাম ধর্মের প্রতি তার অনুরাগ আমায় মুগ্ধ করেছে। তবে, এই ভেবে কষ্ট হচ্ছে, আল্লাহ না করুক, উনি যদি ইমানহীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন, তাহলে তো ইসলাম ধর্মের প্রতি এত অনুরাগী হওয়া সত্ত্বেও জাহান্নামি হবেন। আল্লাহর পানাহ
হে আল্লাহ্! তুমি তাকে ইসলাম ধর্মের মত দৌলত দ্বারা মালামাল করে দাও। আমিন। ইয়া রাব্বাল আলামিন।
লেখক : শিক্ষার্থী আরবি সাহিত্য জামি'আ আবু বকর সিদ্দীক রা.
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম /এআর