রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দ্রুত নির্বাচনের বিকল্প নেই: তারেক রহমান জমিয়তের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হলেন শায়খ মাওলানা আবদুর রহীম ইসলামাবাদী কুমিল্লায় আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলন আগামীকাল মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর ইন্তেকালে চরমোনাই পীরের শোক প্রকাশ জমিয়ত সভাপতি মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী রহ.-এর বর্ণাঢ্য জীবন কওমি সনদকে কার্যকরী করতে ছাত্রদল ভূমিকা রাখবে: নাছির বড় ব্যবধানে জিতে প্রথমবারের মতো পার্লামেন্টে যাচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা আইফোনে ‘টাইপ টু সিরি’ ফিচার যেভাবে ব্যবহার করবেন  স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক: ধর্ম উপদেষ্টা আল্লাহকে পেতে হলে রাসূলের অনুসরণ অপরিহার্য: কবি রুহুল আমিন খান

শবেবরাতের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও করণীয়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ছবি: সংগৃহীত

অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বিশেষ তাৎপর্যময় শবেবরাতে আল্লাহ তায়ালা তার রহমতের দ্বার উন্মুক্ত করে দেন। গোনাহগার বান্দাদের ক্ষমা করে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। শবেবরাত মানে মুক্তির রজনী। হাদিসে রাতটি লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান নামে এসেছে।

এ রাত প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘অর্ধ শাবানের রাতে আল্লাহ সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। অতঃপর শিরককারী ও বিদ্বেষপোষণকারী ছাড়া তার সমগ্র সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন।’ -ইবনে মাজাহ : ১৩৯০

বর্ণিত হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পারি, এ রাতে ক্ষমা লাভের জন্য দু’টি শর্ত রয়েছে। ১. শিরক মুক্ত থাকা ও ২. বিদ্বেষ থেকে মুক্ত থাকা। এই দু’টি বিষয় থেকে যে মুক্ত থাকবে, তার এ রাতে ক্ষমা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আর যদি এই দু’টি বিষয় অব্যাহত থাকে, তাহলে ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য নয়। দুঃখের বিষয় হলো, আমরা শবেবরাতের জন্য অনেক কিছুই করি, তবে এই দু’টি শর্ত পালনের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করি না।

মহিমান্বিত এ রাতের রয়েছে বিশেষ ফজিলত। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসের প্রথম থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত নফল রোজা পালন করতেন। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন শাবানের মধ্য দিবস আসে, তখন তোমরা রাতে নফল ইবাদত কর ও দিনে রোজা পালন কর। -ইবনে মাজাহ

এ ছাড়া প্রতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ আইয়ামে বিজের নফল রোজা তো রয়েছেই। এ রাতের ফজিলত সম্পর্কে আরও বেশ কয়েকটি হাদিস রয়েছে। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রা. বলেন, একবার হজরত রাসুলুল্লাহ সা. নামাজে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সেজদা করলেন যে, আমার ধারণা হলো তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন।

আমি তখন উঠে তার পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম, তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল; তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করে আমাকে লক্ষ করে বললেন, হে আয়েশা! তোমার কি এ আশঙ্কা হয়েছে? আমি উত্তরে বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ সা. আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না? নবীজি সা.)বললেন, তুমি কি জানো এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলই ভালো জানেন।

তখন নবীজি সা. বললেন, এটা হলো- অর্ধ শাবানের রাত; এ রাতে আল্লাহ তার বান্দার প্রতি মনোযোগ দেন; ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করে দেন, অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থায় ছেড়ে দেন। -শোয়াবুল ইমান : ৩/ ৩৮২

হজরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, নবীজি সা. এ রাতে মদিনার কবরস্থান জান্নাতুল বাকিতে যেয়ে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার করতেন। তিনি আরও বলেন, নবী কারিম সা. তাকে বলেছেন, এ রাতে বনি কালবের ভেড়া-বকরির পশমের (সংখ্যার পরিমাণের) চেয়েও বেশিসংখ্যক গোনাহগারকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। -তিরমিজি : ৭৩৯

এ রাতের নির্দিষ্ট কোনো আমল নেই। তবে এই রাতে বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে কোনো সীমাবদ্ধতা নেই, নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। সামর্থ্য অনুযায়ী নফল নামাজ আদায় করা।

হজরত আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ১৪ শাবান দিবাগত রাত যখন আসে, তোমরা রাতটি ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাও। আর দিনের বেলা রোজা রাখো। কেননা এই দিনে আল্লাহ সূর্যাস্তের পর প্রথম আসমানে নেমে আসেন এবং আহ্বান করেন, কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছো কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। কোনো রিজিক অনুসন্ধানকারী আছো কি? আমি তাকে রিজিক প্রদান করব। কোনো বিপদগ্রস্ত আছো কি? আমি তাকে উদ্ধার করব। এভাবে সুবহে সাদিক উদয় হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে। -ইবনে মাজাহ : ১/৪৪৪, ১৩৮৮

এ রাতে কবর জিয়ারত, দোয়া ও নামাজ সবই একাকি আদায় করা সুন্নত। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা সাহাবিগণ কেউ এ রাতে মসজিদে সমবেত হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ইবাদত করেননি। নফল নামাজ, তাহাজ্জুদ নামাজ নিজের বাড়িতে পড়া সুন্নত। এতে করে স্ত্রী-সন্তানরা উৎসাহিত হয়। তবে অনেকের বাড়িতে নিরিবিলি ইবাদতের পরিবেশ থাকে না। তারা নিজের ইচ্ছায় মসজিদে যেয়ে ইবাদতে সময় কাটালে তাদের সুযোগ করে দেওয়া।

এ রাতের বর্জনীয় বিষয় : শবেবরাত হলো- ইবাদত-বন্দেগি, দোয়া-দরুদ ও তওবা-ইস্তেগফারের রাত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মানুষ রাতটিকে খাওয়া-দাওয়া ও উৎসবের রাত বানিয়ে ফেলেছে। এ রাতে হালুয়া-রুটি কিংবা ভালো খাবার খাওয়া রীতি-রেওয়াজ ছাড়া আর কিছুই নয়। এ রাতে বাসা-বাড়ি ও কবরস্থানে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা অপচয়। এর অনুমোদন ইসলামে নেই। এ রাতের বিশেষ শিক্ষা হলো, শিরক ও বিদ্বেষ থেকে বেঁচে থাকা।

এনএ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ