খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ বলেছেন, ৫ আগস্ট পরবর্তি জনআকাক্সক্ষার বাংলাদেশ নির্মানের প্রথম কাজ ছিল ফ্যাসিবাদ ও সকল দোসরদের বিচার করা। ফ্যাসিবাদ ফিরে আসার সকল রাস্তা বন্ধ করা। কিন্তু আজ ক্ষমতার বন্দোবস্ত নিয়ে, অভ্যুত্থানের ক্রেডিট নিয়ে একধরণের স্নায়ু যুদ্ধ চলছে। নিজেদের মধ্যে বিবাদ কমিয়ে একটা সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টিতে ঐক্যবদ্ধ কিছু প্রয়াস দেশের স্বার্থে এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য কিছু মৌলিক বিষয়ে একমত হওয়া ও তা বাস্তবায়নে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখা অত্যন্ত জরুরী। দলের ওপর দেশকে বড় করে দেখতে হবে। বিশ্বাস রাখতে হবে, দেশ বাঁচলে আমাদের রাজনীতি বাঁচবে এবং সুখী-সমৃদ্ধ কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ে উঠলে দেশের ইতিহাস আমাদের স্মরণে রাখবে। জাতীয় ঐক্য সুসংহত করতে রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে আন্ত:সংলাপ জরুরি। দেশের সকল সংস্কারে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মূল্যবোধকে প্রাধান্য দিতে হবে। সংস্কারে দীর্ঘ সময়ে নয় আবার রাতারাতি নির্বাচনও দেশের মানুষ চায় না। এই বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর আন্তসংলাপ ও ঐক্যবদ্ধ ঘোষণার জন্য জাতি অপেক্ষা করছে।
একটি বৈষম্যমুক্ত কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করতে হলে কুরআন সুন্নাহর আদর্শের দিকে সবাইকে ফিরে আসতে হবে। খেলাফত ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা যুগে যুগে বৈষম্যের অবসান ঘটিয়েছে। আমাদের এই মুহূর্তে দরকার দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য ঐক্য এবং ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্য। ঐক্যবদ্দ বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে খেলাফত মজলিস তার ২৫ দফা কর্মসূচি নিয়ে কাজ করছে।
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড: আহমদ আবদুল কাদের বলেছেন, আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে জাতি ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। জাতির বৃহত্তর অংশ যা চায় তা রাষ্ট্রে বাস্তবায়নের জন্য ঐক্যের প্রয়োজন। আগামী নির্বাচন ঐক্যমতের ভিত্তিতে হতে হবে। তা না হলে আধিপত্যবাদের দোসরা মাথাছাড়া দিয়ে উঠবে। কোন দলেরই মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় দ্বিমত থাকার অবকাশ নাই। সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধানের যে মূলনীতি দিয়েছে সেখান থেকে ‘বহুত্ববাদ’ বাদ দিতে হবে, আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন প্রণয়ন করা যাবে না- এই ব্যাপারে নিশ্চয়তা থাকতে হবে। আগস্ট বিপ্লবের ঘোষণাপত্রেও সকলের ঐক্যমত থাকতে হবে।
শনিবার বিকাল ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরী শাখার উদ্যোগে আয়োজিত ‘বৈষম্যমুক্ত কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় জাতীয় ঐক্যের গুরুত্ব’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে খেলাফত মজলিসের আমির এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব উপরোক্ত বক্তব্যগুলো পেশ করেন। খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ সভাপতি অধ্যাপক মাওলানা আজিজুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নায়েবে আমীর ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবদুল্লাহ ফরিদ।
ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন ও মহানগরী উত্তর সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা আজিজুল হকের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত আলোচনা সভায় বক্তব্য পেশ করেন নায়েবে আমীর মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব এডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, খেলাফত মজলিস যুগ্ম-মহাসচিব মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, অধ্যাপক আবদুল জলিল, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ রায়হান আলী, গণ অধিকার পরিষদ ঢাকা মহানগরী সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন শাকিল, সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবি এডভোকেট শেখ রেজাউল করিম, ঢাকা মহানগরী উত্তর সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা সাইফুদ্দিন অহমদ খন্দকার, শ্রমিক মজলিস কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রভাষক আবদুল করিম, ইসলামী যুব মজলিস সহ-সাধারণ সম্পাদক মুফতি শাব্বির আহমদ, ইঞ্জিনিয়ার ওমর ফারুক।
হাআমা/