সোমবার, ২০ মে ২০২৪ ।। ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ।। ১২ জিলকদ ১৪৪৫


ফিলিস্তিনে মুমিনরাই বিজয়ী হবে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ফাইল ছবি

|| নাজমুল হুদা মজনু ||

ফিলিস্তিনসহ বিভিন্ন স্থানে কুফ্ফারের আক্রমণে মুসলিমরা মজলুম, আহত-নিহত, পর্যুদস্ত ও যারপরনাই আতঙ্কিত। কোটি কোটি মুসলমানের হৃদয় রক্তক্ষরণে মর্মাহত, বেদনায় ভারাক্রান্ত; কিন্তু এ ব্যাপারে যারা দায়িত্বশীল তাদের পদক্ষেপ বড়‌ই প্রশ্নবিদ্ধ।

আল্লাহ মালুম তাদের হুঁশ ফিরবে কবে। নির্যাতিত নিপীড়িত মুসলিম উম্মাহর এই দুর্দিনে প্রতিরোধের পদক্ষেপ না নিয়ে জানি দুশমন ইহুদি- নাসারাদের সাথে নির্লজ্জ দোস্তিতে মশগুল তারা। কুরআনুল কারিমে উল্লেখিত আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের আদেশ-নিষেধ পালনে তাদের ব্যর্থতা সীমাহীন ও সকরুণ।

আল্লাহ জাল্লা শানুহু বলেন, 'হে ঈমানদার লোকেরা, তোমরা (কখনো) ইহুদি-খিষ্টানদের নিজেদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। (কেননা) এরা নিজেরা (সবসময়ই) একে অপরের বন্ধু; তোমাদের মধ্যে কেউ যদি (কখনো) এদের কাউকে বন্ধু বানিয়ে নেয় তাহলে সে তাদেরই দলভুক্ত হয়ে যাবে; আর আল্লাহ তায়ালা কখনো জলেম সম্প্রদায়কে হেদায়াত দান করেন না।  (আল-মায়েদা : ৫১)

দুনিয়া অন্বেষণকারী প্রভাবশালী ব্যক্তিরা পদপদবি আর মেকি মর্যাদার লোভে অসহায় মানুষের রক্ত মাড়িয়ে ছুটে চলেছে মিথ্যা প্রাসাদের প্রলোভনে। ধিক তাদের প্রতি শত-সহস্রবার।

মুসলমানের সম্পদ-সম্মানের আমানত খিয়ানতকারীরা হাদিসের আহ্বান ভুলে গেছে। গনিমতের মাল লোপাটের অভিযোগের ভয়াবহ শাস্তির ব্যাপারে নিম্নলিখিত একটি হাদিসে মূলত আমানতের খিয়ানতকে বুঝানো হয়েছে।

আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত —তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: আমাদের মাঝে দাঁড়ান এবং গনিমতের মাল আত্মসাৎ প্রসঙ্গে আলোচনা করেন। আর তিনি তা মারাত্মক অপরাধ ও তার ভয়াবহ পরিণতির কথা উল্লেখ করেন।

তিনি বললেন, আমি তোমাদের কাউকে যেন এ অবস্থায় কেয়ামতের দিন না পাই যে, তাঁর কাঁধে বকরি বয়ে বেড়াচ্ছে আর তা ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে চিৎকার দিচ্ছে। অথবা তাঁর কাঁধে রয়েছে ঘোড়া আর তা হি হি করে আওয়াজ দিচ্ছে। ওই ব্যক্তি আমাকে বলবে, হে আল্লাহ‌র রাসূল! আমাকে সাহায্য করুন।

আমি বলব, আমি তোমার জন্য কিছু করতে পারব না। আমি তো (দুনিয়ায়) তোমার কাছে পৌঁছে দিয়েছি। অথবা কেউ তার কাঁধে বয়ে বেড়াবে উট যা চিৎকার করছে, সে আমাকে বলবে, হে আল্লাহর রাসূল! একটু সাহায্য করুন। আমি বলব, আমি তোমার জন্য কিছু করতে পারব না। আমি তো তোমার কাছে পৌঁছে দিয়েছি।

অথবা কেউ তার কাঁধে বয়ে বেড়াবে ধন-দৌলত এবং আমাকে বলবে, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে সাহায্য করুন। আমি বলব, আমি তোমার জন্য কিছু করতে পারব না। আমি তো তোমার কাছে পৌঁছে দিয়েছি। অথবা কেউ তার কাঁধে বয়ে বেড়াবে কাপড়ের টুকরাসমূহ যা দুলতে থাকবে। সে আমাকে বলবে, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে সাহায্য করুন। আমি বলব, আমি তোমার জন্য কিছু করতে পারব না; আমি তো তোমার কাছে পৌঁছে দিয়েছি।(বুখারি-৩০৭৩)

আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে সিক্ত হয়ে মানুষ হাজারো নিয়ামত ভোগ করে; অথচ শুকরিয়া আদায়ে কৃপণতার এক শেষ।

অকৃতজ্ঞ বান্দাদের প্রতি রাব্বুল আলামিন বলেন, 'তিনিই সেই মহান সত্তা যিনি ভূমিকে তােমাদের অধীন করে বানিয়েছেন, তােমরা (যখন যেভাবে চাও) এর অলিগলির মধ্য দিয়ে চলাচল করাে এবং এর থেকে (উদ্গত) রিজিক তােমরা উপভোগ করাে; (মনে রেখাে,) একদিন (তোমাদের সবাইকে) তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে । (আল-মুলক : ১৫)

কুফ্ফারের সাথে বন্ধুত্ব কোনোদিনই সমীচীন নয়; বরঞ্চ তাদের বিরুদ্ধে যথাসাধ্য প্রতিরোধ গড়ে তোলা মুমিনের গুরুদায়িত্ব।

রাব্বুল আলামিন এ ব্যাপারে কুরআনুল কারিমে বলেছেন, 'যারা আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং (আল্লাহর) জমিনে বিপর্যয় সৃষ্টির অপচেষ্টা করে, তাদের জন্য নির্দিষ্ট শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদের হত্যা করা হবে কিংবা তাদের শূলবিদ্ধ করা হবে, অথবা বিপরীত দিক থেকে তাদের হাত-পা কেটে ফেলা হবে, কিংবা দেশ থেকে তাদের নির্বাসিত করা হবে; এই অপমানজনক শাস্তি তাদের দুনিয়ার জীবনের জন্য, (তা ছাড়া) পরকালে তাদের জন্য ভয়াবহ আজাব তো রয়েছেই।' (আল-মায়েদা : ৩৩)

সর্বযুগে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সমকালীন জাতির প্রতি নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন, যেন তারা হেদায়েত লাভ করতে পারে। বিশেষ করে আমাদের নবী মুহাম্মাদ সা:-এর আগে যেসব নবী-রাসূল আল্লাহ তায়ালা পাঠিয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন মূসা আ:। স্মর্তব্য, আগের নবীদের ওপর ঈমান আনাও  মুমিনের জন্য আবশ্যক।

এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজিদে বলেন, 'নিঃসন্দেহে আমি (মূসার কাছে) তাওরাত নাজিল করেছি, তাতে (তাদের জন্য) পথনির্দেশ ও আলোকবর্তিকা বর্তমান ছিল, আমার নবীরা- যারা আমার বিধানেরই অনুবর্তন করত, ইহুদি জাতিকে এ (হেদায়াত) মোতাবেকই আইন-কানুন প্রদান করত, (নবীদের পর তাদের) জ্ঞানসাধক ও ধর্মীয় পণ্ডিতরাও (এ অনুযায়ী বিচার-ফয়সালা করত),

কেননা, (নবীর পর) আল্লাহর কিতাব সংরক্ষণ করার দায়িত্ব এদেরই দেয়া হয়েছিল, তারা (নিজেরাও) ছিল এর প্রত্যক্ষ সাক্ষী, সুতরাং তোমরা মানুষকে ভয় না করে একান্তভাবে আমাকেই ভয় করো, আর আমার আয়াতসমূহ সামান্য মূল্যে বিক্রি করে দিয়ো না; যারা আল্লাহর নাজিল করা আইন অনুযায়ী বিচার-ফয়সালা করে না, তারাই (হচ্ছে) কাফের।(আল-মায়েদা : ৪৪)

মহামহিম আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরো বলেন, 'আর যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা, তাঁর রাসূল ও ঈমানদারদের নিজের বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে (তারা যেন জেনে রাখে), কেবল আল্লাহ তায়ালার দলই বিজয়ী হবে। (আল-মায়েদা :৫৬)

লেখক : গবেষক ও সাংবাদিক  

এনএ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ