শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
কুরআন-সুন্নাহর আইন ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না : মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী শীত ও শৈত্যপ্রবাহ নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস ফ্যাসিবাদ বারবার ফিরে আসবে, সতর্ক থাকতে হবে: গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা ‘কোনো রাজনৈতিক দলকে সরিয়ে দেয়ার ইচ্ছা জামায়াতের নেই’ শরীরে রক্ত বাড়াতে যেভাবে পালং শাক খাবেন ‘প্রকৃতপক্ষে ভুল হলে ক্ষমা চাইতে প্রস্তুত আ.লীগ’ সিইসিসহ নবনিযুক্ত নির্বাচন কমিশনাররা শপথ নেবেন রোববার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য হলেন মুন্সিগঞ্জের নিরব ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু বাজারে এলো ইনফিনিক্সের সবচেয়ে স্লিম স্মার্টফোন

রমজানে অন্তঃস্বত্তা নারী কী করবেন?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

imagesআহসান শরিফ : মাকে ভালোবাসে না এমন মানুষ পৃথিবীতে কম। মা ছাড়া পৃথিবীতে এসেছে এমন কজন? মা-ই তো পৃথিবীর আলো বাতাস দেখানোর মাধ্যম। মাকে দিয়েই মানুষ। মানুষের জন্যই পৃথিবী। মানবহীন পৃথিবীর কল্পনা করা যায়? কিছুতেই না। মানব প্রজননের একটি পদ্ধতিও রেখেছেন মহান আল্লাহ। এ জন্য একজন মাকে অসাধারণ কষ্ট সইতে হয়। দশমাস পেটে লালন করতে হয় প্রিয় সন্তানকে। তার যত যন্ত্রণা মা নিরবে সয়ে যান। আমরা আজকে কথা বলবো গর্ভবতী মাকে নিয়ে। রমজান কীভাবে কাটাবেন একজন গর্ভবতী মা।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর ধোলাইরপাড়ে থাকেন সুমাইয়া সাদী। তার কোলে ৫ মাসের একটি শিশু। গত রমজানে তিনি গর্ভবতী ছিলেন। গত রমজানের অভিজ্ঞতা জানতে তার সঙ্গে কথা হয়।

গর্ভবতী মায়ের রমজান কীভাবে কাটে? এমন প্রশ্নে সুমাইয়া বলেন, এমনিতেই গর্ভবতীদের সতর্ক থাকতে হয়। রমজান এলে প্রয়োজন পড়ে বাড়তি সতর্কতার। প্রথম তিন মাস কারো কারো ক্ষেত্রে কম বেশি বমি বমি ভাব হয়। না খেয়ে থাকলে বমি ভাব কম হয়, এমনকি বমিও হয় না। আমারও কিছুটা বমির ভাব হতো। সাহরির সময় বমিনাশক ওষুধ খেয়ে নিতাম। এতে সারাদিন ভালো থাকতাম। তবে ৫/৬ মাস হয়ে গেলে রোজা রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ে। ঐসময় দুর্বলতা লাগলেও আমি রোজা রেখেছি। সমস্যা হয়নি।

রাতে তারাবির নামাজ আদায় করতেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, না, আমার অসুবিধে হয়নি। আমি বিশ রাকাত নামাজই আদায় করেছি। ইচ্ছে করলে যে কেউ আদায় করতে পারবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের গাইনি ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা. ফজলে নূর-এ-তাওহিদা। সপ্তাহে দুদিন সন্ধ্যায় ঢাকার চকবাজার হাসপাতালে বসেন তিনি। গর্ভবতী মা কী ধরনের খাবার খাবেন জানতে চাইলে ডা. তাওহিদা বলেন, গর্ভবতীদের যেহেতু বাড়তি পুষ্টির প্রয়োজন হবে, তাই খাদ্য নির্বাচন করতে হবে অধিকতর ক্যালোরিসম্পন্ন। প্রয়োজন হলে মাকে একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে হবে। তিন মাসের পর সাধারণত বমির ভাব কমে যায়। এই সময়ে গর্ভবতী মায়েরা রোজা রাখতে পারেন। সাহরিতে তৈলাক্ত ও ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলবেন। প্রচুর পানি, শরবত ও ফলের রস পান করবেন। চা ও কফি এড়িয়ে চলবেন। খেজুর খাবেন বেশি। খেজুরে অনেক বেশি ক্যালরি ও খাদ্যগুণ বিদ্যমান। এ ছাড়া আম, কাঁঠাল, তরমুজ, বাঙ্গি, কলা, ডাব, নারকেল ইত্যাদি ফল পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে হবে।

যে সব খাবারে বুক জ্বালা ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা যায় সেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার ঝালযুক্ত ভর্তা না খাওয়াই ভালো। তারপরও অসুবিধে হলে এন্টাসিড ট্যাবলেট খেলে সুফল পাওয়া যাবে।

আর কি কি সমস্যা দেখা দিতে পারে? এ প্রশ্নে ডা. তাওহিদা বলেন, সারাদিন পানি না খাওয়ার ফলে প্রশ্রাবে হালকা জ্বালা হতে পারে। ইফতারের পর ঘন ঘন পানি খেয়ে তা পূরণ করতে হবে। কোষ্টকাঠিন্য এড়িয়ে চলতে হবে। শাকসবজি, পানি ফলমূল সঠিক পরিমাণে খেলে এটা এড়ানো সম্ভব। তবে, বেশি অসুবিধে হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সিরাপ খাওয়া যেতে পারে।

বর্তমানে প্রচন্ড গরম আবহাওয়ায় ডা. তাওহিদার পরামর্শ, বৃষ্টিতে ত্বকের সমস্যা হতে পারে। প্রতিদিন গোসল করে ত্বকের সমস্যা সমাধান করা যায়। হালকা জ্বর, কাশি ও অন্য যে কোন অসুবিধায় অবহেলা না করে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

রোজা রেখে ওষুধ খাবেন কীভাবে এ বিষয়ে তিনি বলেন, একবেলা বা দুবেলা খাওয়া যায় এমন ওষুধ খেলে রোজা ভাঙার প্রয়োজন হয় না। তবে সব কিছুই নির্ভর করবে মায়ের শারীরিক অবস্থার ওপর। রোজা রাখতে গিয়ে খেয়াল রাখতে হবে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের কোন প্রকার ক্ষতি যেন না হয়।
গর্ভবতী মায়ের রোজার বিধান নিয়ে কথা বলেছেন মাদরাসাতুল বালাগ ঢাকার প্রিন্সিপাল মুফতি আহসান শরিফ। তিনি বলেন, গর্ভবতী নারী রোজা রাখলে গর্ভের বাচ্চার ক্ষতির আশঙ্কা হলে, বা গর্ভবতী নারী মারাত্মক অসুস্থ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকলে, রোজা ভেঙ্গে ফেলা বা না রাখা জায়েজ। তবে পরবর্তীতে এর কাজা আদায় করতে হবে। শারীরিক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার কারণে ডাক্টার নিষেধ করলে রোজা না রেখে পরবর্তীতে কাজা করার সুযোগ রয়েছে। কাফফারা দেয়া লাগবে না।

এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে সুরা বাকারার ১৮৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে। ‘রমজান মাসেই কোরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের যে ব্যক্তি এ মাসটি পাবে, সে যেন রোজা রাখে। আর যে ব্যক্তি অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে অন্য দিনে গণণা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, জটিলতা কামনা করেন না।’

গর্ভবতী মা চাইলেই রোজা রাখতে পারেন। আবার অসুবিধে হলে, নিজের বা গর্ভের সন্তানের জন্য আশঙ্কা হলে, রোজা পরেও রাখতে পারেন। তবে সর্ববস্থায় গর্ভবতী মাকে সতর্ক থাকতে হবে। ভালো থাকুন মা। নিজের এবং সন্তানের যত্ন নিন।

আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম / আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ