|| নাজমুল হুদা মজনু ||
আজকাল কিছু লোক মহান আল্লাহর নাম নিয়ে ইয়ার্কি- ফাজলামি করে। আর যারা আল্লাহর পথে চলতে চায় তাদের সম্পর্কে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপে মত্ত হয়। টুপি-দাড়ি-জুব্বা পরতে দেখে টিটকারি করে।
শুধু তাই নয়, মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহর অস্তিত্ব পর্যন্ত তারা অস্বীকার করে। তবে আল্লাহর পথের সৈনিকদের এতে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই।
মুমিনদের সান্ত্বনা দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, সালাত ও সবরের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। (বাকারাহ-১৫৩)
ধৈর্য এবং সালাত প্রত্যেক আল্লাহভীরু লোকের বড় হাতিয়ার। সালাতের মাধ্যমে একজন মু’মিনের সম্পর্ক মহান আল্লাহর সাথে বলিষ্ঠ হয়। এরই দ্বারা সে আল্লাহর কাছ থেকে শক্তি ও সাহায্য লাভ করে। ধৈর্যের মাধ্যমে কাজে সুদৃঢ় এবং দ্বীনে প্রতিষ্ঠিত থাকার প্রেরণা সৃষ্টি হয়।
হাদিসে এসেছে, 'নাবী কারিম সা:-এর সামনে যখন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এসে উপস্থিত হতো, তখন তিনি সত্বর সালাতের শরণাপন্ন হতেন।' (আহমাদ)
এক বর্ণনায় এসেছে— সালাতের যত্ন নেয়া সাধারণ মানুষের জন্য ভারী কাজ, কিন্তু বিনয়ী-নম্র মানুষের জন্য তা সহজ এবং সালাত তাদের হৃদয়ের প্রশান্তির উপকরণ। এই লোক কারা?
এরা সেই লোক যারা কিয়ামতের ওপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখে। অর্থাৎ, কিয়ামতের প্রতি বিশ্বাস সৎকর্মকে সহজতর করে দেয় এবং আখেরাত থেকে উদাসীনতা মানুষকে আমলহীন; বরং বদ আমলের অভ্যাসী বানিয়ে দেয়।
'সবর' শব্দের অর্থ হচ্ছে সংযম অবলম্বন ও নফসের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ লাভ। কুরআন ও হাদিসের পরিভাষায় 'সবর'-এর তিনটি শাখা রয়েছে।
এক. নফসকে হারাম এবং নাজায়েজ বিষয়াদি থেকে বিরত রাখা।
দুই. ইবাদাত ও আনুগত্যে বাধ্য করা এবং তিন. যেকোনো বিপদ ও সঙ্কটে ধৈর্যধারণ করা। অর্থাৎ যেসব বিপদ-আপদ এসে উপস্থিত হয়, সেগুলোকে আল্লাহর বিধান বলে মেনে নেয়া এবং এর বিনিময়ে আল্লাহর তরফ থেকে প্রতিদান প্রাপ্তির আশা রাখা। (ইবনে কাসির)
ইসলামের দুশমনদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন, যারা আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করেছে তাদের আমি অচিরেই জাহান্নামের আগুনে পুড়িয়ে দেবো, অতঃপর (পুড়ে যখন) তাদের দেহের চামড়া গলে যাবে তখন আমি তার বদলে নতুন চামড়া বানিয়ে দেবো, যাতে করে তারা আজাব ভোগ করতে পারে, অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা মহাপরাক্রমশালী, বিজ্ঞ কুশলী। (আন্-নিসা : ৫৬)
দয়াময় আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় বান্দাদের প্রতি বেখবর নন। তাইতো কুরআনুল কারিমে আল্লাহ জাল্লা শানহু বলেন, যারা (আমার) আয়াতসমূহ বিশ্বাস করেছে এবং ভালো কাজ করেছে, তাদের অচিরেই আমি এমন এক জান্নাতে প্রবেশ করাব, যার পাদদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হবে, সেখানে তারা (থাকবে) চিরকাল, তাদের জন্য থাকবে পূতপবিত্র (সঙ্গী) ও সঙ্গিনীরা, (সর্বোপরি) আমি তাদের এক চির স্নিগ্ধ ছায়ায় প্রবেশ করিয়ে দেবো। (আন্-নিসা : ৫৭)
সমাজে কিছু লোক আছে যারা নিজেদের পণ্ডিত ঠাওরায়। কিন্তু আদতে তাদের মগজ ধোলাই করা হয়েছে বস্তাপচা পরিত্যক্ত কিছু অচল মতবাদ দিয়ে। তাই মনে রাখতে হবে, এসব ভ্রান্ত ধারণার অনুসারীরা আসলেই লাজ-লজ্জাহীন।
এদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি অবশ্যই বহু মানুষ ও জিনকে জাহান্নামের জন্য নির্ধারিত করেছি; কারণ তাদের অন্তর আছে, কিন্তু তারা সত্যকে উপলব্ধি করে না, তাদের চোখ থাকলেও তা দিয়ে তারা সত্যকে দেখে না, তাদের কান আছে; কিন্তু তা দিয়ে তারা সত্য বাণী শোনে না। ওরা পশুর মতো; বরং তার চেয়েও বেশি পথভ্রষ্ট; নিশ্চয়ই তারা উদাসীন।’ (সূরা আরাফ-১৮৯)
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: থেকে বর্ণিত— তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, তোমরা আল্লাহ তায়ালাকে যথাযথভাবে লজ্জা করো। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল সা: আমরা তো নিশ্চয়ই লজ্জা করি, সব প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য। তিনি বললেন : তা নয়, বরং আল্লাহ তায়ালাকে যথাযথভাবে লজ্জা করার অর্থ এই যে, তুমি তোমার মাথা এবং এর মধ্যে যা কিছু রয়েছে তা সংরক্ষণ করবে এবং উদর ও এর মধ্যে যা কিছু রয়েছে তা হিফাজত করবে, মৃত্যুকে এবং এরপর পচে-গলে যাওয়ার কথা স্মরণ করবে।
আর যে লোক পরকালের আশা করে, সে যেন দুনিয়াবি জাঁকজমক পরিহার করে। যে লোক এসব কাজ করতে পারে সে-ই আল্লাহকে যথাযথভাবে লজ্জা করে। (জামে তিরমিজি-২৪৫৮)
আল্লাহর দ্বীন আল্লাহর জমিনে কায়েম করতে হলে আল্লাহর ওপরই ভরসা করতে হবে। কেননা আল্লাহর সৈনিকরা সতত সাহসী ও নির্ভীক।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন, তোমাদের দুশমনদের আল্লাহ তায়ালা ভালো করেই জানেন; অভিভাবক হিসেবে (যেমন) আল্লাহ তায়ালা যথেষ্ট, তেমনি সাহায্যকারী হিসেবেও আল্লাহ তায়ালাই যথেষ্ট । (আন-নিসা :৪৫)
আল্লাহ তায়ালাকে রাজি-খুশি করতে হলে একমাত্র তাঁর ওপরই ভরসা করতে হবে। আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে সিক্ত করতে হবে মুমিনের হৃদয়। সেই সাথে প্রয়োজনে ঝরাতে হবে বুকের তাজা খুন। নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা চাইলে বান্দার সব অপরাধ ক্ষমা করে দেন; কিন্তু শিরক ব্যতীত।
কুরআন মাজিদে রব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, নিসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা কখনো (সে গুনাহ) মাফ করবেন না (যেখানে) তাঁর সাথে কাউকে শরিক করা হয়, এ ছাড়া অন্য সব গুনাহ তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে অংশীদার বানাল সে সত্যিই (আল্লাহর ওপর) মিথ্যা আরোপ করল এবং একটা মহাপাপে (নিজেকে) জড়ালো! (সূরা নিসা-৪৮)
শিরকের গুনাহ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে অবশ্য করণীয় হলো আল্লাহর তায়ালার কাছে বিনীতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করা। খাঁটি তাওবাহ করলে আল্লাহ তায়ালা বান্দার সব গুনাহ ক্ষমা করে দেন। এ চেতনা অন্তরে অনুভূত হওয়ার সাথে সাথে তাওবাহ করে আল্লাহর কাছে ফিরে আসতে হবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে আমার বান্দারা, তােমরা যারা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছো, তারা আল্লাহ তায়ালার রহমত থেকে (কখনাে) নিরাশ হয়ো না; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা (মানুষের) সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দেবেন, তিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (আজ-জুমার : ৫৩)
লেখক : সাংবাদিক
এনএ/