ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, ফ্যাসিবাদ মাফিয়াতন্ত্রমুক্ত দেশগঠনে রাসুলের সিরাত অনুসরণ অপরিহার্য। রাসুল সা.-এর সিরাত থেকে দূরে থাকার ফলে ফ্যাসিবাদ, বৈষম্য, বেইনসাফ ও কায়েমি স্বার্থবাদগোষ্ঠী আমাদের ওপর চেপে বসেছে। ইসলাম ছাড়া কোথাও শান্তি নেই। শান্তি ও মুক্তির একমাত্র ঠিকানা হলো ইসলাম। কিছু বুদ্ধিজীবী আজ দেশকে নতুনভাবে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। রাসুল সা. যে নীতি আদর্শ নিয়ে আসছে সেই নীতির অনুসরণ ছাড়া সাম্য মানবিক মর্যাদা ও সমাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। ৫ আগস্টের পূর্বে দেশে যা ঘটানো হয়েছে তা মনুষ্য সমাজে ঘটতে পারে না।
তিনি বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময় ইসলানী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাকর্মীরা জীবনবাজি রেখে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জানমাল রক্ষায় কাজ করেছে। আর এটাই ইসলামের শিক্ষা। তিনি বলেন, আমাদের দেশ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নিরাপদে আছেন এবং নিরাপত্তার সাথে আছেন। আওয়ামী লীগ সংখ্যালঘু ইস্যুকে ট্রাম্পকার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছে। এদেশের জনগণ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাকর্মীরা রুখে দিয়েছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে সতর্ক করে বলেন, দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতায় নাগালে রাখুন। সিন্ডিকেট ভেঙে দিন। কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী সার ও বীজ সরবরাহ বৃদ্ধি এবং সারের দাম কমিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, হিংসা, বিদ্ধেষ পরনিন্দা বন্ধ করে সবাইকে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার জন্যও তিনি সকল দল ও ব্যক্তির প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে বলেন, স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫৩ বছরে এতো বেশি পরিমাণ সমর্থন নিয়ে আর কোনো সরকার পায়নি। এতো সমর্থন পাওয়ার পর আপনাদের ভয় কিসের? আপনারা রাষ্ট্রের আমূল পরিবর্তন আনুন। প্রয়োজনীয় সংস্কার করুন বিনা ভয়ে। কোনো ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠী যেন আপনাদের দ্বারা বিশেষ কোনো সুবিধা না পায় সেদিকে সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে। আপনাদের মনে রাখতে হবে ফ্যাসিবাদের ও মাফিয়াদের বিরুদ্ধে আমাদের শহীদের রক্ত যেন অমলিন না হয়। শহীদের রক্তের সাথে গাদ্দারি করা হলে জনগণ তা রুখে দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম আরও বলেন, দেশে নতুন করে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করলে তা প্রতিরোধ করা হবে। ষড়যন্ত্রকারীদের বিষদাঁত উপড়ে ফেলা হবে। তিনি আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিয়ে কেউ ষড়যন্ত্র করলে তা আবারো ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করা হবে। ৫ আগস্টের পূর্বে যারা দেশে গণহত্যা করেছে, অনেক মায়ের বুক খালি করেছে, হাজার হাজার মানুষকে পঙ্গু করেছে তারা মনে করছে আমরা নাকে তৈল দিয়ে ঘুমাচ্ছি। কিন্তু আমরা ঘুমন্ত নই। আমাদের চোখ কান খোলা রয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীদের বিষদাঁত উপড়ে ফেলা হবে ইনশাআল্লাহ।
আজ শনিবার (৯ নভেম্বর) সকাল ৯টায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আয়োজিত উন্নতি-অগ্রগতি ও মানবিক বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় রাসুল সা.-এর সিরাত শীর্ষক জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথা বলেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সহকারী মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলমের সভাপতিত্বে এতে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, আল্লামা ওবায়দুল্লাহ হামযাহ, মাওলানা লিয়াকত আলী, মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, মাওলানা মুহাম্মাদ যাইনুল আবিদীন, মুফতি ওয়ালিউর রহমান।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আলহাজ আলতাফ হোসাইন, আলহাজ আনোয়ার হোসাইন, আলহাজ আবদুল আউয়াল, ডা. শহীদুল ইসলাম, মাওলানা আবদুর রাজ্জাক, নুরুজ্জামান সরকার, কেএম শরীয়াতুল্লাহ, হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মাকসুদুর রহমান, ফজলুল হক মৃধা, আলহাজ নজরুল ইসলাম খোকন, মাওলানা নজরুল ইসলাম, এইচ এম রফিকুল ইসলাম, এম এম শোয়াইব, নাযির আহমাদ শিবলী প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, মানুষ মানুষের দাসত্ব করতে পারে না। মানুষকে মানুষের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে আল্লাহর দাসত্বে ফিরিয়ে নেয়াই ছিলো নববী আদর্শ। আজকে সারা বিশ্বে মানবতা ও মানবিকতা হরণ করা হচ্ছে। জুলুম করা হচ্ছে। অথচ রাসুল সা. হাতের নাগালে পেয়েও দুশমনদের বিরুদ্ধে আদর্শ দিয়ে মন জয় করেছেন। ইসলামী শিক্ষার পাশাপাশি জাগতিক জ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়ে সমাজের সকল সেক্টরে কাজ করার যোগ্য লোক তৈরি করতে হবে।
প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী বলেন, নামাজ রোজার পাশাপাশি সকল প্রকার চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ ও জাতীয় লুটেরাদের বিরুদ্ধে মাঠে ময়দানে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুছ আহমাদ বলেন, সমাজের উন্নতি-অগ্রগতির জন্য রাসুল সা.-এর নির্দেশনা রয়েছে। সেই সাথে উন্নতি-অগ্রগতির ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করার স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে। আমরা যে দেশে বসবাস করছি সে দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আজ বৈষম্য চলছে। চলছে নির্যাতন নিপীড়ন। সমাজ রাষ্ট্রে রাসুল সা.-এর সিরাত বাস্তবায়ন করতে পারলেই সমাজ থেকে বৈষম্য দূর হবে, জুলুম নির্যাতন দূরীভূত হবে মানবতা মুক্তি পাবে।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম বলেন, আমরা বিগত ৪ বছর যাবত ধারাবাহিকভাবে প্রায় ৩ মাসব্যাপী নানা আয়োজন করে আসছি। ব্যক্তি, সমাজ ও একটি সুন্দর কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই আমাদের লক্ষ। তিনি সিরাত সম্মেলন সফল করার জন্য আমন্ত্রিত অতিথি, সুধী, শুভানুধ্যায়ীসহ যারা এ বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদনে বিভিন্নভাবেনসহযোগিতা করেছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ ও শুকরিয়া জানান।
সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বিশিষ্ট আলেমেদীন ও সিরাত গবেষক মুফতি শামছুদ্দেহা আশরাফী।
সম্মেলন বিশ্বজয়ী হাফেজ হুজাইফা ও তাঁর গর্বিত পিতামাতে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করেন পীর সাহেব চরমোনাই।
সিরাত সম্মেলনে হিফজুল হাদিস প্রতিযোগিতা, প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা, বক্তৃতা প্রতিযোগিতা, কিরাত ও মাসনূন দোয়া প্রতিযোগিতাসহ ৭ ক্যাটাগরিতে ১১০ জন প্রতিযোগীকে সম্মাননা ক্রেস্ট ও নগদ অর্থ প্রদান করেন সংগঠনের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাইসহ আমন্ত্রিত অতিথি ও নগর দক্ষিণ নেতৃবৃন্দ।
হাআমা/