বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ২৮ কার্তিক ১৪৩১ ।। ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


সংবিধানে ইসলামী শিক্ষা ও ইসলামী সংস্কৃতিকে সন্নিবেশ করতে হবে: পীর সাহেব দেওনা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব বিপ্লব ও গনঅভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পলায়ন ও পতনের পর গঠিত অন্তবর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্দেশ্যে একাধিক কমিশন গঠন করেছেন। গঠিত কমিশন সমূহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কমিশন-সংবিধান সংস্কার ও শিক্ষা- সংস্কৃতি সংস্কার কমিশন। বর্তমান বাংলাদেশ সংবিধানে এদেশের গণ মানুষের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটেনি। এমতাবস্থায় বিদ্যমান সংবিধানে ইসলামী শিক্ষা ও ইসলামী সংস্কৃতির কোন সু-স্পষ্ট ব্যাখ্যা ও রূপরেখা না থাকায় চলমান শিক্ষা কারিকুলামে আমাদের অধিকাংশ মুসলিম সন্তানেরা সম্পূর্ণ বিজাতীয়দের শিক্ষা সংস্কৃতির অন্ধ অনুসরণ করছে। বাংলাদেশ সংবিধানের ১৭ নং ও ২৩ নং অনুচ্ছেদে মুসলিম জনগোষ্ঠির শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিষয়টি অস্পষ্ট রাখা জাতিকে ইসলাম শূণ্য করার এটি দূরভিসন্ধি ও বৈষম্যমূলক। 

আজ শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বিকেলে গাজীপুর কাপাসিয়া দেওনা দাওয়াতুল হক মাদ্রাসায় কওমি মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদের মতবিনিময় সভায় কওমি মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদ বাংলাদেশের সভাপতি ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির অধ্যক্ষ মুহাম্মদ মিজানুর রহমান চৌধুরী পীর সাহেব দেওনা এসব কথা বলেন ‌।

আরো বক্তব্য রাখেন, মাওলানা আশেকে মোস্তফা, মাওলানা আতাউল হক জালালাবাদী, মাওলানা মুস্তাকীম বিল্লাহ হামিদী, মাওলানা দ্বীন মুহাম্মদ আশরাফ, মুফতি লুৎফর রহমান ফরায়েজী, মাওলানা জাকারিয়া, এডভোকেট মতিউর রহমান, মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী ও মাওলানা নজরুল ইসলাম প্রমুখ।

তিনি অন্তবর্তীকালীন সরকার কর্তৃক গঠিত সংবিধান সংস্কার, শিক্ষা- সংস্কৃতি সংস্কার কমিশনের নিকট ইসলামী শিক্ষা ও ইসলামী সংস্কৃতিকে সংবিধানে সন্নিবেশ করার আহ্বান করেন।

অন্তবর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, সংবিধান সংস্কার কমিশন, শিক্ষা কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট সকল শ্রেণী পেশার মুসলমানদের পক্ষ থেকে কওমি মাদরাসা শিক্ষক পরিষদ এর নিম্নোক্ত দাবী সমূহ বাস্তবায়ন করার জোর সুপারিশ করছি-

(১)    যেহেতু মুসলিম জাতির অধিকাংশ সন্তান স্কুলগামী তারা আমাদের সন্তান তাদের দ্বীন ঈমানের হেফাজতের দায়িত্ব আমাদের। যে পরিমাণে তারা ধর্মহীন শিক্ষার দিকে ধাবিত হচ্ছে সেই পরিমাণ তাদেরকে সুরক্ষা প্রদান করা আমাদেরই দায়িত্ব। তারাই জাতির ভবিষ্যৎ, তাই তাদেরকে ধর্মীয় মূল্যবোধের শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। সেই লক্ষ্যে-বাংলাদেশের সংবিধানের শিক্ষা বিষয়ক ১৭ নং অনুচ্ছেদ সংশোধন করে সুস্পষ্টভাবে মুসলমান সন্তানদের জন্য কুরআন ও ধর্মীয় শিক্ষার অধিকার সুুনিশ্চিত করতে হবে এবং সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার প্রাথমিক স্তর থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত মুসলিম সন্তানদের বিশুদ্ধ কুরআন তিলাওয়াত ও ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। একই সাথে  মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরেও ইসলামী শিক্ষাকে প্রয়োজন মাফিক বাধ্যতামূলক রাখতে হবে। পরবতর্ী বিশেষায়িত শিক্ষার সাথে প্রয়োজন মাফিক ইসলামী শিক্ষা সন্নেবেশিত রাখলে ধর্মীয় মূল্যবোধে উজ্জীবিত শিক্ষিতরা দেশ ও জাতীর যে কোন পেশায় তারা সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনে সমর্থ হবে। ধর্মীয় মূল্যবোধ সম্পন্ন ব্যক্তির দ্বারা দেশ ও জাতি উপকৃত হবে। 

(২)    জাতীয় সংস্কৃতি বিষয়ক সংবিধানের ২৩ নং অনুচ্ছেদ সংশোধনপূর্বক ইসলামি সংস্কৃতি ইতিহাস ও ঐতিহ্য      অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। 
(৩)     রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রচলিত সকল প্রকার বিজাতীয় অপসংস্কৃতি বাদ দিয়ে সুনির্দিষ্ট ইসলামী সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্যকে সন্নেবেশিত করতে হবে। সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। 
(৪)     ইসলাম ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক সকল আইন, বিধি-বিধান, নীতিমালা বাতিল করতে হবে।
(৫)    সংবিধান সংস্কার কমিশনে দেশের নির্ভরযোগ্য আলেমগনকে অন্তভুর্ক্ত করতে হবে।

(৬)     শিক্ষা কমিশনে দেশের খ্যাতিমান নির্ভরযোগ্য আলেমগনকে অন্তভুর্ক্ত করতে হবে ।
(৭)     শিক্ষা কারিকুলাম কমিশনে অভিজ্ঞ নির্ভরযোগ্য আলেমদের সদস্য রাখতে হবে।
(৮)     অবাধ আকাশ মিডিয়ার মাধ্যমে অপসংস্কৃতির প্রচার বন্ধ করতে হবে। 
(৯)     সরকারী চাকুরী বিধি করে ধর্মীয় জ্ঞান ও সৎ যোগ্যদের চাকুরীতে নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। 
(১০)     শিক্ষা সংস্কার কমিশন থেকে সকল বিতর্কিত ইসলাম বিদ্বেষীদের বাদ দিতে হবে।
(১১)     মাদকের করাল গ্রাস থেকে আমাদের কিশোর-যুবক শ্রেণীকে রক্ষার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে এবং ডিভাইস ও মোবাইল ফোনের অপব্যবহার বন্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

কেএল/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ