বৃটেনের বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটিতে একটি কোরআন শরীফের কিছু অংশ পাওয়া গেছে। রেডিওকার্বন পদ্ধতিতে পরীক্ষার পর ধারণা করা হচ্ছে, এটি এ পর্যন্ত পাওয়া বিশ্বের প্রাচীনতম কোরআন শরীফের হাতে লেখা পা-ুলিপি এবং কমপক্ষে ১,৩৭০ বছর পুরনো।
পাণ্ডুলিপিটি ‘হিযাজী লিপি’তে লেখা। আরবি ভাষার লিখিত রূপের একটি প্রাচীন সংস্করণ এটি। পাণ্ডুলিপির লেখাগুলো এখনও বেশ স্পষ্ট। অর্থাৎ, বিশ্বে এ পর্যন্ত পাওয়া প্রাচীনতম কোরআন শরীফ এটি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে দীর্ঘ প্রায় এক শতাব্দী ধরে পাণ্ডুলিপির পাতাগুলোর ভাষা শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছিল না। মধ্য-পূর্বাঞ্চলীয় অন্যান্য কয়েকটি বই ও নথিপত্রের সঙ্গে পাণ্ডুলিলিপিটি সংরক্ষিত ছিল। এ ধরনের পাণ্ডুলিপির বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বৃটিশ লাইব্রেরির ডক্টর মুহাম্মদ ঈসা ওয়ালি বলেছেন, ‘রোমাঞ্চকর এ আবিষ্কার’ মুসলমানদের উৎফুল্ল করবে। পিএইচডি ডিগ্রিধারী এক গবেষক পাণ্ডুলিপিটির প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করে এটি আরও খুঁটিয়ে দেখতে শুরু করলেন। পরে সিদ্ধান্ত হলো, রেডিওকার্বন পদ্ধতির সাহায্যে পাণ্ডুলিপিটির প্রকৃত বয়স নির্ধারণ করা হবে। ফলাফলটি ছিল ‘চমকপ্রদ’। বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটির বিশেষ সংগ্রহশালার পরিচালক সুসান ওরাল বলছিলেন, গবেষকরা স্বপ্নেও ভাবেননি যে এটা এতো প্রাচীন হবে। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির রেডিওকার্বন অ্যাক্সেলেটর ইউনিট পরীক্ষাটি পরিচালনা করে। পাণ্ডুলিপিটি মেষ অথবা ছাগলের চামড়ার ওপর লেখা। এ পরীক্ষাগুলোতে কোরআন শরীফটি লেখার বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য তারিখ দেয়া হয়েছে। ৫৬৮ থেকে ৬৪৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে কোন এক সময় লেখা হয়েছিল পাণ্ডুলিপিটি এবং এ সম্ভাব্যতার হার ৯৫ শতাংশের বেশি। বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটির খ্রিষ্টধর্ম ও ইসলাম ধর্মে অনুষদের অধ্যাপক ডেভিড থমাস বলছিলেন, কোরআন শরীফের খ-িত এ অংশগুলো ইসলামের প্রকৃত প্রতিষ্ঠার কয়েক বছরের মধ্যে আমাদেরকে নিয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, মুসলমানদের ঐতিহ্যমতে, মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) ৬১০ সাল থেকে ৬৩২ সালের মধ্যে নবুওয়াতপ্রাপ্ত হয়েছিলেন বা তার ওপর কোরআন শরীফের বাণীসমূহ নাজিল হয়েছিল। ওই অধ্যাপক আরও বলেন, যে ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে এই পাণ্ডুলিপি লিখেছিলেন, তিনি হয়তো বেশ ভালোভাবেই মোহাম্মদ (সা.)-কে চিনতেন। তিনি সম্ভবত তাকে দেখেছিলেন, হয়তো নবী মোহাম্মদ (সা.)-এর ধর্ম প্রচার নিজ কানে শুনেছেন তিনি। তিনি হয়তো ব্যক্তিগতভাবে তাকে চিনতেন। নবীজী (সা.)-এর মৃত্যুর ২ দশকেরও কম সময়ের মধ্যে এটি লেখা হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে এ ঘটনায় বার্মিংহামের মুসলমানরা আনন্দ প্রকাশ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, পাণ্ডুলিপিটি জনসাধারণের দেখার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। বার্মিংহাম কেন্দ্রীয় মসজিদের সভাপতি মুহাম্মদ আফজাল বলছিলেন, আমি এ পৃষ্ঠাগুলো দেখে বেশ আবেগতাড়িত হয়েছিলাম। আমার চোখে ছিল আনন্দ ও আবেগের অশ্রু। তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত যে বৃটেনের সব স্থান থেকে মানুষ এই পৃষ্ঠাগুলো এক নজর দেখার জন্য বার্মিংহামে আসবেন।